ভাঙা ব্রিজে কপাল পুড়ছে দু’পাড়ের বাসিন্দার
দেড় বছরেও জোড়া লাগেনি জামালপুরের সরিষাবাড়ী উপজেলার ঝিনাই ব্রিজের দুই প্রান্ত। ২০২০ সালের প্রবল বন্যায় পানির তোড়ে ভেঙে যায় উপজেলার কামরাবাদ ইউনিয়নের ঝিনাই নদীর ওপর নির্মিত এ ব্রিজটি। তারপর থেকে দুর্ভোগ নিয়েই যাতায়াত করছে ১৭ থেকে ২০টি গ্রামের প্রায় লক্ষাধিক মানুষ।
বর্ষাকালে নৌকা আর শুষ্ক মৌসুমে স্বেচ্ছাশ্রমে নির্মিত কাঠের ব্রিজই এখন স্থানীয়দের একমাত্র ভরসা। বর্ষা মৌসুমে নৌকায় চলাচল করতে গিয়ে নৌকাডুবিতে প্রাণহানির মতো দুর্ঘটনাও ঘটেছে এ এলাকায়।
উপজেলা প্রকৌশল অধিদপ্তর ও স্থানীয় সূত্র জানায়, ২০০৩-০৪ অর্থবছরে শুয়াকৈর-হুদুর মোড় শাহাজাদাহাট এলাকায় ঝিনাই নদীর ওপর দুইশ মিটার দৈর্ঘ্যের ঝারকাটা ব্রিজটি নির্মিত হয়। ২০০৬ সালে ব্রিজটির নির্মাণকাজ শেষ হয়। এদিকে নির্মাণের ১৪ বছরের মাথায় ২০২০ সালের ২১ জুলাই দুপুরে ব্রিজটির দুটি পিলারসহ ২০ মিটার দৈর্ঘ্যের দুটি গার্ডার প্রায় এক ফুট দেবে যায় এবং ওইদিন রাতেই ব্রিজের মাঝের অংশের ৭ নম্বর পিলার এবং ৬ ও ৭ নম্বর স্প্যানের ৪০ মিটার পানির তোড়ে ভেঙে নদীতে বিলীন হয়ে যায়।
এতে চরাঞ্চলের চররৌহা, চরনান্দিনা, বড়বাড়ীয়া, বীরবড়বাড়ীয়া, হেলেঞ্চাবাড়ী, স্বাধীনাবাড়ী, চরহাটবাড়ী, সিধুলী, চুনিয়াপটল, সিংগুরিয়া, ডিগ্রীপাজবাড়ী, খন্দকারবাড়ী, চরছাতারিয়া, আদ্রা, শুয়াকৈর, মাদারগঞ্জের চর লোটাবর, শ্যামগঞ্জ কালিবাড়ী, সদরাবাড়ী ও রায়েরছড়া গ্রামের প্রায় লক্ষাধিক মানুষ দুর্ভোগে পড়েন।
স্থানীয়দের দুর্ভোগ লাঘবে জনপ্রতিনিধিসহ অনেকেই প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন ব্রিজটি মেরামতের। তবে প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে তেমন অগ্রগতি দেখতে না পেয়ে ভুক্তভোগীরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন নানাভাবে।
ক্ষোভ প্রকাশ করে স্থানীয় বাসিন্দা আমিনা বেগম, সোহরাব হোসেন, পাগু মিয়া, আমির উদ্দিনসহ আরও অনেকে জাগো নিউজকে বলেন, আমাদের রাস্তা নেই, যাতায়াত করতে পারছি না। অনেকে শুধু আশা দিয়ে যাচ্ছে। কেউ দুর্ভোগ লাঘবে এগিয়ে আসছে না।
তারা বলেন, ব্রিজটি ভাঙার পর থেকে আমাদের আর দুঃখের শেষ নেই। এছাড়াও সঠিক সময়ে উৎপাদিত পণ্য বাজারে নিতে না পারার কারণে কৃষকরা ন্যায্যমূল্য পাচ্ছে না।
তাদের মতো ক্ষোভ প্রকাশ করেন সরিষাবাড়ী উপজেলা যুবলীগের সভাপতি একেএম আশরাফুল ইসলাম।
তিনি জানান, ব্রিজটি ভেঙে যাওয়ার মূল কারণ হচ্ছে নিম্নমানের কাজ। এছাড়াও ব্রিজের পাশ থেকে অবৈধভাবে ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালি উত্তোলন করার কারণেই ব্রিজের মাঝের অংশ নদীতে বিলীন হয়ে যায়। এতে সরিষাবাড়ী উপজেলার কামরাবাদ ও সাতপোয়া ইউনিয়নের একাংশ এবং পার্শ্ববর্তী মাদারগঞ্জ উপজেলার সিধুলী ও আদারভিটা ইউনিয়নের প্রায় লক্ষাধিক মানুষ প্রতিনিয়ত দুর্ভোগ নিয়েই চলাচল করছে এ রাস্তায়।
স্থানীয়দের দাবি, দ্রুত সময়ের মধ্যে ব্রিজটি মেরামত করে জনগণের দুর্ভোগ লাঘবে কর্তৃপক্ষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
এ বিষয়ে এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সায়েদুজ্জামান সাদেক জাগো নিউজকে বলেন, ইতোমধ্যে এটি একটি প্রজেক্টের আওতাভুক্ত করা হয়েছে। ক্রমান্বয়ে বাস্তবায়ন করা হবে।
নাসিম উদ্দিন/এফএ/এএসএম