ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

সপ্তাহের ব্যবধানে নওগাঁয় চালের কেজিতে বেড়েছে ৫ টাকা

জেলা প্রতিনিধি | নওগাঁ | প্রকাশিত: ০৪:২৪ পিএম, ১৩ আগস্ট ২০২২

নওগাঁয় ফের বেড়েছে সব ধরনের চালের দাম। সপ্তাহের ব্যবধানে খুচরা বাজারে চালের দাম বেড়েছে কেজিতে পাঁচ টাকা। দফায় দফায় চালের দাম বাড়ায় বিপাকে পড়েছে নিম্ন আয়ের খেটে খাওয়া মানুষ। চালের বাজার নিয়ন্ত্রণে জ্বালানি তেলের দাম কমানোসহ আমদানি বাড়ানোর পরামর্শ ব্যবসায়ী নেতাদের। এছাড়া বাজার নিয়ন্ত্রণে নিয়মিত প্রশাসনের মনিটরিং বাড়ানো দরকার বলেও মনে করছে সচেতন মহল।

খোঁজ নিয়ে জানা গেলো, গত ফেব্রুয়ারি মাসে পাইকারি বাজারে মোটা চাল (স্বর্ণা-৫) বিক্রি হয়েছে ৩৯-৪০ টাকা কেজি। আর খুচরা বাজারে বিক্রি হয়েছে ৪২-৪৫ টাকা কেজি। পাঁচ মাস পর আগস্টের মাঝামাঝিতে মোটা চাল বিক্রি হচ্ছে ৫৪-৫৫ টাকা কেজি। এসময়ে মধ্যে মোটা চালের দাম বেড়েছে কেজিতে ১০ টাকা। এছাড়া সরু চাল প্রকারভেদে প্রতি কেজিতে বেড়েছে ১০-১৫ টাকা। আর গত সপ্তাহেও নওগাঁর খুচরা বাজারে মোটা চালের দাম ছিল কেজিতে ৫০ টাকা। তবে সরু চালের বাজার ছিল স্থিতিশীল। আর চলতি সপ্তাহে মোটা এবং সরু চালের দাম বেড়েছে কেজিতে চার থেকে পাঁচ টাকা।

এদিকে, দফায় দফায় চালের দাম বাড়ায় বিপাকে পড়েছে নিম্ন আয়ের মানুষ। সেই সঙ্গে বেড়েছে নিত্যপ্রয়োজনীয় সব ধরনের জিনিসপত্রের দাম। সংসারে যোগান দিতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাদের। এভাবে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বাড়তে থাকলে বেঁচে থাকা কঠিন হয়ে দাঁড়াবে সাধারণদের।

শহরের চকদৌলত মহল্লার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী মুনতাজ হোসেন। গত সপ্তাহে স্বর্ণা-৫ চাল ৫০ টাকা কেজিতে কিনেছিলেন। শুক্রবার (১২ আগস্ট) সকালে শহরের পৌর খুচরা বাজারে চাল কিনতে আসেন। দাম শোনার পর মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়ার মতো অবস্থা। তিনি বলেন, পরিবারের সদস্য সংখ্যা পাঁচজন। দুইদিন পর পর তিন কেজি চাল কিনতে হয়। তিন মাস আগেও সরু চালের ভাত খেতাম। এখন তো তার ধারে কাছেও যাওয়া যায় না। মোটা চালের কেজি ৫৫ টাকা। ২-৩ দোকান ঘুরে একই দাম। যেভাবে চালের দাম বাড়ছে এতে করে আমাদের মতো খেটে খাওয়া মানুষদের বেঁচে থাকা খুবই কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ছে। শুধু চাল না, সবজি থেকে শুরু করে সব ধরনের জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে। চালসহ নিত্যপণ্যের দাম কমাতে সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করেন তিনি।

পৌর শহরের খুচরা চাল ব্যবসায়ী মো. মানিক প্রামাণিক বলেন, এক সপ্তাহ আগে খুচরা বাজারে মোটা চালের দাম কেজিতে ২ টাকা বেড়ে ৫০ টাকায় বিক্রি হলেও সরু চালের বাজার স্থিতিশীল ছিল। তবে সপ্তাহের ব্যবধানে খুচরা বাজারে মোটা চালের দাম কেজিতে ৪-৫ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৫৪-৫৫ টাকায়। এছাড়া সরু চাল কেজিতে ৪-৫ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে জিরাশাইল ৬৫-৭০ টাকা, কাটারি ৭২-৭৪ টাকা এবং বিআর-২৮, ৫৮-৬০ টাকায়।

তিনি বলেন, বর্তমানে বাজারে মোটা চালের সরবরাহ কম। মিলারদের কাছে চাল নিতে গেলে বিভিন্ন কথা শুনতে হচ্ছে। তারা বলছেন চাল নেই, দাম বেশি।

নওগাঁ সদর উপজেলার মেসার্স ফারিয়া রাইস মিলের সত্ত্বাধিকারী শেখ ফরিদ উদ্দিন বলেন, বড় বড় চালকল মালিকদের হাতে ধান আছে। তবে সাধারণ যারা কৃষক তাদের কাছে ধান নেই বললেই চলে। যেহেতু চালের বাজার বর্তমানে অস্থিতিশীল রয়েছে। সরকার চালের বাজার নিয়ন্ত্রণে আমদানির উদ্যোগ নিয়েছে। পর্যাপ্ত পরিমাণ আমদানি হলে চালের বাজার স্বাভাবিক হয়ে যাবে।

এছাড়া খোলা বাজারে খাদ্যশস্য বিক্রিসহ (ওএমএস) সরকারের যেসব খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি রয়েছে তা গ্রহণ করা হলে মোটা চালের দাম কমবে বলে মনে করেন তিনি।

নওগাঁ জেলা চালকল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ হোসেন চকদার বলেন, গত ইরি-বোরে মৌসুমে দেশে প্রাকৃতিক দুর্যোগে শস্য নষ্ট হওয়ায় উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে। প্রতি বিঘায় যেখানে ২৫ মণ ধান হওয়ার কথা সেখানে ১৮-২০ মণ ফলন হয়েছে। এদিকে, অনাবৃষ্টিতে এখনো রোপা-আমন লাগানো শেষ হয়নি। চাষিরা হাট-বাজারে ধান নিয়ে না আসায় ব্যবসায়ীরা কিনতে পারছেন না। বাড়তি দাম দিয়ে কিনতে হচ্ছে। এতে বাজারে ধানের দাম যেমন বাড়ছে তেমনি বাড়ছে চালের দামও।

তিনি বলেন, খাদ্যাভাস পরিবর্তন হওয়ায় মানুষ সরু চালের ভাত খেতে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছিল। কারণ সরু চালের দাম কম ছিল। তবে বর্তমানে সরু চালের বাজার যেমন অস্থিতিশীল তেমনি বাড়ছে মোটা চালের দামও। যাদের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে তারা এখন সরু থেকে মোটা চালের দিকে ঝুঁকছেন। মোটা চালের চাহিদা কম থাকায় চাষিরা ধান চাষও কমিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু বর্তমানে মোটা চালের চাহিদা বেড়েছে। তবে বাজারে মোটা ধানের সংকট। ধান সংকট ও চালের চাহিদা বাড়ায় বেড়েছে মোটা চালের দাম।

জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় প্রভাব পড়েছে চালসহ অন্যান্য জিনিসপত্র ও পরিবহনে। কিছুদিন আগেও ২০০ মণ ধান মোকামে নিয়ে আসতে যেখানে তিন হাজার টাকা খরচ হতো সেখানে এখন পাঁচ হাজার টাকা খরচ হচ্ছে। ঢাকায় চাল পাঠাতে প্রতি ট্রাকে ১০-১২ হাজার টাকা ভাড়া দিতে হতো। বর্তমানে ১৬-১৭ হাজার টাকা ভাড়া দিতে হচ্ছে। এ সমস্যা থেকে উত্তরণের জন্য জ্বালানি তেলের দাম কমানো, সংকট মোকাবিলায় আমদানি বাড়ানো এবং পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ ফসল উৎপাদন বৃদ্ধি করা প্রয়োজন বলে মনে করেন ফরহাদ হোসেন চকদার।

আব্বাস আলী/এমআরআর/এএসএম