ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

নাটোরে ৪২ শিক্ষার্থীকে বেত্রাঘাত : ২ শিক্ষক বরখাস্ত

প্রকাশিত: ০৩:৪০ পিএম, ৩১ জানুয়ারি ২০১৬

নাটোরের বাগাতিপাড়ার পেড়াবাড়িয়া দাখিল মাদ্রাসার এক শিক্ষার্থীর টাকা চুরির ঘটনায় ৪২ জন ছাত্রীকে বেত্রাঘাত করার অভিযোগ উঠেছে মাদ্রাসার এক সহকারী শিক্ষিকার বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় ক্ষুদ্ধ অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা শিক্ষিকার উপযুক্ত শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও ইউএনও বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছে।

এদিকে, রোববার দুপুরে মাদ্রাসার ম্যানেজিং কমিটির এক জরুরী সভায় শিক্ষার্থীদের বেত্রাঘাতের ঘটনায় ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় মাদ্রাসার সুপার শামসুল আরেফিন এবং অভিযুক্ত শিক্ষিকা জান্নাতুল ফেরদৌসকে সায়মিক বরখাস্ত করা হয়েছে। ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তে মাদ্রাসার সহকারী সুপার আফজাল হোসেনকে প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন, শিক্ষক প্রতিনিধি আব্দুল করিম ও ম্যানেজিং কমিটির সদস্য ফিরোজুল ইসলাম। তবে অভিযুক্ত শিক্ষিকার মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করে পাওয়া যায়নি।

নির্যাতিত ছাত্রী ও অভিভাবকরা জানান, বাগাতিপাড়া উপজেলার পেড়াবাড়িয়া দাখিল মাদ্রাসার নবম শ্রেণির শিমলা খাতুন নামের এক ছাত্রীর শনিবার কমন রুমে রাখা বইয়ের মধ্যে ১২৫ টাকা চুরি হয়ে যায়। বিষয়টি ওই ছাত্রী শিক্ষকদের জানায়। এ ঘটনায় মাদ্রাসার সুপার শামসুল আরেফিন, সহকারী শিক্ষিকা জান্নাতুল ফেরদৌসকে চুরি যাওয়া টাকা উদ্ধারের দায়িত্ব দেন। পরে শিক্ষিকা জান্নাতুল ফেরদৌস কমনরুমের দরজা আটকিয়ে ৪২ জন ছাত্রীর দেহ তল্লাশি করেন। এসময় কোনো কোনো শিক্ষার্থীর বোরকা খুলেও দেহ তল্লাশি চালানো হয়। এরপর হারিয়ে যাওয়া ওই টাকা কেউ চুরি করেছে কিনা এমন স্বীকার করার জন্য আধা ঘণ্টা সময় দেয়া হয় শিক্ষার্থীদের।

কিন্তু তাতেও চুরি যাওয়া টাকা উদ্ধার না হওয়ায় কমন রুমের দরজা বন্ধ করে মাদ্রাসার অষ্টম থেকে দশম শ্রেণির ৪২ জন ছাত্রীকে বেত্রাঘাত করেন শিক্ষিকা জান্নাতুল ফেরদৌস। বেত্রাঘাতের কারণে ১৫ থেকে ২০ জন শিক্ষার্থী আহত হলে তাদেরকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়া হয়।

এদিকে, ঘটনার দিন শনিবার ছুটির পর বিষয়টি ছাত্রীরা অভিভাকদের জানালে অভিভাবরা বিক্ষোভে ফেটে পড়েন এবং অভিযুক্ত শিক্ষিকার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষের কাছে জোর দাবি জানান। কিন্তু মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যবস্থা না নেয়ায় রোববার সকালে মাদ্রাসা এলাকা থেকে ক্ষুদ্ধ অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ-মিছিল বের করেন। পরে মিছিলটি বিভিন্ন এলাকা প্রদক্ষিণ করে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ে গিয়ে শেষ হয়। এসময় শিক্ষিকার উপযুক্ত শাস্তির দাবিতে ইউএনও বরাবর একটি স্মারকলিপি দেন শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা।

বাগাতিপাড়া থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) রোস্তম আলী জাগো নিউজকে জানান, সকালে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা মিছিল বের করলে পুলিশ আন্দোলনরত শিক্ষার্থী এবং অভিভাকদের সঙ্গে কথা বলে পরিস্থিতি শান্ত করেছে।

এ ব্যাপারে মাদ্রাসা সুপার শামসুল আরেফিন জাগো নিউজকে বলেন, টাকা হারিয়ে যাওয়া ঘটনা দেখতে সহকারী শিক্ষিকা জান্নাতুল ফেরদৌসকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল। কিন্তু তিনি ছাত্রীদের বেত্রাঘাত করেছেন। তবে কমনরুম থেকে টাকা হারানোর ঘটনা প্রায়ই ঘটে বলে তিনি জানান।

এদিকে, মাদ্রাসার ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি নুরুল ইসলাম ঠান্ডু জাগো নিউজকে বলেন, ১২৫ টাকা হারিয়ে যাওয়ার ঘটনায় ৪২ জন ছাত্রীকে বেত্রাঘাত করেছেন মাদ্রাসার সহকারী শিক্ষিকা জান্নাতুল ফেরদৌস। এ ঘটনায় দুপুরে মাদ্রাসার ম্যানেজিং কমিটির জরুরী বৈঠক ডাকা হয়। বৈঠকে শিক্ষার্থীদের বেত্রাঘাতের ঘটনায় মাদ্রাসার সুপার অভিযুক্ত শিক্ষিকার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় সুপার শামসুল আরেফিন ও অভিযুক্ত সহকারী শিক্ষিকা জান্নাতুল ফেরদৌসকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে।

নুরুল ইসলাম ঠান্ডু আরও বলেন, ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত এবং প্রকৃত ঘটনা বিস্তারিত জানতে মাদ্রাসার সহকারী সুপার আফজাল হোসেনকে প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন, শিক্ষক প্রতিনিধি আব্দুল করিম ও ম্যানেজিং কমিটির সদস্য ফিরোজুল ইসলাম। তদন্ত কমিটি আগামী তিন দিনের মধ্যে তাদের তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করবেন।

তবে অভিযুক্ত শিক্ষিকা জান্নাতুল ফেরদৌসের সেলফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করে ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়। এ বিষয়ে বাগাতিপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফরহাদ আহমেদ জাগো নিউজকে জানান, শিক্ষার্থীদের বেত্রাঘাত বিধি অনুযায়ী অন্যায়। এ বিষয়ে তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

রেজাউল করিম রেজা/এমজেড/পিআর