ক্ষমা চাইলেন এসআই রফিক
নারায়ণগঞ্জে উম্মে সালমা নামে এক গৃহবধূর রহস্যজনক মৃত্যুর ঘটনায় দায়েরকৃত মামলায় ভুল প্রতিবেদন দাখিলের কারণে আদালতে ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন মামলাটির পূর্বতন (আগের) তদন্তকারী কর্মকর্তা সিদ্ধিরগঞ্জ থানার এসআই রফিকুল ইসলাম।
সোমবার দুপুরে নারায়ণগঞ্জ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট চাঁদনী রূপমের আদালতে স্ব-শরীরে উপস্থিত হয়ে ক্ষমা চেয়ে কারণ দর্শানোর নোটিশের জবাব দাখিল করেন তিনি।
জবাবে এসআই রফিকুল ইসলাম বলেন, আদেশনামার সঙ্গে মূল পিটিশন সংযুক্ত থাকার কারণে ভুলক্রমে আমার প্রতিবেদনে শেষাংশে পিটিশন মামলার ঘটনার কোনো সত্যতা পাওয়া যায়নি মর্মে উল্লেখ করা হয়। যাহা সম্পূর্ণ অনিচ্ছাকৃত বশত লেখা হয়েছে। এই প্রতিবেদন লেখার সময় আমি ব্যক্তিগতভাবে অসুস্থ ছিলাম। যার কারণে ওই বিষয়ে অমনোযোগী থাকায় ভুল হয়েছে। যা সম্পূর্ণভাবে আমার মনের অজান্তে হয়েছে। আদালতের আদেশের প্রতি সর্বদাই আমি সতর্ক থাকি এবং ভবিষ্যতে আরো সতর্ক থাকিব। মনের অজান্তে লেখার বিষয়ে প্রথমবারের মতো আদালতের কাছে ক্ষমা চাচ্ছি।
মামলার এজাহারে নিহত সালমার মা ছালেহা বেগম উল্লেখ করেন, তার মেয়ে উম্মে সালমার স্বামীর ভাগ্নির সঙ্গে পরকীয়া প্রেমের কথা ফাঁস করে দেয়ায় পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। আদালত পূর্বতন মামলার প্রতিবেদন দাখিল করতে সংশ্লিষ্ট থানার ওসিকে নির্দেশ দিয়েছেন। মামলার আসামিরা হলেন, নিহতের স্বামী সাবেক নৌ বাহিনীর সদস্য আবু তালেব, তার বোন নাসিমা বেগম, ভগ্নিপতি রুহুল আমিন, ভাগ্নি রাত্রী বেগম, শাশুড়ি জবেদা বেগম, রেখা বেগম ও ফারুক মিয়া।
মামলার পিটিশনে ছালেহা বেগম অভিযোগ করেন, গরীব কৃষকের মেয়ে হওয়ায় তার মেয়ে সালমাকে প্রায়ই নির্যাতন করা হতো। সালমার স্বামীর ভাগ্নি রাত্রী বেগমের স্বামী রিফাত বিদেশে থাকতো। রাত্রী বেগম মুজাফফর নামের এক ব্যক্তির সঙ্গে পরকীয়ায় লিপ্ত ছিল।
বিষয়টি পারিবারিকভাবে জানাজানি হলে, রাত্রীর পিতা রুহুল আমিন রাত্রীকে মারধর করে। ওই সময় রিফাত রাত্রীকে ফোনে না পেয়ে সালমার কাছে ফোন দিলে সালমা পরকীয়ার বিষয়টি ফাঁস করে দেয়। এতে সালমার স্বামী আবু তালেব ও তার পরিবার ক্ষিপ্ত হয়ে পরিকল্পিতভাবে ১৭ মে রাত ১০টা থেকে ১৮ মে ভোর পৌনে ৬টার মধ্যে যেকোন সময় সালমাকে শ্বাসরোধে হত্যা করে।
পরে সুকৌশলে সকল আসামিরা হত্যার দায় থেকে বাঁচার জন্য সালমার মরদেহকে ফ্যানের সঙ্গে ঝুলে রাখে। এরপর মৃতের স্বামী আবু তালেব মৃতের পরিবারকে এসে বলে সালমা হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েছে। পরে মৃতের মা গিয়ে দেখেন ফ্যানের সঙ্গে সালমার ঝুলন্ত মরদেহ। এ সময় তিনি স্বামী আবু তালেব ও অন্যান্যদের জিজ্ঞাসাবাদ করলে তারা কোনো কথা না বলে দ্রুত ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়।
সিদ্ধিরগঞ্জ থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) রফিকুল ইসলাম বিবাদীপক্ষের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে বাদিপক্ষকে ভুল বুঝিয়ে আত্মহত্যার প্ররোচনার মামলা দায়ের করান। এছাড়া তৎকালীন সিভিল সার্জনও আসামিদের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে হত্যার পরির্বতে আত্মহত্যার রিপোর্ট প্রদান করেন।
এরপর গত ২২ ডিসেম্বর নারায়ণগঞ্জ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট চাঁদনী রূপমের আদালতে পিটিশনের শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। শুনানি শেষে আদেশে আদালত উল্লেখ করেন, এই মামলার ঘটনার বিষয়ে তদন্ত করার আদেশ আদালত আগের তদন্তকারী কর্মকর্তাকে দেয়নি। তবুও উপযাচক হয়ে ঘটনার বিষয়ে তদন্ত করে রিপোর্ট প্রদান করার আগ্রহ কেন ? তার তা আদালতের বোধগম্য নয়।
আদেশের অনুলিপি সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ওসিকে প্রদান করা হয়েছিল। ওই আদেশ পড়ে বোঝার যোগ্যতা তদন্তকারী কর্মকর্তার না থাকলে এসআই পদে চাকরি করার যোগ্যতা তার আছে কিনা তাতে আদালতের সন্দেহ আছে। এই মামলার বিষয়ে অপ্রয়োজনীয় মন্তব্য করায় আইনের লঙ্ঘন হয়েছে। মামলাকে ক্ষতিগ্রস্ত করার মনোভাব তদন্তকারী কর্মকর্তা কেন দেখাবেন তা আদালতের নিকট বোধগম্য নয়।
শাহাদাত হোসেন/এআরএ/পিআর