ক্রেতার অপেক্ষায় তাঁতপল্লি
দুই বছর করোনা আর লকডাউনের কারণে ঈদ, দুর্গাপূজা ও পহেলা বৈশাখে আশানুরূপ ব্যবসা করতে পারেননি টাঙ্গাইলের ঐতিহ্যবাহী তাঁতশিল্পের মালিকরা। আসন্ন ঈদকে কেন্দ্র করে বিগত দুই বছরের ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার স্বপ্ন দেখছেন তাঁত শ্রমিক ও মালিকরা। তবে এরই মধ্যে ১৫ রমজান পেরিয়ে গেলেও বেচাকেনা বাড়েনি তাঁতের শোরুমগুলোতে। তবে এখনো ক্রেতার অপেক্ষায় রয়েছেন দোকান মালিক ও কর্মচারীরা।
সারা বছরে দুই ঈদ, দুর্গাপূজা ও পহেলা বৈশাখের জন্য অপেক্ষা করেন টাঙ্গাইলের ঐতিহ্যবাহী তাঁতশিল্পে জড়িত মালিক-শ্রমিকরা। এই উৎসবগুলোই তাদের ব্যবসায়িক লাভের প্রধান উৎস। কিন্তু করোনা ও লকডাউনের কারণে গত দুই বছর বন্ধ ছিল বেশিরভাগ তাঁত। সেজন্য ব্যবসাও হয়নি আশানুরূপ। উল্টো গুনতে হয়েছে লোকসান। তবে ক্ষতি পুষিয়ে নিতে ঈদকে উপলক্ষ্য করেছেন এ শিল্পে সংশ্লিষ্টরা।
টাঙ্গাইলের তাঁতশিল্পের শাড়ি, লুঙ্গি, গামছা, চাদর সারা বছরই কমবেশি বেচাকেনা হয়। তাঁতশিল্পের পণ্যের বেশিরভাগ পাইকারি ক্রেতারাই সড়কপথে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে এসে কাপড়ের হাট থেকে কিনে বাজারজাত করেন। জেলার করটিয়া, বাজিতপুর, পাথরাইল, বল্লা, রামপুর, জোকারচর হাট মূলত কাপড়ের জন্য পরিচিত।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জেলায় প্রায় ৬০ শতাংশ তাঁত কমে গেছে। তারপরও টাঙ্গাইল সদর উপজেলার ধুলটিয়া,বাজিতপুর, সুরুজ, বার্থা, বামনকুশিয়া, তারটিয়া; দেলদুয়ার উপজেলার পাথরাইল, চন্ডি, নলুয়া, দেওজান, নলশোধা, বিষ্ণুপুর, মঙ্গলহোড় এবং কালিহাতী উপজেলার বল্লা-রামপুর গ্রামে সচল রয়েছে। প্রতিযোগিতার বাজারে টিকে থাকতে তাঁতপল্লিতে তৈরি হচ্ছে মনোমুগ্ধকর হাইব্রিড, সুতি ও সিল্ক জামদানি, বালুচুরি, ধানসিঁড়ি, আনারকলি, শফট সিল্ক, রেশম, তশর, কাতান, একতারি ও দোতারি টাঙ্গাইল শাড়ি।
পাথরাইলের তাঁতশ্রমিক যতীন রায় জাগো নিউজকে বলেন, তিনি শফট সিল্ক শাড়ি তৈরি করছেন। সপ্তাহের মাত্র দুটি শাড়ি তৈরি করতে পারেন। প্রতিটি শাড়ি তৈরির মজুরি দেওয়া হয় ৯০০ টাকা। এ দিয়েই তাকে কোনো রকমে চলতে হয়।
টাঙ্গাইল কুটিরের বিক্রেতা সোহান বলেন, ‘বেচাকেনা একদমই কম। এতে লাভ তো দূরের কথা লোকসান হওয়ার আশঙ্কাই বেশি।’
তীব্র গরম আর দাম বাড়ার কারণে তাঁতপল্লীতে ক্রেতাশূন্যতা দেখা দিয়েছে বলে মন্তব্য করেন টাঙ্গাইল কুটিরের মালিকের ছেলে জুনায়েদ হোসেন আমান।
তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘আগে যেখানে মানুষ পাঁচবারে পাঁচটি শাড়ি কিনতেন, সেখানে এখন কিনছেন একটা। আগে পাঁচবার আসতেন, এখন আসছেন একবার। এ কারণে ক্রেতাশূন্যতা দেখা দিয়েছে।’
শাড়িবিক্রেতা আলমগীর জানান, টাঙ্গাইলের তাঁতের শাড়ি হাতে তৈরি হয়। এ কারণে শ্রমিক মজুরি একটু বেশি। এছাড়া সুতা ও প্রয়োজনীয় উপকরণের দাম বেশি হওয়ায় শাড়ির দামও বেড়েছে।
এক পর্যায়ে তিনি বলেন, ‘শাড়ির দাম বেশি আর কম যাই হোক না কেন, দোকানে তো ক্রেতাই আসছেন না।’
সীমান্ত ট্রেডার্সের ম্যানেজার গৌড় বসাক বলেন, ‘রোজা শুরুর পর থেকে বেচাবিক্রি একদম কমে গেছে। আজ সারাদিন গেলেও এখন পর্যন্ত কোনো বউনি বাট্টাই (দিনের প্রথম বিক্রি) হয়নি। রাস্তার দিকে নজর দিলে তো দেখা যাচ্ছে ক্রেতা নেই।’
শাড়ির পরিবর্তে জামা, থ্রি-পিসসহ বিভিন্ন ধরনের পোশাক ব্যবহার শুরু করায় শাড়ির ক্রেতা কমে গেছে বলে ধারণা করছেন তিনি।
গৌড় বসাক জানান, পাথরাইলেই সীমান্ত ট্রেডার্সের ৪০ থেকে ৫০টি তাঁত ছিল। এখন নামমাত্র কয়েকটি তাঁত চলছে। আর পাথরাইল এলাকার ২০০ থেকে ৩০০ তাঁতের মধ্যে চলছে মাত্র ৫০ থেকে ৬০টি।
এ বিষয়ে টাঙ্গাইল শাড়ির রাজধানী হিসেবে পরিচিত পাথরাইলের শাড়ি ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি ও যজ্ঞেশ্বর অ্যান্ড কোংয়ের মালিক রঘুনাথ বসাক জাগো নিউজকে বলেন, ‘গেল দুই বছর সঞ্চিত টাকায় সংসার চালানোয় সাধারণ মানুষের অর্থনৈতিক সংকট দেখা দিয়েছে। যার প্রভাব পরেছে ব্যবসা-বাণিজ্যে। এ কারণে ক্রেতাশূন্য হয়ে পড়েছে তাঁতপল্লি।’
এসআর/এএসএম