অনৈতিক কর্মকাণ্ডে অতিষ্ঠ হয়ে মেয়েকে হত্যা করেন বাবা
রংপুরের পীরগাছায় মেয়ের অনৈতিক কর্মকাণ্ডে অতিষ্ঠ হয়ে তাকে শ্বাসরোধে হত্যার পর মাটির নিচে পুঁতে রাখেন বাবা। মরদেহ উদ্ধারের সাতদিনের মধ্যে চাঞ্চল্যকর এ হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদ্ঘাটন করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন বাবা রফিকুল ইসলাম।
এর আগে গত ২৫ জুলাই সকালে উপজেলার নয়াটারি এলাকার একটি বৈদ্যুতিক খুঁটি সংলগ্ন জায়গায় উঁচু মাটির ঢিবি দেখে স্থানীয়দের সন্দেহ হয়। পরে মাটি খুঁড়ে অজ্ঞাত এক তরুণীর মাথা দেখতে পায় লোকজন। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল গিয়ে মরদেহ উদ্ধার করে। ওইদিন মরদেহটি নিজের বোন লিপি বেগমের (২২) বলে দাবি করেন উপজেলার অনন্তরাম এলাকার শামীম মিয়া।
পুলিশ জানায়, গত ২২ জুলাই রাত ১টার দিকে মেয়েকে ঘুমন্ত অবস্থায় গলায় পা দিয়ে শ্বাসরোধে হত্যা করেন বাবা। পরে বাড়ির পাশের জমিতে পুঁতে রাখেন। কিন্তু কেউ যদি দেখে ফেলে এই ভয়ে দুদিন পর মরদেহ তুলে দূরে নিয়ে গিয়ে পুঁতে রাখা হয়। পুলিশ এ ঘটনায় মামলার জন্য নিহতের বাবা রফিকুল ইসলামকে থানায় ডাকেন। কিন্তু তিনি মামলা না করার জন্য গড়িমসি শুরু করেন। একপর্যায়ে তিনি বাদী হয়ে হত্যা মামলা করলেও সন্দেহ বেড়ে যায় পুলিশের। পরে তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে লিপির অবস্থান বাড়িতেই ছিল বলে পুলিশ নিশ্চিত হয়।
এ ঘটনায় নিহতের বাবা রফিকুল ইসলাম ও ভাই শামীমসহ পরিবারের চার সদস্যকে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ। একপর্যায়ে মেয়েকে ‘অসামাজিক কার্যকলাপ’ থেকে ফিরিয়ে আনতে ব্যর্থ হয়ে নিজেই হত্যা করেন বলে স্বীকার করেন রফিকুল ইসলাম।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে লিপির বাবা পুলিশকে জানান, অনেক স্বপ্ন নিয়ে মেয়েকে ভালো ঘর দেখে বিয়ে দিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু লিপির কারণেই সেই বিয়ে টেকেনি। এরপর এলাকায় এসে মাদকের কারবার ও অসামাজিক কার্যকলাপে জড়িয়ে পড়ে মেয়ে। এ নিয়ে গ্রামে একাধিকবার সালিশও হয়। একপর্যায়ে তাকে ঢাকার সাভারে একটি পোশাক কারখানায় কাজে পাঠানো হয়। গত কোরবানির ঈদের ছুটিতে বাড়িতে আসলে মেয়ে অন্তঃসত্ত্বা বলে জানতে পারেন রফিকুল ইসলাম। আর এতে তিনি লোকলজ্জার ভয়ে মেয়ের ওপর ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। এর জেরে গত ২২ জুলাই রাতে মেয়েকে ঘুমন্ত অবস্থায় গলায় পা দিয়ে শ্বাসরোধে হত্যা করেন।
রংপুরের সহকারী পুলিশ সুপার (সি-সার্কেল) আশরাফুল আলম পলাশ বলেন, মেয়ের অনৈতিক কর্মকাণ্ডে অতিষ্ঠ হয়ে তাকে হত্যা করেছেন রফিকুল ইসলাম। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে এমনটাই দাবি করেন তিনি। পরে তাকে গ্রেফতার দেখিয়ে সোমবার (১ আগস্ট) বিকেলে আদালতে পাঠানো হলে তিনি স্বেচ্ছায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। পরে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়।
জিতু কবীর/এমআরআর/জেআইএম