ঈদের দিনে কাঙ্ক্ষিত সেবা পেয়ে সন্তুষ্ট রামেকের রোগীরা
উত্তরবঙ্গে চিকিৎসা সেবায় সকলের আস্থার জায়গা রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতাল। তবে গত ৩০ তারিখ থেকে এ হাসপাতালটিতে কমেছে রোগীর সংখ্যা। রোগীর সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কমলেও ঈদের দিনে রোগীরা পাচ্ছেন কাঙ্ক্ষিত সেবা ও উন্নত খাবার।
মঙ্গলবার (৩ মে) দুপুরের দিকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ড ঘুরে এসব চিত্রের দেখা মিলেছে।
রামেকের নার্সিং সুপারভাইজারের দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, রামেক হাসপাতালে সোমবার সকাল ৯টা থেকে মঙ্গলবার সকাল ৯টা পর্যন্ত মোট রোগী রয়েছে ৯১৮টি। গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে বিভিন্ন ওয়ার্ডে ভর্তি হয়েছে ৩৪১ জন। অপরদিকে হাসপাতাল ছেড়েছেন ২৮৭ জন এবং মারা গেছেন ২২ জন।
তবে মঙ্গলবার (৩ মে) অর্থাৎ ঈদের দিন এই সংখ্যাটি আরও কমে এসেছে বলে জানিয়েছেন ওই দপ্তরের কর্মরত সিনিয়র স্টাফ নার্স সুষ্মিতা রায়।
তিনি জাগো নিউজকে জানান, সাধারণত প্রায় আড়াই থেকে তিন হাজার রোগী রামেক হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসেবা নিয়ে থাকেন। কিন্তু ঈদের দিন বলেই আজ রোগীর সংখ্যা খুব কম।
সরেজমিনে দেখা গেছে, রাজশাহী মেডিকেলের ইমারজেন্সিতে আসা রোগীকে সেবা দিচ্ছেন সিনিয়র স্টাফ নার্স। রেজিস্ট্রার খাতায় রোগীর প্রয়োজনীয় তথ্য লিপিবদ্ধসহ তাদের কাঙ্ক্ষিত সেবা প্রদান করছেন। ভেতরে রয়েছে মেডিকেল অফিসার। দুর্ঘটনাসহ যেকোনো রোগীকে তাৎক্ষণিক চিকিৎসা দিচ্ছেন তিনিও। শুধু তাই নয়, রোগীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে সার্বক্ষণিক রামেক হাসপাতালে নিয়োজিত রয়েছে আনসার বাহিনী। তারা সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করণের পাশাপাশি রামেকে রাস্তায় যানজট দূরীকরণেও কাজ করছেন।
এদিকে রামেকের নিউরোমেডিসিন ওয়ার্ডে ঘুরে দেখা গেছে, সেখানে রয়েছে মাত্র ছয়জন রোগী। বাকি সবগুলো শয্যাই পড়ে রয়েছে ফাঁকা। ওই ওয়ার্ডে দায়িত্ব পালন করছেন একজন সিনিয়র নার্স। পরিবারের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করে না নিয়ে কর্মব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন রোগীদের সঙ্গে। ঈদের দিনেও তিনি রোগীদের ব্যবস্থাপত্র দেখে চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলে রোগীদের দিচ্ছেন কাঙ্ক্ষিত সেবা। এমনকি করছেন প্রয়োজনীয় সহায়তা।
রাজশাহীর গোদাগাড়ীর বাসিন্দা ফরমান আলী। পেশায় কৃষক। সপ্তাহ খানেক আগে তার স্ত্রী জাহানারা খাতুন স্ট্রোক করেন। বর্তমানে স্ত্রী জাহানারা সেবা নিচ্ছেন রামেক হাসপাতালের নিউরো মেডিসিন বিভাগে। আর তাই এক প্রকার বাধ্য হয়েই ঈদের দিন ছোট ছেলে মিঠুকে নিয়ে কাটাতে হচ্ছে হাসপাতালে।
ফরমান আলী বলেন, আজ এক সপ্তাহ যাবত হাসপাতালে আছি। তবে গত দুদিন যাবত চিকিৎসক আসেননি। কিন্তু আমি আমার রোগীর কোনো প্রকারের সমস্যা হলেই নার্সকে ডেকে সঙ্গে সঙ্গেই সহযোগিতা পেয়েছি।
ঈদে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের তরফ থেকে উন্নত খাবার পেয়েছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, অন্যান্য দিনের চাইতে আজ ভালো খাবারই দেওয়া হয়েছিল। পোলাও, গরুর গোস্ত, মিষ্টি, দই এসব দিয়েছিলেন খেতে। অন্যান্য দিনও ভালোই খাবার দেয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
একই ওয়ার্ডে ভর্তি রয়েছেন তানোর মুন্ডুমালার আয়েশ উদ্দিন নামের ৭০ বছরের বৃদ্ধ। ভর্তি হয়েছেন চলতি বছরের ২৮ এপ্রিল। তিনিও হঠাৎ স্ট্রোক করেছিলেন।
তার পাশেই বসেছিলেন নাতি সম্রাট হোসেন। তিনি বলেন, ঈদের দিন অনেক চিকিৎসকই ছুটিতে আছেন। তবে একজন নার্স এখানে সবর্দাই থাকেন। প্রয়োজনে ডাকলে তারা সাড়া দেন। সেক্ষেত্রে তেমন সমস্যা খুব একটা হয় না।
নিউরো মেডিসিন বিভাগে কর্মরত নার্স মোসা. রুপালি খাতুন বলেন, ঈদের দিন হলেও আমাদের নিয়ম মতো ডিউটি করতে হয়। দিতে হয় রোগীদের কাঙ্ক্ষিত সেবা। তবে ঈদের দুটো দিন চিকিৎসকরা ছুটিতে থাকেন। তবে খুব জরুরি প্রয়োজন হলে ফোন করলে যারা আশপাশে থাকেন, তারা চলে আসেন। আবার যারা দূরে থাকেন তারা মোবাইলের মাধ্যমে ব্যবস্থাপত্র লিখিত ঔষধের বিবরণ শুনে সেবা দিয়ে থাকেন। এতে করে সেবাভোগী রোগীদের কোনো প্রকার সমস্যা হয় না।
অন্যদিকে ঈদের আনন্দ উপেক্ষা করে ইমারজেন্সি বিভাগে কর্মরত সিনিয়র স্টাফ নার্স উজ্জল হোসেন খান। তিনি বলেন, যে রোগীই আসছেন, সেবা পাচ্ছেন। কিন্তু ঈদের দিন বেশি রোগী হাসপাতালে আসছে না। এখন রোগী বেশি আসছে সড়ক দুর্ঘটনা এবং মারামারি জনিত ঘটনাকেন্দ্রিক রোগী। এছাড়া আগের চাইতে চার ভাগের এক ভাগ রোগী রয়েছে হাসপাতালে।
এ প্রসঙ্গে রামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানী বলেন, ঈদকে কেন্দ্র করে চিকিৎসক যেমন হাসপাতালে কম তেমনি রোগীও কম। মূলত গুরুতর সমস্যা না থাকলে রোগীরা ঈদের দিন ও তার পরের দিন হাসপাতালে থাকে না। বাড়ি চলে যান। পরে আবার আসেন। কিন্তু হাসপাতালে চিকিৎসক না থাকলেও প্রয়োজনে কল দিলেই তাদের পাওয়া যায়। সেজন্য স্বল্প রোগীকে চিকিৎসা সেবা প্রদান করাটা খুব একটা দুরহ ব্যাপার নয়।
ঈদের দিন উন্নত খাবার দেওয়ার ব্যাপারে তিনি বলেন, বিশেষ দিনগুলোতে সরকার থেকেই একটা নির্দেশনা থেকে থাকে যে রোগীদেরকে ভালো খাবার প্রদান করতে হবে। ঈদের দিন তারা যেমন বাড়িতে দই, মিষ্টি, গরু-খাসির গোস্ত ও পোলাও খেয়ে থাকেন, এখানেও তেমন খাবার প্রদানের ব্যবস্থা করা হয়। এগুলো তাদের প্রাপ্য।
এফএ/জেআইএম