পদ্মা সেতু দিয়ে ঢাকায় আসছে সোনাখালীর গরু
করোনার কারণে গত দুই বছর খুব একটা লাভের মুখ দেখেননি গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলার পিঞ্জুরী ইউনিয়নের সোনাখালী গ্রামের খামারিরা। কিন্তু এ বছরের পরিস্থিতি ভিন্ন। দেশের বিভিন্ন এলাকায় কোরবানির হাট বসার একমাস আগে থেকেই এ গ্রামের খামারিদের গরু বিক্রি শুরু হয়েছে। পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় এ গ্রামে প্রাকৃতিকভাবে পালন করা দেশি গরু কিনে ঢাকায় নিয়ে যাচ্ছেন ব্যাপারীরা। এ কারণে অন্য বছরের তুলনায় এবছর গরুর দাম ভালো পাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন খামারিরা।
সোনাখালী গ্রামটি কোটালীপাড়া উপজেলার বিল এলাকায় অবস্থিত। বছরের প্রায় ৯ মাস গ্রামটি জলমগ্ন থাকে। বর্ষার সময় এলাকায় কোনো কাজ থাকে না। তাই ওই গ্রামের মানুষ দশকের পর দশক ধরে হাঁস-মুরগি ও গবাদিপশু পালন করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন। এই গ্রামের খামারের গরুগুলোকে ঘাস খাইয়ে প্রাকৃতিকভাবে পালন করা হয়। যে কারণে এ গ্রামের গরুগুলোর কোটালীপাড়াসহ এর আশপাশের উপজেলায় ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।
চলতি বছর গ্রামটির শতাধিক ছোট-বড় খামারে ৯ শতাধিক গরু পালন করা হয়েছে। এরই মধ্যে প্রায় দুই শতাধিক গরু বেশ ভালো দামেই বিক্রি হয়েছে বলে বিভিন্ন খামারের মালিকরা জানিয়েছেন। যার ফলে তারা বেশ খুশি।
সোনাখালী গ্রামের খামারি খবীর গাজী (৬০) বলেন, গত ৪০ বছর ধরে গরু লালনপালন করছি। প্রতিবছর কোরবানির আগে গরু বিক্রি করে আবার নতুন করে কিনি। গতবছর কোরবানির ইদের পরে পাঁচ লাখ টাকা দিয়ে ১০টি গরু কিনেছি। এই ১০টি গরু এক বছর ধরে লালনপালন করেছি। এরই মধ্যে গরু কেনার জন্য কয়েকজন ব্যাপারি খামারে এসেছেন। অন্য বছরের তুলনায় এবছর গরুর চাহিদা বেশি মনে হচ্ছে।
খামারি সিদ্দিক গাজী (৫০) বলেন, প্রতিবছর আমরা প্রায় খামারিই খামারে বসে গরু বিক্রি করি। ঈদের কয়েকদিন আগে আমাদের এখানে গরু বিক্রি শুরু হয়। এবছর প্রায় মাসখানেক আগে গরু বিক্রি শুরু হয়েছে। পদ্মা সেতু চালু হওয়ার কারণে ব্যাপারিরা গরু কিনে ঢাকায় নিয়ে যাচ্ছেন। তাই এবছর আগে থেকেই গরু বিক্রি শুরু হয়েছে।
খামারি নুরুল ফকির (৪৫) বলেন, আমার খামারে চারটি গরু ছিল। এরই মধ্যে আমি দুটি গরু বিক্রি করেছি। অন্য বছরের তুলনায় এবছর একটু বেশি দামে গরু বিক্রি করতে হচ্ছে। কারণ হিসেবে খৈল, ভুসির দাম বৃদ্ধিকে দায়ী করেন এই খামারি।
গরুর ব্যাপারি সোহাগ শেখ বলেন, ফেরিতে সময় নষ্ট হওয়ার কারণে প্রতিবছর আমরা সোনাখালী গ্রাম থেকে গরু কিনে পদ্মার এ পাড়ের বিভিন্ন হাট-বাজারে বিক্রি করতাম। এখানকার দেশীয় গরুর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। আর পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় আমরা অন্য বছরের তুলনায় একটু বেশি দাম দিয়ে গরু কিনে ঢাকায় নিয়ে যাচ্ছি।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. পলাশ কুমার দাশ বলেন, সোনাখালী গ্রামের খামারিরা আমাদের কাছ থেকে পরামর্শ ও প্রশিক্ষণ নিয়ে গরু পালন করছেন। এখানকার অধিকাংশ গরুগুলোকে প্রাকৃতিকভাবে লালনপালন করা হয়। এখানে রয়েছে ছোট-বড় বিভিন্ন সাইজের দেশীয় প্রজাতির গরু। প্রতিবছরই এ গ্রামের খামারিরা গরু বিক্রি করে লাভবান হচ্ছেন।
এমআরআর/এমএস