ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

সাতক্ষীরায় বাড়ছে লবণসহিষ্ণু ধানের চাষ

আহসানুর রহমান রাজিব | প্রকাশিত: ১০:৪৪ এএম, ০৭ এপ্রিল ২০২২

জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে গেলো কয়েক বছর ধরে একের পর এক ঘূর্ণিঝড়ের আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সাতক্ষীরার উপকূলীয় এলাকার বেড়িবাঁধ। ফলে বার বার বাঁধ ভেঙে লবণ পানি প্রবেশ করেছে ফসলি জমিতে। তবে সেসব প্রতিকূলতার মাঝে কৃষকদের আশা জাগিয়েছে বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিনা) উদ্ভাবিত লবণসহিষ্ণু কয়েকটি জাতের ধান। এই ধানের চাষ করে ভালো ফলন পেয়েছেন উপকূলের কৃষকরা।

কৃষিবিভাগ বলছে, সাতক্ষীরার সাত উপজেলার মধ্যে ৫টি উপজেলার ফসলি জমিতে লবণাক্ততা বাড়ছে। তবে শ্যামনগর ও আশাশুনি এলাকার ফসলি জমিতে উচ্চমাত্রায় লবণ রয়েছে। এসব উপজেলায় উচ্চমাত্রার লবণসহিষ্ণু বিনা-৮ ও ১০ জাতের ধান আবাদ করে ভালো ফলন পাওয়া যাচ্ছে। এছাড়া পুরো জেলায় স্বল্পমাত্রার লবণসহিষ্ণু জাতের ধানের আবাদ বাড়ছে।

jagonews24

কৃষকরা বলছেন, লবণসহিষ্ণু জাতের ধান চাষে ভালো ফসল ফলছে। তবে সঠিক সময়ে প্রয়োজনীয় বীজ না পাওয়ায় অনেক কৃষক ধানচাষ করতে পারছেন না।

শ্যামনগর উপজেলার গাবুরা ইউনিয়নের কৃষক রবিউল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, সুন্দরবন সংলগ্ন নদীতে এখন উজান থেকে মিষ্টি পানির কোনো প্রবাহ নেই। কিছু এলাকায় অপরিকল্পিতভাবে লবণপানি তুলে মাছচাষ করা হয়। এছাড়া ২০০৯ সালে ঘূর্ণিঝড় আইলার পর বেড়িবাঁধ ভেঙে বিস্তীর্ণ উপকূলীয় এলাকায় লবণপানি প্রবেশ করে। এতে আমাদের ইউনিয়নের অধিকাংশ ফসলি জমিতে লবণাক্ততা ছড়িয়ে পড়ে। তবে এখন নতুন করে কিছু এলাকায় লবণ সহনশীল জাতের ধানের চাষ হচ্ছে। ফলনও ভালো।

jagonews24

শ্যামনগর উপজেলার আটুলিয়া গ্রামের কৃষক অশোক কুমার মন্ডল জাগো নিউজকে বলেন, আমাদের এলাকার অধিকাংশ জমি উচ্চমাত্রায় লবণাক্ত। এখানকার বেশিরভাগ জমিতে লবণপানি তুলে চিংড়ি চাষ করা হয়। প্রায় ২০ বছর পর আমি এ বছরই প্রথম মাছের ঘের শুকিয়ে লবণসহিষ্ণু বিনা-১০ জাতের ধানচাষ করেছি। আশা করছি বিঘাপ্রতি ১৫ থেকে ২০ মণ ধান পাবো।

আশাশুনি উপজেলার কুল্ল্যা গ্রামের কৃষক আক্তার হোসেন জানান, চলতি মৌসুমে ৪০ বিঘা জমিতে লবণসহিষ্ণু জাতের ধান আবাদ করেছি। গত মৌসুমে এ জাতের ধান চাষ করে বিঘা প্রতি ১৫ থেকে ১৯ মণ পর্যন্ত ধান পেয়েছিলাম। আমাদের এলাকার অনেক কৃষক এখন মাছচাষের সঙ্গে এই জাতের ধান চাষ করে লাভবান হচ্ছে।

jagonews24

বিনা উপকেন্দ্র সাতক্ষীরার ইনচার্জ ড. বাবুল আক্তার জাগো নিউজকে বলেন, সাতক্ষীরা জেলার উপকূলীয় এলাকার ফসলি জমিতে ৮ থেকে ১৪ টিডিএস মাত্রার লবণাক্ততার উপস্থিতি রয়েছে। এ মাত্রার লবণাক্ততার কারণে ফসল উৎপাদন প্রায় অসম্ভব। তবে এসব জমিতেও বিনা-১০ জাতের ধান আবাদ করে ভালো ফলন পাওয়া গেছে। এই ধান ১২ থেকে ১৪ টিডিএস মাত্রা পর্যন্ত লবণ সহ্য করতে পারে।

সাতক্ষীরা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ মো. নুরুল ইসলাম জাগো নিউজকে জানান, চলতি মৌসুমে জেলায় প্রায় ৪ হাজার হেক্টর জমিতে উচ্চমাত্রার লবণসহিষ্ণু জাতের ধানের আবাদ হয়েছে। ফলন ভালো হওয়ায় কৃষকরা লবণসহিষ্ণু জাতের ধানচাষে আগ্রহী হচ্ছেন। জেলা কৃষি বিভাগ থেকে তাদের সব ধরনের সহযোগিতা করা হচ্ছে।

jagonews24

এ বিষয়ে বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিনা) মহাপরিচালক ড. মির্জা মোফাজ্জল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশে ১০ লাখ হেক্টর জমি লবণাক্ত। এসব জমিতে ৮ থেকে ১৪ টিডিএস মাত্রা পর্যন্ত লবণাক্ততা রয়েছে। এর প্রায় ৩০ শতাংশ জমিতে লবণাক্ত সহনশীল বিনা-১০ জাতের ধানের চাষ হচ্ছে।

তিনি বলেন, বিনা-১০ ধান ১২-১৪ ডিএস মাত্রার লবণ সহ্য করতে পারে। আশা করছি আগামীতে এই অঞ্চলে এই ধানের চাষ আরও বাড়বে। আর্থিক সংকটসহ নানা কারণে অনেক প্রান্তিক কৃষক সময়মতো লবণসহিষ্ণু জাতের ধান বীজ সংগ্রহ করতে পারেন না। তাদেরকে বিনার পক্ষ থেকে বীজ সরবারহ করা হবে। এ জন্য স্থানীয় কৃষি বিভাগের মাধ্যমে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে।

এফএ/এএসএম