ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

খাওয়া নয়, ইনহেলারের টাকা চাই

প্রকাশিত: ০৭:০৪ এএম, ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

বাবা রে শ্বাসের বেরাম ডা (শ্বাসকষ্ট) খুব বাড়ছে। গ্যাস কিনতে হইবো। কয়ডা টেহা দেন। একটি ইনহেলার (শ্বাসকষ্ট ও হাঁপানি রোগে ব্যবহার করার স্প্রে) হাতে নিয়ে এভাবেই মানুষের কাছে হাত পাতছিলেন হামেদ শেখ। বয়স সত্তর পেরিয়েছে। পরনে অপরিষ্কার ও ছেড়া হাফ হাতা গেঞ্জি এবং লুঙ্গি।

রোগাকান্ত অভাবি চেহারাটা দেখে যে কারো মায়া হওয়ার কথা। কিন্তু বেশির ভাগ মানুষের কাছ থেকেই খালি হাতে ফিরছিলো প্রবীণের হাত দুটি। তবে অনেক কাকুতি-মিনতির পর দু’চার টাকা জুটছিলো কারো কারো কাছে।
মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলার জাফরগঞ্জ বাজারে এক ফাঁকে কথা হয় হামেদ শেখের সঙ্গে। জানা গেল, বউ, ছেলে মেয়ে সবই আছে তার। দুই মেয়ের বিয়ে হয়ে গেছে। একমাত্র ছেলে নিজের বউ-ছেলে মেয়ে নিয়ে অন্যত্র চলে গেছে।

বাবা-মায়ের খোঁজ রাখেন না। স্ত্রী সইতন নেছা অন্যের বাড়িতে কাজ করেন। আর অসুস্থ শরীরে মানুষের কাছে হাত পেতে যা পান তাই দিয়ে ওষুধ কিনেন হামেদ। তিন বেলা পেট পুরে ভাত জোটে না তাদের। মাঝে মধ্যেই না খেয়ে থাকতে হয়। কষ্টের কথাগুলো বলতেই দু’চোখ ছল ছল করছিলো হামেদের।

গোপালপুর গ্রামে ১০ শতাংশ জমি নিয়ে একটি বাড়ি ছিল হামেদ শেখের। কিন্তু রাক্ষসি যমুনা তাও কেড়ে নিয়েছে বছর পনের আগে। গোপালপুর গ্রামেরই এখন আর কোনো অস্তিত্ব নেই। পুরো গ্রামটি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। ভিটে মাটি হারিয়ে হামেদ এখন আশ্রয় নিয়েছেন পার্শ্ববর্তী সাতুরিয়া গ্রামে। সরকারি রাস্তার পাশে ছোট ঘরে এখন বসবাস হামেদ আর সইতন বেগমের।

এক সময় হামেদ শেখ আইসক্রিম বিক্রি করতো। স্বচ্ছলতা না থাকলেও, না খেয়ে কাটাতে হতো না। কিন্তু হাঁপানিসহ নানা রোগ-শোকে জর্জরিত হয়ে হামেদ দুর্বল হয়ে পড়েন। তাকে এখন কেউ কাজেও নিতে চান না। বর্তমানে কাজতো দূরের কথা, হাঁটা চলাই কষ্টকর। তারপরও বেঁচে থাকার তাগিদে বাইরে বের হতে হয় তাকে। মাসে ৪/৫টি ইনহেলার লাগে হামেদের। এজন্য দরকার প্রায় হাজার টাকা। এই টাকা জোগাতে মানুষের কাছে হাত পাততে হয় তাকে।

হামেদ শেখ একজন প্রবীণ। ভিটেমাটি হীন দরিদ্র মানুষ। নিয়ম অনুযায়ী তার সরকারি সাহায্য সহযোগিতা পাওয়ার কথা। পাওয়ার কথা সরকারি বয়স্ক ভাতাও। কিন্তু তার কোনোটিই জোটেনি হামেদ শেখের কপালে। স্থানীয় কয়েকজন জানালেন, স্বচ্ছল পরিবারের অনেক প্রবীণ বয়স্কভাতা পাচ্ছেন, অথচ হামেদের মতো অসহায় মানুষগুলো এ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন ।

তেওতা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আনেয়ার হোসেন বাদল জাগো নিউজকে জানান, নদী ভাঙন কবলিত এলাকা হওয়ায় তার ইউনিয়নে দরিদ্র মানুষের সংখ্যা বেশি। বয়স্ক ভাতা পাওয়ার যোগ্য ব্যক্তিদের সবাইকে ভাতা দিতে পারেন না বরাদ্দের অভাবে। স্থানীয় মেম্বারদের সহযোগিতায় বয়স্ক ভাতার তালিকা করা হয়। তবে হামেদ শেখের বিষয়টি তার জানা ছিল না। আগামীতে তাকে সহযোগিতা করার আশ্বাস দেন চেয়ারম্যান।

এমজেড/আরএস