ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

ঐতিহ্যবাহী পাগলিছড়া খাল এখন ময়লার ভাগাড়

নুর উল্লাহ কায়সার | প্রকাশিত: ০৫:৪৪ পিএম, ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২২

দীর্ঘদিন ধরে সংস্কারহীনতা আর দখলে-দূষণে স্থানীয়দের জন্য বিড়ম্বনার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে ফেনী শহরের ঐতিহ্যবাহী পাগলিছড়া খাল। খালটি দখল করে এর ওপর বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ করেছেন প্রভাবশালীরা।

ফেনী শহররক্ষায় ব্যবহৃত এ খালটির স্বাভাবিক জলাধার সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনায় পানি উন্নয়ন বোর্ডকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পরিবেশ আদালত নির্দেশনা দিলেও দৃশ্যমান কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। বিষয়টি তদন্ত করে গতবছরের ডিসেম্বরে আদালতে প্রতিবেদন জমা দিতে পরিবেশ অধিদপ্তরকে নির্দেশনা দেওয়া হলেও তা আলোর মুখ দেখেনি।

তবে শিগগির পাগলিছড়া খালসহ শহরের অন্যান্য খাল দখল ও দূষণ মুক্ত করতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়া হবে বলে পৌরসভার পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ফেনী পৌরসভার সবচেয়ে বাণিজ্যিক ও জনগুরুত্বপূর্ণ ১০, ১১, ১২ ও ১৮ নম্বর ওয়ার্ড। এ ওয়ার্ডগুলোতেই ফেনীর গ্র্যান্ড ট্রাংক রোড ও শহীদ শহীদুল্লাহ কায়সার সড়কের অবস্থান। ফেনী পৌরসভার উন্নয়ন ও অগ্রগতি বলতে এ ওয়ার্ডগুলোকে নিয়েই আবর্তিত হয়। এ চারটি ওয়ার্ডের পানি নিষ্কাশন ও জলধারার ভারসাম্য রক্ষার একমাত্র মাধ্যম পাগলিছড়া খাল।

উপজেলা ভূমি অফিসের রেকর্ডমতে খালটি ২০ ফুট প্রস্থ থাকার কথা। এ খালেই নৌকায় করে এক সময়ে ফেনী শহরের বাণিজ্যিক মালামাল বহনের জনশ্রুতি রয়েছে। কিন্তুু বর্তমানে প্রভাবশালীদের দখল আর অপচনশীল পলিথিন বর্জ্যে এটি ময়লার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে সংস্কারহীনতায় আটকে থাকা পচা পানি আর দুর্গন্ধে খালটি এখন মশা ও পোকামাকড় উৎপাদন কারখানায় রূপ নিয়েছে। নিয়মিত মশার উপদ্রব বেড়ে যাওয়ায় খালটির আশপাশে বসবাস এখন কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত বছরের ২৭ অক্টোবর ফেনীর পরিবেশ আদালত স্বপ্রণোদিত হয়ে পাগলিছড়া খাল নিয়ে একটি আদশ দেন। ওই আদেশে বলা হয়, ‘পানি আইন-২০১৩’ এবং ‘পানি বিধিমালা-২০১৮’ অনুযায়ী পাগলিছড়া খালের স্বাভাবিক জলাধার সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনার বিষয়ে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের কোনো ভূমিকা দেখা যাচ্ছে না। এই অবস্থায় ফেনী পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলীকে ফেনীর খাল ও নদীর স্বাভাবিক ব্যবস্থাপনা এবং স্বাভাবিক পানি চলাচল নিশ্চিত করতে কার্যকর প্রদক্ষেপ গ্রহণের নির্দেশ দেওয়া হলো।

একই আদেশে খালের প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য রক্ষা, দূষণ মুক্তকরণ, স্বাভাবিক পানি চলাচল এবং জলাবদ্ধতায় স্থায়ী নিরসরনের উদ্দেশ্যে পরিবেশ সংরক্ষণ আইন অনুযায়ী পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালককে একজন দক্ষ কর্মকর্তার মাধ্যমে তদন্ত করে প্রতিবেদন ১৪ ডিসেম্বরের মধ্যে জমা দিতে নির্দেশ দেন আদালত। কিন্তু নির্ধারিত দিনক্ষণ পেরিয়ে নতুন বছরের দুই মাস অতিবাহিত হলেও এখন পর্যন্ত পরিবেশ অধিদপ্তর ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের দৃশ্যমান কোনো কার্যক্রম দেখা যায়নি। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয়রা।

ঐতিহ্যবাহী পাগলিছড়া খাল এখন ময়লার ভাগাড়

রামপুর বাদল মিয়ার বাড়ির পেছনে আগাছা ও বর্জ্যে বিলীনপ্রায় পাগলিছড়া খাল

সরেজমিন ফেনী শহরের ইসলামপুর রোড থেকে আবুবকর সড়কের ভূঞা বাড়ির পূর্ব পাশ এলাকায় দেখা যায়, পাগলিছড়া খালটি দখল করে খালের ওপর পিলার দিয়ে ডজনখানে দোকান নির্মাণ করে ভাড়া দিয়েছেন প্রভাবশালীরা। এর একটু পরেই জেলা পরিষদের অর্থায়নে নির্মাণ করা হয়েছে একটি ব্রিজ। ব্রিজের মাঝামাঝি থাকা পিলারে ময়লা-আবর্জনা আটকে পানি প্রবাহ বন্ধ হয়ে গেছে।

একটু দক্ষিণে এগোলেই খালটিতে দেখা মেলবে পলিব্যাগ আর ময়লার ভাগাড়। রামপুর বাদল মিয়ার বাড়ির পেছনের অংশে খালটি ভরে আছে আগাছা, সবুজ ঘাস, পচা পানি আর পলিথিন বর্জ্যে।

শহরের ডাক্তার পাড়া এলাকায় ২০ ফুট প্রস্থের এ খালটি দখল করে স্থাপনা নির্মাণ করায় এখন ৬ থেকে ৭ ফুটে এসে দাঁড়িয়েছে। দখল আর দূষণে খালটি প্রায় বিলীন হলেও এ নিয়ে যেন কারো মাথাব্যথা নেই।

স্থানীয় কয়েকজন জানান, এক সময় পাগলিছড়া খাল দিয়ে নৌকায় করে শহরের ভেতরের বাজারে বিভিন্ন মালামাল সরবরাহ করা হতো। এ খালটি হয়েই ফেনী শহরের বৃষ্টির পানি নিষ্কাশন হতো। কিন্তু বর্তমানে স্থাপনা নির্মাণ করে এটিকে সরু করা হয়েছে। সংস্কার না হওয়ায় এটি এখন ময়লার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। খালটিতে পানির প্রবাহ না থাকায় গত কয়েক বছর ধরে সামান্য বৃষ্টিতেই শহরের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও বাসাবাড়িতে পানি ঢুকে পড়েছে।

ঐতিহ্যবাহী পাগলিছড়া খাল এখন ময়লার ভাগাড়

রামপুর বাদল মিয়ার বাড়ির পেছনে আগাছা ও বর্জ্যে বিলীনপ্রায় পাগলিছড়া খাল

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আদালতের নির্দেশনার বিষয়টি তিনি জানেন না বলে জানান ফেনী পানি উন্নয়ন বোর্ডের ফেনীর নির্বাহী প্রকৌশলী জহির উদ্দিন।

তিনি বলেন, ‘পৌরসভা ও সিটি করপোরেশন এলাকায় পানি ব্যবস্থাপনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের আওতাভুক্ত নয়। তারপরও যদি ফেনী পৌরসভা অথবা প্রশাসন থেকে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয় এবং আমাদের সহযোগিতা চাওয়া হয় তাহলে আমরা লজিস্টিক সহযোগিতা দেবো।’

ফেনী পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিদর্শক ফায়জুল কবীর জাগো নিউজকে বলেন, ‘পরিবেশ অধিদপ্তরে তদন্তের জন্য পর্যাপ্ত জনবল নেই। তারপরও আদালতের নির্দেশনা পেয়ে পাগলিছড়া খালের দখল-দূষণ নিয়ে তদন্ত শুরু করা হয়েছে। তদন্ত শেষ হলে আদালতে প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে।’

এ বিষয়ে ফেনী পৌরসভার মেয়র নজরুল ইসলাম স্বপন মিয়াজী বলেন, ‘পাগলিছড়া খালে দখল ও দূষণের ঘটনা সত্য। এ বিষয়ে ফেনীর পরিবেশ আদালত থেকে পানি উন্নয়ন বোর্ড ও পরিবেশ অধিদপ্তরকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তারা অজ্ঞাত কারণে কোনো কাজই করছে না। তারপরও মানুষের বিড়ম্বনার কথা বিবেচনা করে বর্ষার আগেই পাগলিছড়াসহ ফেনী শহরের সবকটি খাল ও ড্রেন পরিষ্কারে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করা হবে।’

জেলা প্রশাসক আবু সেলিম মাহমুদ উল হাসান বলেন, ‘নাগরিক সমস্যার কথা বিবেচনা করে পাগলিছড়া খালসহ অন্যান্য খাল কীভাবে দখল-দূষণ মুক্ত করে পানির প্রবাহ ঠিক রাখা যায় সে বিষয়ে পৌরসভা ও সংশ্লিষ্ট দপ্তরের সঙ্গে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

নুর উল্লাহ কায়সার/এসআর/জেআইএম