ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

সেতুমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতিতে আজও অপেক্ষায় সেই কালাই রুটি বিক্রেতা

ফয়সাল আহমেদ | প্রকাশিত: ১০:১৮ এএম, ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২২

২০১৭ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি ও ১ নভেম্বর রাজশাহী এসেছিলেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। ওই সময় দুবারই পদ্মাপাড়ে মিনা বেগমের হাতের কালাই রুটি খেয়েছিলেন তিনি। সুস্বাদু কালাই রুটি পছন্দ হওয়ায় সেতুমন্ত্রী দুই হাজার টাকা বখশিশও দেন মিনা বেগমকে।

তবে মিনা বেগম সেসময় বখশিশের অর্থ গ্রহণ না করে চেয়েছিলেন ছেলের জন্য স্থায়ী চাকরি। তার (মিনা বেগম) কথা মতো প্রতিশ্রুতিও দিয়েছিলেন ওবায়দুল কাদের। পরে মুঠোফোনে তৎকালীন রাজশাহীর জেলা প্রশাসককে নির্দেশনা প্রদান করেন মিনা বেগমের ছেলের চাকরি দেওয়ার।

পরবর্তী সময়ে রাজশাহী জেলা প্রশাসনে আটজনের নিম্নপদে জনবল নিয়োগ হলেও চাকরি জোটেনি মিনা বেগমের ছেলের। তবে হাল ছাড়েননি মিনা বেগম। সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের দেওয়া প্রতিশ্রুতির আশায় আজো দিন গুনছেন তিনি। সেতুমন্ত্রী আবার রাজশাহী এলে তাকে জানাবেন তার আবদারের কথা।

রাজশাহী নগরীর শ্রীরামপুরের বাসিন্দা মিনা বেগম (৫২)। প্রায় ৩০ বছর ধরে শহররক্ষা বাঁধের ওপর কালাই রুটির দোকান চালিয়ে যাচ্ছেন। ঘরে রয়েছেন অসুস্থ স্বামী হাসিবুর রহমান (৬৫)। সংসারে চার ছেলে রুবেল, রানা, ওলি ও মিঠুন। বড় ও ছোট ছেলে বাসচালক এবং সেজো ছেলে ইলেকট্রিশিয়ান। তবে বেকার মেজো ছেলে। তাকে নিয়েই দুশ্চিন্তায় মিনা বেগম।

দু-পাঁচ বছর আগেও মিনা বেগমের দোকানে বেচাবিক্রি হতো হাজার চারেকের মতো। বেচাকেনা শেষে টিকতো সাত থেকে আটশো টাকা। মাঝে করোনায় প্রায় এক বছর বন্ধ ছিল দোকান। তাই আয়-রোজগারও তেমন হয়নি। ইদানীং বেচা-বিক্রি হলেও হাতে থাকে চার থেকে পাঁচশ টাকা। তাতেই অসুস্থ স্বামী ও বেকার ছেলেকে নিয়ে সংসার চালান তিনি।

নিরিবিলি পরিবেশ, আসল কালাইয়ের আটা দিয়ে রুটি এবং পরিপাটি করে স্বাস্থ্য সম্মতভাবে পরিবেশনের জন্য মিনা বেগমের রয়েছে সুনাম। রিকশাচালক থেকে শুরু করে কোটিপতি এমনকি সরকারি কর্তাব্যক্তিরাও আসেন তার দোকানে। পদ্মাপাড়ে বসে মনোরম পরিবেশে সুস্বাদু কালাই রুটি ও বেগুন ভর্তার স্বাদ গ্রহণ করেন অনেকেই।

সেতুমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতিতে আজও অপেক্ষায় সেই কালাই রুটি বিক্রেতা

প্রতিদিন সকাল ৬টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত বিক্রি করেন কালাই রুটি। প্রতিদিনের মতো সেদিনও (১ নভেম্বর, ২০১৭) সকাল সাড়ে ৬টার দিকে দোকান বিছিয়ে কেবলই বসেছিলেন কালাই রুটি বিক্রেতা মিনা বেগম। এরই মধ্যে হঠাৎ দোকানে আসেন সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।

মিনা বেগম বলেন, ২০১৭ সালের দিকে ওবায়দুল কাদের এসেছিলেন। আমার হাতের কালাই রুটি খেয়েছেন। খেয়ে খুব ভালো লাগায় তিনি বলেছিলেন, রাজশাহী আসলে আবার আমার দোকানে কালাই রুটি খাবেন। তার কয়েক মাস পর আবার তিনি রাজশাহী আসেন। সকাল বলা আমার দোকানে এসে তিনি কালাই রুটি ও বেগুন ভর্তা খান।

তিনি বলেন, খুশি হয়ে তিনি আমাকে ২০০০ টাকা বখশিশও দিচ্ছিলেন। কিন্তু আমি সেটা না নিয়ে আমার মেজো ছেলের চাকরি-বাকরির জন্য বলেছিলাম। পরে তিনি আমাকে বখশিশ দিয়ে বলেছিলেন ‘তোমার ছেলের চাকরির ব্যবস্থা করে দিবো’। ডিসি সাহেবকে তিনি বলেও দিয়েছিলেন। কিন্তু আল্লাহ ভালো জানে ক্যান যে ছেলেটার চাকরি-বাকরি হলো না।

‘এরপর মন্ত্রী সাহেবের সঙ্গে যোগাযোগও করার চেষ্টা করেছি। কিন্তু কোনোভাবেই আর যোগাযোগ করতে পারিনি। তবে মন্ত্রী বলেছিলেন, রাজশাহী যতবার আসবেন আমার হাতের কালাই রুটি তিনি খাবেন। তাই তার যেন মনে থাকে সেকারণে তার সঙ্গে তোলা ছবি দুটি আমি আজো খুব যত্ন করে নিজের কাছে রেখেছি। তিনি এলেই তাকে বলবো, আমার ছেলের যেন একটা গতি করে দেন।’

সেতুমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতিতে আজও অপেক্ষায় সেই কালাই রুটি বিক্রেতা

একহাতেই জ্বলন্ত চুলায় কড়াইয়ে দিচ্ছেন কালাই রুটি। আবার বানাচ্ছেন আরেকটি। এরই মধ্যে কাস্টোমারের চাহিদা মতো দিচ্ছেন বেগুন ভর্তা-পানি-লবণ কিংবা ঝাল।

কাজের ব্যস্ততার মাঝেই মিনা বেগম জাগো নিউজকে জানান, আমার কাছে শুধু ওবায়দুল কাদেরই কালাই রুটি খাননি। শাহারা খাতুন (সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী), নাসিম (প্রয়াত সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী), রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ, কামাল হোসেনসহ (বর্তমান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী) অনেক বড় বড় মানুষ কালাই রুটি খেয়ে গেছেন।

রাজশাহীর শিরোইল কলোনির বাসিন্দা ইফতে খায়ের আলম। মিনা বেগমের কালাই রুটির নিয়মিত ক্রেতা। জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘খালা (মিনা) খুব ভালো কালাই রুটি বানায়। ওবায়দুল কাদেরসহ অনেকেই এখানে এসে কালাই রুটি খেয়েছেন তার হাতে। কিন্তু ভাইরাল হয়েও ভাগ্য ফেরেনি খালার।’

তিনি জানান, ‘তার ছেলের চাকরি হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু হয়নি। শুনেছি চেষ্টাও করেছিলেন মন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করার। কিন্তু পারেননি। তাই তিনি এ ব্যাপারে আর কাউকে বলেন না। আশায় আছেন, মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এলে ছেলের বিষয়টি জানাবেন।’

এদিকে মিনা বেগমের বিষয়ে কথা হয় বর্তমান রাজশাহী জেলা প্রশাসক আব্দুল জলিলের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘ঘটনাটি ২০১৭ সালের। আমি যোগদান করেছি ২০২০ সালে। এ ঘটনার আমি কিছুই জানি না। ঘটনাটি না জেনে মন্তব্য করা সম্ভব নয়। জেনে বলতে পারবো।’

এফএ/জেআইএম