কাফনের কাপড়ে তিন বোনের অনশন, খাবার খাইয়ে ভাঙালেন পুলিশ সুপার
‘ভুয়া নিলাম ডেকে আমাদের সম্পত্তি হাতিয়ে নেওয়াদের বিচার চাই’, ‘আমাদের জমি ফেরত পেতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চাই’ এবং ‘আমরা এতিম, আমাদের জমিজমা লুণ্ঠনকারীদের বিচার চাই’ সংবলিত ফেস্টুন নিয়ে অনশনে বসেছিলেন তিন বোন। তাদের দাবি, তারা তাদের বাবার জমি থেকে বেদখল হয়েছেন। সংশ্লিষ্ট জায়গায় প্রতিকার চেয়েও পাননি। এজন্য বাধ্য হয়ে অনশনে বসেছেন।
অবশেষে পুলিশ সুপারের আশ্বাসে তারা অনশন ভঙ্গ করেছেন। বুধবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে এই তিন বোন অনশন ভাঙেন। এর আগে বেলা ১১টার দিকে বরগুনা জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের চত্বরে অনশনে বসেন তারা।
অনশনে বসা তিন বোনের নাম রুবি আক্তার (২৭) , জেসমিন আক্তার (১৮) ও মোসা. রোজিনা (১৬)। তারা জেলার বামনার গোলাঘাটা গ্রামের মৃত আবদুল রশীদের মেয়ে।
বড় বোন রুবি আক্তারের ভাষ্যমতে, ২০০৩ সালে তার বাবা আবদুর রশীদ মারা যান। তখন রুবির বয়স মাত্র সাত বছর। বাবা মারা যাওয়ার একবছর পর ২০০৪ সালে প্রতিবেশী ও দুঃসম্পর্কের খালা হাসিনা বেগমের সঙ্গে চট্টগ্রাম চলে যান রুবি। ওই খালার তত্ত্বাবধানে অষ্টম শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় ২০১৩ সালে পোশাক কারখানায় শ্রমিক হিসেবে কাজ শুরু করেন।
পোশাক কারখানায় কাজ করে বাড়িতে থাকা মা ও ছোট দুই বোনের ভরণ-পোষণ চালান। ২০১৪ সালের শুরুতে ছোট ভাই আল-আমিনকে চট্টগ্রামে নিয়ে আসেন এবং কাভার্ডভ্যানের সহকারী হিসেবে কাজ দেন। কিন্ত ওই বছরের শেষের দিকে দুর্ঘটনায় ভাই আল-আমিনের মৃত্য হয়। এর তিন বছর পর ২০১৭ সালে রুবির মা খাদিজা বেগমও মারা যান।
বাড়িতে থাকা দুই বোন নিরাপত্তাজনিত কারণে এলাকারই এক আত্মীয়ের বাড়িতে থেকে পড়াশোনা চালিয়ে যান। মেজো বোন জেসমিন এবার এসএসসি পরীক্ষার্থী, রুজিনা দশম শ্রেণিতে ভর্তি হয়েছে।
২০১৯ সালে এলাকায় ফিরে বাড়িতে আসেন রুবি। বাড়িতে গিয়ে দেখেন তাদের পৈতৃক সম্পত্তি দখল করে নিয়েছেন প্রভাবশালী প্রতিবেশী আবদুল মান্নান, আশরাফ আলী ও শাহজাহান, শামসুজ্জামান গংরা।
রুবি বলেন, ‘২০১৯ সালে আমি বাড়িতে ফিরে জমি বুঝে পেতে চাইলে তারা বলেন আমাদের জমি নাকি নিলামে তারা কিনে নিয়েছেন। পরে উপজেলা ভূমি অফিসে গিয়ে জানতে পারি জমির কোনো নিলাম হয়নি।’
‘বিষয়টি বামনা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বিবেক সরকার, উপজেলা চেয়ারম্যান লিটু মৃধা ও বরগুনার জেলা প্রশাসক হাবিবুর রহমানকে জানিয়েছি। কিন্তু কোনো প্রতিকার পাইনি। তাই বাধ্য হয়ে অনশনে বসতে হয়েছে।’
জমি ও বসতি দখল প্রসঙ্গে জানতে যোগাযোগ করা হলে আবদুল মান্নান জাগো নিউজকে বলেন, ‘ওই জমি আমাদের। আমাদের কাছে কাগজপত্র আছে। ওদের কোনো জমি নেই।’
এদিকে বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে পুলিশ সুপার মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর মল্লিক ওই তিন বোনের জন্য দুপুরের খাবার কিনে নিয়ে যান। এসময় তিনি তাদের আশ্বস্ত করে বলেন, জমি যদি তাদের হয় তাহলে ওই জমি ফেরত এনে দিতে যা যা করণীয় তাই করা হবে। পরে পুলিশ সুপারের আশ্বাসে খাবার গ্রহণ করে অনশন ভাঙেন তিন বোন।
পরে বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে তিন বোন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, উপজেলা চেয়ারম্যানসহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে নিয়ে ওই তিন বোনের গ্রামের বাড়ি বামনার ঘোলাঘাটায় সরেজমিনে যান পুলিশ সুপার জাহাঙ্গীর মল্লিক।
বরগুনার পুলিশ সুপার মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর মল্লিক বলেন, ‘আমি সরেজমিনে গিয়ে পরিদর্শন করেছি। কাগজপত্র দেখেছি। ওই তিন বোনকে জমি বুঝিয়ে দেওয়া হবে। পাশাপাশি জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে তাদের ঘর তুলে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে।’
এসআর/জেআইএম