ঘন কুয়াশায় দক্ষিণাঞ্চলের নৌ যোগাযোগ ব্যবস্থা বিপর্যস্ত
ঘন কুয়শায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে দক্ষিণাঞ্চলের নৌ যোগাযোগ ব্যবস্থা। মধ্যরাতে কুয়াশায় সর্বত্র ঢেকে যাওয়ায় নৌযান চলাচল ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ছে। দুর্ঘটনা এড়াতে বেশির ভাগ নৌযান মধ্যরাতে মাঝ নদীতে নোঙর করে রাখতে হচ্ছে। এর ফলে যাত্রীবাহী নৌযানগুলো গন্তব্যে পৌঁছাচ্ছে নির্ধারিত সময়ের অনেক পরে। আবার কুয়াশার মধ্যে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে গিয়ে দুর্ঘটনায় স্বীকার হচ্ছে নৌযানগুলো।
সর্বশেষ সোমবার মধ্যরাতে মেঘনায় কুয়াশার মধ্যে বিআইডব্লিউটিসির যাত্রীবাহী স্টিমার এমভি মধুমতি ও তেলাবাহী কার্গোর এবং দুইটি লঞ্চের মধ্যে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে কেউ হতাহত না হলেও ক্ষতিগ্রস্ত হয় এমভি মধুমতির সামনের অংশ।
বিআইডব্লিউটিসির বরিশাল কার্যালয়ের উপ-মহাব্যবস্থাপক সৈয়দ আবুল কালাম আজাদ বলেন, এমভি মধুমতি সোমবার সন্ধ্যায় ঢাকা থেকে যাত্রীসহ বরিশাল হয়ে মোড়লগঞ্জের উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসে। চাঁদপুর টার্মিনাল অতিক্রম করার পর রাত আনুমানিক সাড়ে ১২টার দিকে মেঘনার মাঝের চর নামক স্থান সংলগ্ন নদীতে পৌঁছলে কুয়াশার কবলে পড়ে জাহাজটি। বেশ কয়েকটি জাহাজ তখন সেখানে নোঙর করা ছিল। এমভি মধুমতি জাহাজে কুয়াশা ভেদকারী জিপিএস ও রাডার থাকায় জাহাজটি ধীরে ধীরে চলছিল।
এসময় বিপরীত দিক আসা এমটি আমেনা নামক একটি তেলবাহী ট্যাংকার অপর একটি লঞ্চ পাশ কাটাতে গিয়ে এমভি মধুমতি জাহাজের সামনের অংশে আঘাত করে। এতে জাহাজের নিচের অংশে ব্যপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। জাহাজ সচল থাকায় সেটি যাত্রী নিয়ে মঙ্গলবার সকালে বরিশাল টার্মিনালে পৌঁছে এবং সাময়িক মেরামত করে আবার যাত্রী নিয়ে মোড়লগঞ্জের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়।
সৈয়দ আবুল কালাম জানান, এমটি আমেনা ট্যাংকারটি `হাইস্পীড` নামে একটি প্রতিষ্ঠানের জাহাজ। এ ব্যাপারে তাদের কাছে জাহাজের ক্ষতিপূরণ চাওয়া হবে। এছাড়া চাঁদপুর থানায় সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে।
একই রাত ১২টার দিকে চাঁদপুর সংলগ্ন মেঘনায় ঢাকা থেকে বরিশালগামী সুরভী-৯ লঞ্চ এবং ঢাকা থেকে ভোলাগামী তাকওয়া লঞ্চের সংঘর্ষ হলে আতঙ্ক কয়েকজন যাত্রী আহত হন।
সুরভী-৯ লঞ্চের সুপার ভাইজার আব্দুর রব জানান, কুয়াশার কারণে দুটি লঞ্চের সংঘর্ষ হয়।
এছাড়া ঢাকা থেকে বরিশালগামী যাত্রীবাহী লঞ্চ সুরভী-৮ ও সুন্দরবন-৭ রোববার গভীর রাতে কুয়াশায় দিক হারিয়ে ডুবোচরে আটকে যায়। সোমবার সকাল ১০টার দিকে অন্য জাহাজের সাহায্যে ওই লঞ্চ দুইটি উদ্ধার করা হয়।
অন্যদিকে, রোববার রাত ২টার দিকে মেঘনায় মিয়ারচর নামক স্থানে ডুবোচরে আটকা পড়ে সুন্দরবন-৭। সুরভী-৮ লঞ্চ ভোর ৪টায় ডুবোচরে আটকে যায় কীর্তনখোলা নদীর চরমোনাই এলাকায়। দুটি লঞ্চেই সহস্রাধিক যাত্রী ছিল।
ঢাকা-বরিশাল রুটের পারবত-১০ লঞ্চের মাস্টার শামীম জানান, মধ্যরাতে হিজলা সংলগ্ন মেঘনার মধ্যে পড়ার পর নৌযানগুলো কুয়াশার কবলে পড়ছে। জাহাজ নোঙর করে রাখায় নৌযানগুলো গন্তব্যে পৌঁছাতে ৪/৫ বিলম্ব হচ্ছে।
এ ব্যাপারে বিআইডব্লিউটিএর নৌ-নিরাপত্তা শাখার বরিশালের উপ-পরিচালক আবুল বাশার মজুমদার বলেন, কুয়াশার সময় সতর্কভাবে চলাচলের জন্য নৌযানের মাস্টার-সুকানি-সাড়েংদের চিঠি দেয়া হয়েছে। অনেক মাস্টার-সুকানি-সাড়েং নির্দেশ অমান্য করায় দুর্ঘটনা ঘটছে।
সাইফ আমীন/এআরএ