রংপুরে শৈত্য প্রবাহে জনজীবন বিপর্যস্ত
তীব্র শীত আর শৈত্য প্রবাহে রংপুরের জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। তুষারাচ্ছন্ন বাতাস আর ঘন কুয়াশায়সহ হাড় কাপাঁনো শীতে জবুথবু হয়ে পড়েছে এ অঞ্চলের মানুষ। গত চারদিন ধরে রংপুরে শীতের প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় দুর্ভোগ বেড়েছে ছিন্নমূল মানুষের।
শিশু ও বৃদ্ধরা ঠাণ্ডাজনিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। এতে সর্দি, কাশি ও হাপানিজনিত রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। মজুর পরিবারের মধ্য বয়সী ও বৃদ্ধরা কর্মহীন হয়ে পড়েছেন।
রংপুরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, প্রচণ্ড শৈত্যপ্রবাহে জনজীবন অচল হয়ে পড়েছে। একই সঙ্গে ঘন কুয়াশার চাদরে ঢাকা পড়েছে জনপদ। ঘন কুয়াশার কারণে যানবাহনগুলোকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত হেডলাইট জ্বালিয়ে চলাচল করতে দেখা গেছে। শীতে অভাবি মানুষের জীবন বাঁচানোই দায় হয়ে পড়েছে।
রংপুর আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ আব্দুল সালাম জাগো নিউজকে জানান, শনিবার সকালে রংপুরে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৮ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যা এবারের শীত মৌসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা।
গত বুধবার থেকে এ অঞ্চলে শীতের তীব্রতা বেড়েছে, যা আরো কয়েকদিন স্থায়ী হতে পারে। শুক্রবার রংপুরে বাতাসের আদ্রতা ছিল ৭৮ শতাংশ এবং সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ১৩ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
সরজমিনে রংপুর জেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, জেলার পীরগঞ্জ, তারাগঞ্জ, বদরগঞ্জ, মিঠাপুকুর, পীরগাছা, কাউনিয়া, গংগাচড়া ও রংপুর সদর উপজেলা জুড়ে নেমে আসেছে উত্তর-পশ্চিমের কনকনে শৈত্য প্রবাহ। রংপুরের গংগাচড়া উপজেলার তিস্তা নদীর তীর ঘেষে রয়েছে ঘন বসতি। এসব বসত ঘরের বেশিরভাগ খড়কুটো দিয়ে গড়া। তিস্তা পাড়ের বরফগলা তুষারাচ্ছন্ন বাতাস হু-হু করে ঢুকে পড়ছে বসতঘরে। ফলে নিম্নমানের মানুষেরা কম্বল-কাঁথায় শীত নিবারণ করতে পারছেন না।
পীরগঞ্জের দিনমজুর শফিকুল ইসলাম বলেন, ঠাণ্ডার কারণে কাজে যেতে না পেরে পরিবার-পরিজন নিয়ে কষ্টে আছেন।
অপরদিকে, শীতের তীব্রতার সঙ্গে ছড়িয়ে পড়ছে শীতজনিত রোগ। বয়োবৃদ্ধ ও শিশুরা শীতজনিত রোগে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। গরম কাপড়ের দোকানগুলোতে মানুষের ভীড় ক্রমেই বাড়ছে। এছাড়াও সরকারিভাবে যে কম্বল বিতরণ করা হয়েছে তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে পোল্টি শিল্পের মুরগি মারা যাচ্ছে। প্রচণ্ড শীতে বীজতলার চারা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এতে করে আগামী ইরি-বোরো আবাদ নিয়ে শঙ্কায় রয়েছে কৃষকরা। সেই সঙ্গে আশংকায় দিন কাটছে আলু চাষীদের।
রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে শীতজনিত রোগ নিউমোনিয়া ও সর্দি-ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে প্রতিদিন ৫০ থেকে ৬০ জন শিশু ভর্তি হচ্ছে বলে হাসপাতাল সূত্র জানা গেছে।
রংপুরের ভারপ্রাপ্ত সিভিল সার্জন ডা. আমিনুল ইসলাম জাগো নিউজকে জানান, মূলত শিশুরাই শীতজনিত নানা রোগে আক্রান্ত হয়। এবারে ঠাণ্ডায় ডায়রিয়া আর নিউমানিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। শিশুদের গরম কাপড় পরানো এবং সকালে ও সন্ধ্যার পর তাদের ঘরের বাইরে বের না করার পরামর্শ দেন তিনি।
রংপুর জেলা প্রশাসকের ত্রাণ শাখা জানায়, এ পর্যন্ত ৩০ হাজার কম্বল বিতরণ করা হয়েছে। আরো বরাদ্দ চেয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে।
জিতু কবীর/জেডএইচ