‘আমাগো ঈদ নদীতে গেছে’
চার বিঘা জমিতে বোরো আবাদ করেছিলেন কৃষক তোফাজ্জল হোসেন। কিন্তু তার স্বপ্নের সোনালী ধান ঘরে তোলার আগেই ভাঙনের মুখে পড়েছে জমি। কাঁচা ধানসহ ক্ষেতের বেশিরভাগ অংশ বিলীন হয়েছে যমুনায়। তাই অবশিষ্ট কাঁচা ধান কেটে নিচ্ছেন। শুধু ফসলি জমি নয়, ভাঙনের মুখে পড়েছে তার বসতভিটাও।
ঈদের মাত্র কয়েকদিন আগে যমুনা নদীর এমন ভাঙনের মুখে পড়ে দিশেহারা মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলার তেওতা ইউনিয়নের আলোকদিয়া চরের বাসিন্দা তোফাজ্জল হোসেন। তাই আক্ষেপ করে তিনি বললেন, ‘আমাগো এবারের ঈদ নদীতে গেছে।’
কৃষক তোফাজ্জল হোসেনের মতো যমুনা পাড়ে বিঘার পর বিঘা জমির ধানক্ষেতসহ বিভিন্ন ফসলি জমি বিলীন হয়েছে। যে জমির ফসলে সারা বছরের খাবার জুটতো সেই ফসলি জমি হারিয়ে নদীপাড়ে বসে চোখের পানি ফেলছেন অনেকে। ভাঙনে বিলীন হয়েছে অনেকের বসতভিটা, মসজিদসহ বহু স্থাপনা। বর্ষার আগে এমন ভাঙনে দিশেহারা ক্ষতিগ্রস্ত মানুষগুলো।
স্থানীয়রা জানান, এক সপ্তাহ ধরে আলোকদিয়া চর এলাকায় যমুনার ভাঙন তীব্র হয়েছে। ভাঙন যখন শুরু হয় তখন নদীপাড়ের আধা বিঘা থেকে এক বিঘা পর্যন্ত জমি দেবে যায়। বর্ষার আগে এমন ভয়াবহ ভাঙন আগে কখনো দেখেননি তারা।
গৃহবধূ মজিরন বেগম জানান, জোদজমি (ফসলি জমি), ঘর-বাড়ি সবই নদীতে ভেঙে যাচ্ছে। এখন আর বাঁচার মতো কোনো উপায় নাই।
আলোকদিয়া চরের ৯ নম্বর ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা যায়, ভাঙন আতঙ্কে মানুষজন ভিটেমাটি রেখেই ঘর সরিয়ে নিচ্ছেন। ঘোড়ার গাড়িতে টিনের চালাসহ মালামাল তুলে অনেকেই ছুটছেন নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে।
বাড়ি ঘর আর গাছপালার মায়ায় অনেককেই দেখা গেছে চোখের পানি মুছতে। নদী কাছে চলে আসায় ভাঙন আতঙ্কে আলোকদিয়া চরের একমাত্র মসজিদটিও ভেঙে মালামাল অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। মসজিদটি পুনরায় স্থাপন করার জায়গাও খুঁজে পাচ্ছেন না স্থানীয়রা।
নদী ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্তরা জানান, ঈদের এক সপ্তাহ আগে তাদের ঘর বাড়ি আর ফসলি জমি নদীতে গেলো। এখন কোথায় দাঁড়াবেন, কোথায় খাবেন তার কোনো ব্যবস্থা নেই। তাই এবারের ঈদ তাদের জন্য আনন্দের পরিবর্তে বিষাদে পরিণত হয়েছে।
তেওতা ইউনিয়নের আলোকদিয়া ৯ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য মঞ্জু মিয়া জানান, নদীভাঙন যেভাবে শুরু হয়েছে তাতে তার এলাকা আর থাকবে না। তিন কিলোমিটার চরের মধ্যে বর্তমানে এক কিলোমিটার অবশিষ্ট আছে। এছাড়া পার্শ্ববর্তী দৌলতপুর উপজেলার বাঁচামারা এবং বাঘুটিয়া ইউনিয়নের লাখো মানুষের বসবাস চরের মধ্যে। তাই চরে ভাঙন রোধে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান তিনি।
তেওতা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোশারফ হোসেন জানান, আলোকিয়া চরে চলছে মুজিব কেল্লার কাজ। প্রায় সাত কোটি টাকা ব্যয়ে জাইকার অর্থায়নে পাকা রাস্তা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুত বিদ্যুৎ পৌঁছে গেছে ঘরে ঘরে। আছে তিনটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। সরকারের এই উন্নয়ন প্রকল্পগুলো রক্ষা করার জন্য হলেও দ্রুত ভাঙনরোধে স্থায়ী ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান তিনি।
শিবালয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জাহিদুর রহমান জানান, আলোকদিয়া চরের ভাঙনকবলিত এলাকা তিনি সরেজমিন পরিদর্শন করেছেন। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। অবহিত করা হয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ডকেও। তবে ভাঙন রোধে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কোনো উদ্যোগ এখনো চোখে পড়েনি।
তিনি আরও জানান, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে নদী ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরি করে সাহায্য সহযোগিতা প্রদান করা হবে।
এফএ/জেআইএম