ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

প্রায় দিনই ক্ষুধায় কাঁদতে কাঁদতে ঘুমায় চান মিয়ার মেয়েরা

জেলা প্রতিনিধি | ভোলা | প্রকাশিত: ১২:৩১ পিএম, ২৭ এপ্রিল ২০২২

‘আমরা স্বামী-স্ত্রী ক্ষুধার জ্বালা সহ্য করতে পারলেও ছোট ছোট দুই মেয়ে তা পারে না। মাঝে মধ্যে ঘরে চাল না থাকলে রান্না করতে পারি না। মেয়েদের মুখে খাবারও তুলে দিতে পারি না। মেয়েরা ভাত চাইলে শুধু চোখের পানি ফেলি। আর বলি বাবা চাল নিয়ে এলে রান্না করে দেবো। মেয়েরা অপেক্ষা করে কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে পড়ে।’

কথাগুলো বলছিলেন ভোলার তজুমদ্দিন উপজেলার চাঁদপুর ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের মাহারকান্দি গ্রামের রিকশাচালক মো. চান মিয়ার স্ত্রী ইয়ানুর বেগম। এক মেয়ের বিয়ে দিতে পরিবারের আয়ের একমাত্র উৎস অটোরিকশাটি বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছেন চান মিয়া। এখন ছোট ছোট মেয়েদের নিয়ে না খেয়ে জীবন কাটাতে হচ্ছে তাদের।

চান মিয়ার বাবা মো. বশির মিয়া ছিলেন দিনমজুর। সংসারে অসচ্ছলতার কারণে পড়াশুনা করতে পারেননি চান মিয়া। ছোটকাল থেকেই রিকশা চালাতে শুরু করেন। সেই থেকে এখন পর্যন্ত রিকশা চালাচ্ছেন তিনি। সবার ভাগ্য পরিবর্তন হলেও হয়নি চাঁন মিয়ার।

নিজের কোনো জমি কিংবা ঘরও নেই। ভাইদের জমিতে কোনো রকম ঘর তুলে বাস করেন। সেই ঘরেরও জরাজীর্ণ অবস্থা। বর্ষকালে ঘরের চাল দিয়ে পানি পড়ে।

মো. চান মিয়া জানান, ১৯৯৯ সালে তিনি বিয়ে করেন। সেই ঘরে দুই কন্যা সন্তান জন্মগ্রহণ করে। সংসারে অভাব থাকলেও শান্তি ছিলো তাদের। ২০০৭ সালে টাকার অভাবে বিনা চিকিৎসায় স্ত্রী হাজেরা খাতুন মারা যান। তখন তার বড় মেয়ে ফরিদা বেগমের বয়স ৫ বছর ও ছোট মেয়ে রুনার বয়স মাত্র দেড় বছর।

সন্তানদের লালন পালন করতে স্থানীয়দের কথামতো দ্বিতীয় স্ত্রী ইয়ানুর বেগমকে বিয়ে করেন। সে ঘরেও তিন মেয়ে জন্মগ্রহণ করেন। কিন্তু টাকার অভাবে কোনো মেয়েকেই পড়াশুনা করাতে পারেননি তিনি।

তিনি আরো জানান, বিভিন্ন এনজিও থেকে ঋণ ও স্থানীয়দের সহযোগিতা নিয়ে ২০১৮ সালে বড় মেয়ে ফরিদা বেগমকে বিয়ে দেন। এরপর অনেক কষ্ট করে এনজিওর ঋণ পরিশোধ করেন। এ বছর জানুয়ারি মাসের শেষের দিকে দ্বিতীয় মেয়ে রুনা বেগমের বিয়ে দিতে দুটি এনজিও থেকে ৬০ হাজার করে মোট ১ লাখ ২০ হাজার টাকা ঋণ নেন। ছেলের অবস্থা একটু ভালো হওয়ায় তাদের চাহিদাও থাকে বেশি। তাই তাদের চাহিদা পূরণ করতে পরে বাধ্য হয়ে নিজের একমাত্র আয়ের উৎস আটোরিকশাটি ৩৮ হাজার টাকায় বিক্রি করে দেন। এরপর জামাইকে নগদ এক লাখ টাকা ও ঘরের জন্য আসবাবপত্র কিনে মেয়েকে শ্বশুরবাড়ি পাঠান।

কিন্তু বর্তমানে আয়ের কোনো পথ না থাকায় গত চার মাস ধরে এনজিওর কিস্তির টাকা পরিশোধ করতে পারেন না। এমনকি ঘরে স্ত্রী ও ছোট ছোট তিন মেয়েকে ঠিকমতো খাবারও দিতে পারেন না।
তিনি বলেন, একটি ভাড়ায় চালিত অটোরিকশা চালাই। কিন্তু মালিককে জমা দিয়ে কিস্তির টাকা পরিশোধ করাতো দূরের কথা স্ত্রী-সন্তানদের ঠিকমতো খাবারও দিতে পারি না। এমন দিন যায় না খেয়ে থাকি আমরা সবাই। এ অবস্থায় যদি প্রধানমন্ত্রী আমার জন্য কোনো সহযোগিতা করেন তাহলে সারাজীবন তার কাছে কৃতজ্ঞ থাকবো। এছাড়াও তিনি সমাজের বৃত্তবানদের কাছে সাহায্যের জন্য অনুরোধ করেন।

তজুমদ্দিন উপজেলার প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. রাশেদ খান জাগো নিউজকে জানান, বিষয়টি তিনি জানেন না। কেউ কখনো তাকে বলেনি। তিনি খোঁজ খবর নেবেন এবং চান মিয়াকে সরকারিভাবে সহযোগিতা করবেন বলে আশ্বাস দেন।

তজুমদ্দিন উপজেলার সমাজসেবা কর্মকর্তা মো. সিদ্দিকুর রহমান জানান, চান মিয়ার বিষয়ে খোঁজ নেওয়া হচ্ছে। যদি তার বয়স হয় তাহলে তাকে বয়স্ক ভাতার ব্যবস্থা করে দেওয়া হবে।

জুয়েল সাহা বিকাশ/এফএ/এমএস