‘আগে ১০০ টাকা আয়েও সংসার চলতো, এখন হাজারে হিমশিম’
‘২৫ বছর ধরে আমি কর্মকার পেশার সঙ্গে জড়িত। ১৫ বছর আগেও দৈনিক ১০০ থেকে ২০০ টাকা ইনকাম হলেও বেশ সংসার চলতো। এখন দৈনিক ৫০০ থেকে ১০০০ টাকা ইনকাম করেও সংসার চলছে না। নিত্যপণ্যের দাম বেড়েই চলছে। ৮০০ টাকা কেজি খাসির মাংস, এক লিটার সয়াবিন তেল ২০০ টাকায় কিনতে হচ্ছে।’
কথাগুলো বলছিলেন গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলার বোনারপাড়া ইউনিয়নের শিমুল তাইড় গ্রামের পরিমল চন্দ্র মোহন্ত কর্মকার।
তিনি জানান, কর্মকারদের এখন দুর্দিন চলছে। বাণিজ্যিকভাবেই এখন দা, কুড়াল, খন্তা, কাস্তে, কোদালসহ লোহাজাত বিভিন্ন পণ্য তৈরি হওয়ায় লোকজন এখন কর্মকারদের কাছে কম আসছেন। এতে তাদের কাজও কমে গেছে। অন্যদিকে লাগামহীনভাবে বাড়ছে নিত্যপণ্যের দাম। সবমিলিয়ে সংসার চালাতে তাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে।
ছেলেমেয়েদের লেখাপড়ার খরচ চালানোসহ গত ২০ বছর সংসার বেশ ভালোই চলছিল পরিমল কর্মকারের। কিন্তু গত পাঁচ বছর থেকে সংসারের সুদিন আসছে না। যা আয় হয় তা দিয়ে ছেলেমেয়ের লেখাপড়ার খরচসহ সংসার চালাতে অনেকটা হিমশিম খেতে হচ্ছে। সারাদিন যা আয় হয় তা দিয়ে বাজার খরচ করার পর শূন্য পকেটে বাড়ি ফিরতে হয়।
‘বাঁচার তাগিদে আমরা এখনো এই পেশায় জড়িয়ে আছি’ বললেন দলদলিয়া গ্রামের মানিক কর্মকার। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, খন একজন কৃষক দিন গেলে ৫০০ টাকা ইনকাম করে। আমরা আগুনে লোহা গরম করে অনেক খাটুনির পরও ৫০০ টাকা ইনকাম করা কষ্টসাধ্য হয়ে যায়। আগে একটা কাস্তে বিক্রি হতো ২০ টাকা। এখন ১০০ টাকায় বিক্রি করেও মনে তৃপ্তি পাই না। ২০ টাকা দিয়ে আগে যা যা মিলতো এখন ১০০ টাকাতেও মিলছে না।’
গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার মহিমাগঞ্জ ইউনিয়নের সুশীল কর্মকার জাগো নিউজকে বললেন, ‘এ পেশাটি আর বেশিদিন চলবে না। কারণ আধুনিকতার ছোঁয়ায় আমাদের তৈরি পণ্যগুলোর সঠিক দাম পাচ্ছি না। তাই আমরা দিন দিন ভিন্ন পেশায় জড়িয়ে যেতে বাধ্য হচ্ছি।’
ফুলছড়ি উপজেলার কামারপাড়া গ্রামের বাসিন্দা কর্মকার রতন। তিনি বলেন, ‘আগে যেভাবে এ পেশাটিকে জীবিকার মাধ্যম হিসেবে চালিয়েছি তাতে সংসার বেশ ভালোই চলতো। তবে গত দুই বছরের করোনোর ধকল আর যন্ত্রপাতির সঠিক দাম না মেলায় যা ইনকাম হয় তা দিয়ে সংসার চলানো তো দূরের কথা, তিনবেলা ডাল-ভাত জুটবে না।’
প্রায় একই কথা বললেন জীবন কুমার কর্মকার। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘বছরতিনেক আগে ধান কাটার সময় কাস্তে বিক্রির ধুম চেপে যেতো। রাত জেগে কাস্তে তৈরি করতে হতো। ধানকাটার মেশিন আসার পর কাস্তের চাহিদা কমে গেছে। এভাবে ইলেকট্রিক অনেক পণ্য আসার পর কর্মকারদের ব্যবসায় লাল বাতি জ্বলেছে।’
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুঠির শিল্প করপোরেশন (বিসিক) গাইবান্ধার সহকারী মহাব্যবস্থাপক রবীন চন্দ্র রায় জাগো নিউজকে বলেন, কামারদের জন্য বিসিক থেকে সহজ শর্তে ঋণ দেওয়ার সুযোগ আছে। কেউ চাইলে ঋণ নিতে পারবেন।
তিনি আরও বলেন, ‘আধুনিকতার ছোঁয়ায় শিল্পটি হারিয়ে যেতে বসেছে। তবে এমন পরিস্থিতি থেকে বের হতে এরই মধ্যে জেলার বিভিন্ন এলাকার কামাররা তাদের সরঞ্জাম তৈরিতে ইলেকট্রিক মেশিন ব্যবহার করছেন। শিল্পটি বাঁচাতে আমরা ভাবছি।’
এসআর/এএসএম