নীলফামারীর পাগলীমার হাটে প্রতিদিন কোটি টাকার মরিচ বিক্রি
মরিচের জন্য বিখ্যাত নীলফামারীর ডোমার উপজেলার পাগলীমার হাট। ভোর থেকে বিকেল পর্যন্ত সেখানে চলে মরিচ কেনাবেচা। হাটে প্রতিদিন প্রায় ৫ থেকে ৬ হাজার মণ মরিচ বিক্রি হয় যার মূল্য প্রায় কোটি টাকার মতো।
মরিচের মৌসুমে বছরে প্রায় চার মাস এই হাটটি বসে। তখন সপ্তাহের সাতদিনই চলে মরিচের কেনাবেচা। চট্টগ্রাম, ঢাকা, নওগাঁ ও খুলনা থেকে পাইকরা এই হাটে এসে মরিচ কিনে নিয়ে যান।
উপজেলার পাঙ্গা মটুকপুর ইউনিয়নের মুছার মোড় এলাকায় পাগলীমার হাটের অবস্থান। এই মরিচের হাটে ডোমার, ডিমলা, চিলাহাটি ও জলঢাকা উপজেলা ছাড়াও পাশের এলাকা থেকে শতশত চাষি তাদের উৎপাদিত মরিচ নিয়ে এসে বিক্রি করেন। শুধু মরিচ ব্যবসাকে কেন্দ্র করেই গড়ে ওঠা এই পাগলীমার হাটে রয়েছে প্রায় শতাধিক আড়ত। দূর-দূরান্তের ক্রেতা-বিক্রেতার পদচারণায় মুখর থাকে এসব আড়ত।
হাটে আসা ডিমলা উপজেলার নাউতারা এলাকার নুর মোহাম্মদ নামে এক মরিচ চাষি বলেন, গত কয়েকদিনের তুলনায় মরিচের দাম কিছুটা কম। দুইদিন আগে যে মরিচ ১ হাজার ৭০০ টাকা মণ বিক্রি করছি এখন তা ১ হাজার ৫০০ টাকা।
তিনি আরও বলেন, ১১ শতক জমিতে মরিচের চাষ করেছি। আবহাওয়া ভালো থাকলে আষাঢ় মাস পর্যন্ত মরিচ বিক্রি করতে পারবো।
নয়ন নামে আরেক মরিচ চাষি বলেন, তিনি কার্তিক মাসে জিরা ও সাপ্লাই নামে দুই জাতের মরিচের গাছ লাগিয়েছিলেন। মার্চ মাস থেকে মরিচ তোলা শুরু করেছেন। প্রথম দিকে জিরা মরিচ ১ হাজার ৭০০ ও সাপ্লাই মরিচ ১ হাজার ৬০০ টাকা দরে বিক্রি করলেও দিনদিন দাম কমছে।
হাটের ইজারাদার সফিকুল ইসলাম বলেন, আমি পাঙ্গা পীর সাহেবের হাট ইজারা নিয়েছি। সেখানে জায়গা না হওয়ায় কাঁচাবাজারটি এই হাটে নিয়ে এসেছি। প্রতিদিন এখানে মরিচের হাট বসে। হাটে প্রতিদিন প্রায় ৫ থেকে ৬ হাজার মণ মরিচ বিক্রি হয়।
তিনি আরও বলেন, আর এই মরিচের হাটের কারণে ছোট-বড় প্রায় দুই শতাধিক বিভিন্ন পণ্যের দোকান বসে এখানে।
হাটে মাছের দোকানি আমিনুর বলেন, এই হাটে মাত্র চার মাস আমরা ব্যবসা করে থাকি। মরিচ শেষ হলে হাটটি জনশূন্য হয়ে পড়ে ফলে বিক্রি কমে যায়। আমরা এই চার মাসের আয় দিয়ে ১২ মাস চলি।
পাঙ্গা মটুকপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. দুলাল হোসেন জানান, প্রতিদিন এখানে মরিচের হাট বসে। এই মরিচকে কেন্দ্র করেই গড়ে উঠেছে পাগলীমার হাট। দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ মরিচ কেনার জন্য এই হাটে এসে অন্যান্য পণ্যও কিনে নিয়ে যান।
হাটের এক আড়তদার নয়ন বলেন, এখান থেকে মরিচ কিনে চট্টগ্রামে নিয়ে বিক্রি করা হয়। পাগলীমার হাটের মরিচ চট্টগ্রামে খুবই জনপ্রিয় বলে তিনি জানান।
আরেক আড়তদার নেয়ামুল জানান, এখান থেকে মরিচ কিনে ট্রাকে করে খুলনায় নিয়ে যাওয়া হয়। আমদানির ওপর নির্ভর করে মরিচের চাহিদা। তারপরও প্রতিদিন তিন-চার ট্রাক করে মরিচ খুলনায় নিয়ে যাওয়া হয়।
এই হাট থেকে প্রতিদিন প্রায় ২০ ট্রাক মরিচ দেশের বিভিন্ন জায়গায় যায় বলে জানিয়েছেন আড়তদার তাজুল ইসলাম। তিনি বলেন, ভোরে হাটে এসে মরিচ কিনে সন্ধ্যায় ট্রাকে করে রাজশাহীতে মরিচ পাঠানো হয়।
ডোমার উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মো. আনিছুজ্জামান জানিয়েছেন, উপজেলায় ৭৫০ হেক্টর জমিতে মরিচের আবাদ হয়েছে। এবার ফলন ও দাম ভালো থাকায় মরিচ বিক্রি করে চাষিরা লাভবান হবেন।
এমআরআর/এএসএম