ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

গরমে বেড়েছে ঝালকাঠির ডাবের কদর

জেলা প্রতিনিধি | ঝালকাঠি | প্রকাশিত: ১২:৫৮ পিএম, ২২ মার্চ ২০২২

চৈত্রের দাবদাহে অতিষ্ঠ প্রাণীকূল। এ সময় সবারই প্রিয় ডাবের পানি। ১২ মাসী ফল হলেও গ্রীষ্মকালে নারিকেলের ফলন বেশি হওয়ায় বাজারে সরবরাহও বেশি দেখা যায়। ঝালকাঠিতে বছরের অন্যান্য সময়ের তুলনায় এ মৌসুমে ডাবের উৎপাদন বেশি হয়। এবার ডাব উৎপাদন বেশি হওয়ায় এই জেলার চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করা হচ্ছে।

খুচরা ক্রেতা মো. সিদ্দিকুর রহমান বলেন, আমরা ডাবের সাইজ অনুযায়ী ৩০-৩৫ টাকা দরে প্রতিটি ডাব ক্রয় করি। গাছে ওঠা ও সরবরাহের পরিশ্রম নিয়ে ৪৫ টাকা করে পাইকারদের কাছে বিক্রি করি। পাইকাররা আমাদের কাছ থেকে ডাব কিনে ট্রাকে করে দেশের বিভিন্ন স্থানে নিয়ে যায়।

পাইকারি ক্রেতা সাইদুল ইসলাম শহিদ বলেন, খুচরা বিক্রেতাদের কাছ থেকে ৪৫ টাকা দরে ক্রয় করে ঢাকা, চট্টগ্রামসহ বড় বড় শহরের মোকামে পৌঁছে দেওয়া পর্যন্ত বহন খরচ ও চাদা দিয়ে প্রতিটি ডাবে ৫০ টাকারও বেশি খরচ পড়ে। আমাদের কাছ থেকে আবার খুচরা বিক্রেতারা ৫৫ টাকা দরে কিনে নিয়ে ৬০-৭০ টাকা দরে প্রতিটি ডাব বিক্রয় করে।

তবে চাষিদের অভিযোগ, প্রান্তিক পর্যায়ের নারিকেল চাষিদের কাছ থেকে মধ্যস্বত্তভোগীদের হাত পেরিয়ে ক্রেতা পর্যন্ত পৌঁছাতে দাম অনেক হলেও মূলত প্রকৃত চাষিরা ন্যায্য দাম পাচ্ছেন না।

ঝালকাঠি জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. শাহ জালাল বলেন, ঝালকাঠি জেলায় ১ হাজার ১৭৭ হেক্টর জমিতে নারিকেলের বাগান রয়েছে। এর মধ্যে সদর উপজেলায় ৩৯৫ হেক্টর, নলছিটি উপজেলায় ৩শ হেক্টর, রাজাপুর উপজেলায় ২২০ হেক্টর, কাঁঠালিয়া উপজেলায় ২৬২ হেক্টর জমিতে নারিকেল গাছের আবাদ রয়েছে। এতে কয়েক লাখ গাছ রয়েছে। যা ঝালকাঠির জনগণের চাহিদা মিটিয়ে সারাদেশের চাহিদা মেটাতে ভূমিকা রাখছে।

ঝালকাঠি সদর হাসপাতালের পুষ্টিবিদ সাজেদা বেগম জানান, ক্লান্তি ও অবসাদ দূর করতে ও পানিশূন্যতা প্রতিরোধে ডাবের পানি খুব কার্যকর পানীয়। একটি ডাবের পানিতে চারটি কলার সমান পটাসিয়াম আছে, আছে প্রাকৃতিক শর্করা। ফলে শরীরকে সতেজ করে এবং শক্তি দেয়। ডাবের পানি শরীরের জন্য যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। উচ্চমাত্রার ক্যালসিয়াম রয়েছে ডাবের পানিতে, যা হাড়কে করে মজবুত। সেই সঙ্গে জোগায় ত্বক, চুল, নখ ও দাঁতের পুষ্টি। এছাড়া ডাবের পানি হজমের সমস্যা দূর করে, দূর করে কোষ্ঠকাঠিন্য।

মোটামুটি সব ঋতুতে ডাবের পানির সমান কদর রয়েছে। তবে গরমে ডাবের কদর অন্য সময়ের চেয়ে অনেক বেড়ে যায়। পিপাসা মেটাতে, শরীরে তাত্ক্ষণিক শক্তির জোগান দিতে ডাবের পানি উত্তম পানীয়।

ঝালকাঠি শহরের সাধনার মোড়ে ভ্যানে করে ডাব বিক্রি করছিলেন আনোয়ার মিয়া। প্রায় ১০ বছর ধরে তিনি ডাব বিক্রি করেন। দীর্ঘদিন ধরে এই ব্যবসায় জড়িত থাকার কারণে তিনি ডাব হাতে নিয়েই বুঝতে পারেন কোনটায় কতটুকু পানি আছে, কোনটায় শাঁস হয়েছে। মাঝারি আকারের প্রতিটি কচি ডাবের দাম একটু বেড়েছে। অন্য সময় যে ডাবের দাম ছিল ৩০ থেকে ৪০ টাকা, এখন সেটার দাম ৪৫ থেকে ৫০ টাকা। একটু বড় আকারের প্রতিটি কচি ডাবের দাম ৫০ থেকে ৬০ টাকা।

ডাবের দাম বেড়েছে কেন জানতে চাইলে আনোয়ার মিয়া বলেন, গরমে ডাবের চাহিদা বেশি। চালান আগের মতো নাই। পাইকারদের কাছ থেইকা ডাব কিনি। প্রতিটি ডাব (ছোট-বড় মিলিয়ে) ৪৫ টাকা দরে কিনতে হয়। সাইজ অনুযায়ী দাম কম-বেশিতে বিক্রি করতে হয়।

ঝালকাঠি সদর হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. ইমাম হোসেন জুয়েল বলেন, ডাবের পানিতে প্রচুর পটাসিয়াম রয়েছে। এজন্য ডাবের পানি খেলে শরীরে একটা শীতল আমেজ আসে। পটাসিয়াম হার্টের রোগীর জন্য ভালো। তবে শরীরে যদি পটাসিয়াম বেশি থাকে, তাহলে ডাবের পানি পান করা উচিৎ না। এছাড়া যাদের কিডনি সমস্যা রয়েছে, তাদেরও ডাবের পানি পান করা উচিৎ না।

ডাবের পানির অন্যান্য পুষ্টিগুণের কথা উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, গরমের জন্য অনেকের ডায়রিয়া ও পানিশূন্যতা হতে পারে। ডাবের পানি আমাদের শরীরের ডিহাইড্রেশন রোধ করে। আমাদের ঘামের সঙ্গে সোডিয়াম, পটাসিয়াম, ফ্লোরাইডসসহ নানা খনিজ শরীর থেকে বের হয়ে যায়। ডাবের পানি তা পূরণ করতে পারে।

আতিকুর রহমান/এফএ/জেআইএম