রাজশাহীতে আরও বাড়তে পারে ডিমের দাম
দেশি মুরগি, হাঁস ও কোয়েল পাখির ডিম বাজারে পাওয়া গেলেও তুলনামূলকভাবে দাম কম থাকায় ফার্মের লাল ও সাদা ডিমের চাহিদা বেশি। পোল্ট্রি খামারিদের দাবি, মুরগির খাবারের দাম যে হারে বেড়েছে ডিমের দাম সে হারে বাড়েনি। এমন অবস্থায় বর্তমানে ডিমের যা দাম তা আর কমার সম্ভাবনা নেই। তবে ভবিষ্যতে ডিমের দাম আরও বাড়তে পারে।
শনিবার (২৮ মে) রাজশাহীর কয়েকটি খামার ঘুরে জানা গেছে, রাজশাহীতে ডিমের আড়তিদের কাছ থেকে নগরীর বিভিন্ন ডিম ব্যবসায়ী ডিম কিনছেন। তারা লাল লেয়ার মুরগির ডিম পিস প্রতি কিনছেন ৯ টাকা ২৫ পয়সায় এবং সাদা ফার্মের মুরগির ডিম কিনছেন ৮ টাকা ৩০ পয়সায়।
অপরদিকে পাইকার ডিমের বিক্রেতারা খুচরা ও দোকানিদের কাছে লাল ডিম ১০ টাকা ও সাদা ডিম ৯ টাকায় বিক্রি করছেন। তবে মুদি দোকানিরা প্রতি পিস লাল ডিম এক টাকা লাভে বিক্রি করছেন। এছাড়া হাঁসের ডিম প্রতি পিস বিক্রি হচ্ছে ১১ টাকায়। খুচরায় দেশি মুরগির প্রতি পিস ডিম ১৫ টাকায় তবে হালি ৫৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
রাজশাহীর পবা উপজেলায় রয়েছে সবচেয়ে বেশি পোল্ট্রির খামার। প্রায় আড়াই থেকে তিন হাজার মুরগির খামারি রয়েছেন এ অঞ্চলে। আর তাই, রাজশাহীর বাজারে অধিকাংশ ডিম আসে পবা উপজেলার পারিলা এলাকা থেকে।
খামার পর্যায়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, খামারিরা প্রতিপিস সাদা ডিমের দাম পাচ্ছেন ৭ টাকা ৯০ পয়সা এবং লাল ডিম ৮ টাকা ১০ পয়সা। তবে বাজারের ডিমের আড়তদার বা পাইকারদের ভাষ্য, তারা বড় আড়তিদের কাছে থেকে সাদা ডিম কিনছেন ৮ টাকা ৩০ পয়সায় এবং লাল ডিম ৯ টাকা ২৫ পয়সায় কিনতে হচ্ছে। পরিবহন, শ্রমিক ও আনুষাঙ্গিক খরচ ধরে ভোক্তা পর্যায়ে বিক্রি হয় ৯ থেকে ১০ টাকায়।
পবা উপজেলার পারিলার পোল্ট্রি খামারি বাবু বলেন, বস্তা প্রতি মুরগির খাবারের দাম বাড়লেও ডিমের দাম সেই তুলনায় বাড়েনি। প্রতি পিস ডিমে ৭ টাকা ৫০ পয়সা খরচ পড়ে। আর সামান্য লাভে বিক্রি করতে হয় ডিলার ও বড় বড় আড়তিদের কাছে। কমপক্ষে চার বার হাতবদলের পর সাড়ে ৭ থেকে ৮ টাকার ডিম ভোক্তাদের কাছে বিক্রি হয় ১০ থেকে ১১ টাকায়।
পবার পারিলা ইউনিয়নের খামারি বাবু বলেন, এক হাজার ৮০০ টাকার ফিডের বস্তা ১০ থেকে ১২ বছরের ব্যবধানে দাম বেড়ে ঠেকেছে দুই হাজার ৮০০ টাকায়। কিন্তু এক যুগ আগেও ডিমের দাম যেমন ছিল, সামান্য দু’এক টাকা বেড়ে এখনো প্রায় একই রকম আছে। এই ডিমের দাম ভবিষ্যতে ১৫ টাকাতে গিয়েও ঠেকতে পারে। তবে খাদ্যের দাম কমালে আমরা আবারো ৮ টাকায় ডিম খাওয়াতে পারবো।
সাহেব বাজার মাস্টারপাড়া এলাকার ডিম ব্যবসায়ী মিঠু হোসেন বলেন, খামারি পর্যায়ে ডিমের উৎপাদন খরচ বাড়ায় ডিমের দামও বেড়েছে। ডিমের যা দাম আছে তাতে কমার সম্ভাবনা নাই, তবে বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আমরা পিস প্রতি মাত্র ২০ পয়সা লাভে ডিম বিক্রি করি। কিন্তু খামারিদের অধিকাংশ সময় লসেই বিক্রি করতে হয়। তাই ভবিষ্যতে ডিমের বাজার খুব খারাপ হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে।
ডিমের দাম কমতে পারে কিনা জানতে চাইলে রাজশাহী পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক এনামুল হক বলেন, প্রতি হালি লাল ডিম বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকায়, সাদা ডিম ৩৬ টাকা ও হাঁসের ডিম ৪৬ টাকা, দেশি মুরগির ডিম ৫৫ টাকা হালি দরে বিক্রি করছি। বাজারে মালের (ডিম) টান পড়লে দাম বাড়ে। আবার ক্রেতা কমে গেলে বা চাহিদা না থাকলে দাম কমে যায়। তবে চাহিদা কম-বেশি হলেও এবার ডিমের দাম আর কমার সম্ভাবনা নেই।
জাগো নিউজের কথা হয় রাজশাহী ডিম আড়ৎ সমিতির সভাপতি জয়নাল আবেদীনের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘ডিমের দাম নির্ধারণ হয় ঢাকা থেকে। আমাদের রেট জানিয়ে দেওয়া হয়। সে অনুযায়ী আমরা আবার রাজশাহীর স্থানীয় বাজারে একটি রেট দিই। ঢাকায় ডিমের দাম বাড়লে এখানেও বাড়বে। ঢাকায় কমলে এখানে কমবে। সেক্ষেত্রে আমাদের কিছু করার নাই।
রাজশাহী জেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগের কর্মকর্তা জুলফিকার আলী বলছেন, প্রান্তিক পর্যায়ে পোল্ট্রি খামারিদের অবস্থা খুবই ভয়াবহ।
কারণ হিসেবে তিনি বলেন, প্রতি বছর ফিড কোম্পানিগুলো মুরগির খাবার ও ওষুধের দাম বাড়াচ্ছে। সেই তুলনায় ডিমের দাম বাড়েনি। ৬ মাসের মধ্যে কয়েক দফায় মুরগির খাবারের দাম বেড়েছে যা অযৌক্তিক। এসব কারণে ডিমের বাজারেও অন্যান্য পণ্যের মতো অস্থিরতা বিরাজ করছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
এফএ/এমএস