খাদ্যের মূল্যবৃদ্ধিতে চিড়েচ্যাপ্টা পোলট্রি খামারিরা
ব্রয়লার মুরগি ও ডিমের বাড়তি দামেও লোকসান গুনতে হচ্ছে পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার পোলট্রি খামারিদের। এক কেজি ওজনের একটি মুরগি উৎপাদন খরচ ১৪০ টাকা হলেও খামারিদের বিক্রি করতে হচ্ছে ১১৮ টাকায়।
একটি ডিম উৎপাদন খরচ ৮ টাকা ২০ পয়সা। বিক্রি হচ্ছে ৮ টাকা ৫০ পয়সায়। তবে ডিমপ্রতি ২০ থেকে ৩০ পয়সা আপাতত লাভ হলেও মাত্র এক মাস আগে রোজার মধ্যে এক পিস ডিম বিক্রি হয়েছে ৬ টাকা ৫০ পয়সা দরে। অর্থাৎ উৎপাদন খরচের চেয়ে প্রায় দুই টাকা কমে বিক্রি করতে হয়েছে। এজন্য পোলট্রি খাদ্যের দাম বৃদ্ধিকে দায়ী করেছেন খামারিরা।
ঈশ্বরদী পোলট্রি খামার অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ও বঙ্গবন্ধু কৃষি পদকপ্রাপ্ত খামারি আকমল হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, ‘খামার এখন উদ্যোক্তাদের গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তরুণ উদ্যোক্তারা বেকারত্ব ঘোচাতে ও স্বাবলম্বী হতে পোলট্রি খামার করেছিলেন। এখন অনেক খামারি লোকসানের কবলে পড়ে মূলধন হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছেন। এরই মধ্যে ঈশ্বরদীতে প্রায় দুইশ খামার বন্ধ হয়ে গেছে।’
পোলট্রি খামারিদের দুর্দশার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, চলতি বছরে চারবার খাদ্যের দাম বেড়েছে। চারমাস আগেও এক বস্তা (৫০ কেজি) মুরগির খাবার ২২০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে, এখন তা বেড়ে হয়েছে ২৭৫০ টাকায়। সেইসঙ্গে বিদ্যুৎ বিল, শ্রমিকের বেতন, খাঁচা ও শেড নির্মাণ সামগ্রীর দাম বেড়েছে। প্রতিনিয়ত উৎপাদন খরচ বাড়ছে। কিন্তু মাংস ও ডিম কত টাকায় বিক্রি হবে সেটা নির্ধারণের ক্ষমতা খামারিদের হাতে নেই। এটি নিয়ন্ত্রণ করছে একটি সিন্ডিকেট। ফলে মাংস ও ডিম বিক্রি করে ক্ষুদ্র খামারিরা তাদের খরচই উঠাতে পারছেন না। প্রতিনিয়ত লোকসানের মুখে পড়তে হচ্ছে।
দাশুড়িয়া ইউনিয়নের আজমপুর গ্রামের এস এম পোলট্রি খামারের স্বত্বাধিকারী আব্দুস সালাম জানান, বর্তমানে একটি ডিম উৎপাদন খরচ ৮ টাকা ২০ পয়সা। খাদ্য ৬ টাকা ৭০ টাকা, শ্রমিক ৫০ পয়সা, বিদ্যুৎ ৫০ টাকা, ওষুধ ৪০ টাকা, ডিম পরিবহন ও ভাঙাসহ অন্যান্য ১০ পয়সা টাকা।
তিনি বলেন, ‘২০০৭ সালে যখন খামার করি তখন (৫০ কেজি) খাদ্যের মূল্য ছিল ১৩০০ টাকা, এখন ২৭৫০ টাকা। দ্বিগুণের বেশি দাম বেড়েছে। কিন্তু ডিমের দাম তো বাড়েনি। তখন প্রতি পিস ডিম ৮ টাকায় বিক্রি হতো। এখনও সে মূল্যেই বিক্রি হয়।’
‘৩০ লাখ টাকা বিনিয়োগ করে পোলট্রি খামার করেছি। খামারে ৩৩০০ মুরগি রয়েছে। প্রতিদিন গড়ে ২৮০০ ডিম হয়। ক্ষুদ্র খামারি হিসেবে শুধু এটুকুই বলতে পারি, যেভাবে খাদ্যের দাম বাড়ছে এভাবে চলতে থাকলে খামার বন্ধ করে দেওয়া ছাড়া আর কোনো উপায় থাকবে না’, বলেন এ খামারি।
একই এলাকার খামারি শিমুল খন্দকার জাগো নিউজকে বলেন, ‘সরকারের উদাসীনতা এবং অসাধু ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটের কারণে একের পর এক মুরগির খাবারের দাম বাড়ছে। এতে বহু খামার বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এ ব্যবসায় এখন বড় পুঁজির শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো বিনিয়োগ করেছে। ফলে পুঁজি হারিয়ে নিঃস্ব অনেক ক্ষুদ্র খামারি।’
মুলাডুলি গ্রামের আহাদ আলীর খামারে এক হাজার ব্রয়লার মুরগি রয়েছে। প্রতিটি মুরগির ওজন ১ কেজি ৯০০ গ্রাম। একটি মুরগির পেছনে ব্যয় হয়েছে ২৬৫ টাকা। অর্থাৎ এক কেজি ওজনের একটি মুরগির উৎপাদন খরচ ১৪০ টাকা। এখন এ মুরগি পাইকারি বিক্রি করতে হচ্ছে ১১৮ টাকা কেজি দরে।
আহাদ আলী জাগো নিউজকে বলেন, ‘এভাবে আর কতদিন লোকসান দেওয়া যায়? খাদ্যের দাম বাড়ানোর পাশাপাশি পোলট্রি মাংসের দাম না বাড়ালে ক্ষুদ্র খামারিরা হয়তো অচিরেই নিঃস্ব হয়ে যাবে।’
সলিমপুর ইউনিয়নের মিরকামারী গ্রামের সততা পোলট্রি খামারির স্বত্বাধিকারী কামরুজ্জামান মাসুম বলেন, এ শিল্পকে ধরে রাখতে ব্যাংকগুলোকে সহজ শর্তে ঋণ দিতে হবে। পাশাপাশি এ খাতে সরকারি প্রণোদনা বাড়াতে হবে। খাদ্যের দাম যেহেতু বেড়েছে তাই সরকারকে মাংস ও ডিমের দামও বাড়াতে হবে। তা নাহলে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র এসব খামার বন্ধ হয়ে যাবে।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ঈশ্বরদীতে ৪৫১টি পোলট্রি খামার রয়েছে। এর মধ্যে ব্রিডার ৭, লেয়ার ২২৬ ও ব্রয়লার ২১৮টি। খামারিদের প্রশিক্ষণ, সেমিনার ও পরামর্শসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হচ্ছে।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. নাজমুল হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, বর্তমানে পোলট্রি খাদ্যের দাম বেড়েছে। তবে একই সঙ্গে মাংস ও ডিমের দামও বেড়েছে। পোলট্রি খাদ্যের দাম বৃদ্ধির বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নজরে রয়েছে। তবে ঈশ্বরদীর খামারিরা এখন পর্যন্ত ভালো রয়েছেন।
এসআর/জিকেএস