পদ্মা সেতু ঘিরে শরীয়তপুরে অপার সম্ভাবনা
পদ্মা সেতু উদ্বোধনের দিনক্ষণকে ঘিরে দীর্ঘ প্রায় ৩৫ বছরের ভগ্নদশা পরিবহন খাতও স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে। পদ্মা সেতু চালু হবে—এ আশায় দীর্ঘদিন লোকসানের পরও অনেক ব্যবসায়ী পরিবহন ব্যবসা চালিয়ে গেছেন। পদ্মা সেতুর সুফল পেতে আমি নতুন উদ্যোক্তা হিসেবে পরিবহন ব্যবসায় বিনিয়োগ করেছি। পদ্মা সেতুকে ঘিরে নতুন করে এখাতে প্রায় ৩০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ হচ্ছে। আশা করছি ২৫ জুন পদ্মা সেতু উন্মুক্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পরিবহন খাতও নতুন চেহারায় আবির্ভূত হবে।
কথাগুলো বলছিলেন পরিবহন ব্যবসায় আসা নতুন উদ্যোক্তা শরীয়তপুর সুপার সার্ভিস প্রাইভেট কোম্পানির অংশীদার সাইম মোল্লা। তার মতো অনেকেই বলছেন পদ্মা সেতু ঘিরে শরীয়তপুরে অপার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। তারা বলছেন, পদ্মা সেতু শুধু যোগাযোগের দ্বারই উন্মুক্ত করবে না; শিল্প, সংস্কৃতি ও পর্যটন শিল্পসহ নানা ব্যবসার প্রসার ঘটিয়ে অর্থনীতিকে করবে সমৃদ্ধ।
শরীয়তপুরের উদীয়মান কৃষি উদ্যোক্তা ও ভোজেশ্বর ইউপি চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম শিকদার জাগো নিউজকে বলেন, ‘মাছ, গরু, সবজি, মসলাসহ আমাদের উৎপাদিত অন্যান্য পণ্য শরীয়তপুরের বাইরে নেওয়া ছিল ব্যয়বহুল ও কষ্টসাধ্য। আমরা ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হতাম। ফলে কৃষি সেক্টর ছিল অনেকটাই অলাভজনক। পদ্মা সেতু চালু হলে আমাদের যোগাযোগের সংকট কেটে যাবে।’
শরীয়তপুর চেম্বার অব কমার্সের সাধারণ সম্পাদক জাগো নিউজকে বলেন, ‘পদ্মা সেতু ঘিরে এরই মধ্যে শরীয়তপুর পরিবহন খাতে প্রায় ৩০০ কোটি টাকার বিনিয়োগ হচ্ছে। পরিবহন খাতের মতো সব ক্ষেত্রে উন্নয়নের ছোঁয়া লাগবে।’
পদ্মা সেতু উদ্বোধনের তিন থেকে চারমাসের মধ্যে শরীয়তপুরে উন্নয়ন কার্যক্রম শুরু হবে বলে জানান শরীয়তপুর চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি, নড়িয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, মানি চেঞ্জার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ সভাপতি একেএম ইসমাইল।
তিনি বলেন, পর্যটন কেন্দ্রকে ঘিরে থ্রি স্টার মানের হোটেল-মোটেল তৈরি হবে। গার্মেন্টস, মাঝারি শিল্প, মৎস্য, গবাদিপশু, কৃষি খাত, পরিবহন খাতসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে অভূতপূর্ব উন্নয়ন সাধিত হবে। যা শুধু এ অঞ্চলের অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করবে না, ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে জীবনমানের উন্নয়ন হবে।
কৃষি বিজ্ঞানী কবি মফিজুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, কৃষিনির্ভর বাংলাদেশের উন্নয়নের পূর্ব শর্ত হচ্ছে যোগাযোগ ব্যবস্থা। পদ্মা সেতু সেই যোগাযোগের ব্যবস্থার পালের দেবে নতুন হাওয়া। যা শরীয়তপুরের কৃষিকে অনেক দূর নিয়ে যাবে।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর হারুন অর রশিদ জাগো নিউজকে বলেন, শরীয়তপুর ছিল একটি অনুন্নত জেলা। যোগাযোগ ব্যবস্থা খারাপ হওয়ার কারণে এখনে ভালোমানের কোনো শিক্ষক আসতে চাইতেন না। পদ্মা সেতু উদ্বোধনের মধ্যদিয়ে শরীয়তপুরের যোগাযোগ ব্যবস্থা হবে আধুনিক। তখন ভালোমানের শিক্ষক এখানে পোস্টিং নিয়ে আসবেন। এতে জেলার শিক্ষার মান উন্নত হবে।
শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসক মো. পারভেজ হাসান জাগো নিউজকে বলেন, পদ্মা সেতুকে ঘিরে শরীয়তপুরে অপার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। এ সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে অনেকগুলো বৃহৎ শিল্প এখানে আসার অপেক্ষায় আছে।
তিনি বলেন, নদীবেষ্টিত এলাকা হিসেবে আমরা পর্যটনশিল্পকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করছি। সেতু উদ্বোধনের পর অনেক ধরনের উন্নয়ন আমরা দেখছি। শরীয়তপুর কৃষিপ্রধান অঞ্চল হওয়ায় এরই মধ্যে কৃষি সেক্টরে অনেকে বিনিয়োগ করতে শুরু করেছেন। আমরা কৃষিভিত্তিক অর্থনীতিকে গতিশীল করতে সংশ্লিষ্টদের উৎসাহিত করছি।
পানিসম্পদ উপমন্ত্রী ও কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক একেএম এনামুল হক শামীম জাগো নিউজকে বলেন, স্বপ্নের পদ্মা সেতু চালু হলে শরীয়তপুর হবে বাংলাদেশের প্রথম শ্রেণির ১০টি জেলার মধ্যে একটি। এরই মধ্যে বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শরীয়তপুরে শেখ হাসিনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন দিয়েছেন। এখানে শিক্ষা, সংস্কৃতি, কৃষি, পরিবহন, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প কারখানা হবে।
তিনি বলেন, শেখ হাসিনা তাঁতপল্লিসহ সামগ্রিক ব্যবসা-বাণিজ্যকে ঘিরে আগামী কয়েক বছরের মধ্যে ব্যাপক কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে শরীয়তপুরে। সব মিলে শরীয়তপুর হবে উন্নত, আধুনিক ও স্বনির্ভর জেলা।
এসআর/জেআইএম