ক্রসিংয়ে নেই ব্যারিয়ার গেট, দড়ি দিয়ে থামানো হয় গাড়ি
<> রেলক্রসিংয়ে ৭ দিন ধরে ছিল না ব্যারিয়ার গেট
<> যানবাহন থামাতে ব্যবহার করা হতো দড়ি
<> নিহত ব্যক্তিরা পাথরখনিতে কর্মরত ছিলেন
দিনাজপুরের বিরামপুর উপজেলায় কুড়িগ্রাম এক্সপ্রেস ট্রেনের সঙ্গে প্রাইভেটকারের মুখোমুখি সংঘর্ষে প্রাইভেটকারের তিন যাত্রী নিহত হয়েছেন। নিহত ব্যক্তিরা ড্রাইভিং লাইসেন্স পরীক্ষার দেওয়ার জন্য জয়পুরহাট যাচ্ছিলেন। স্বজনদের দাবি, রেল কর্তৃপক্ষের উদাসীনতায় এমন ঘটনা ঘটেছে।
বুধবার (২ ফেব্রুয়ারি) সকাল ৭টার দিকে বিরামপুরের ঘোড়াঘাট রেলগুমটি এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।
নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে দুজনের পরিচয় শনাক্ত করা গেছে। তারা হলেন-রংপুরের বদরগঞ্জ উপজেলার সর্দারপাড়া এলাকার ইসলাম হোসেনের ছেলে মাসুম হোসেন (৪৪) ও পার্বতীপুর উপজেলার শাহপাড়া খাড়বান্দা এলাকার আব্দুল হালিম শাহার ছেলে হাফিজুর রহমান (৩৯)। তারা পার্বতীপুর মধ্যপাড়া পাথরখনিতে ভিন্ন পদে কর্মরত ছিলেন বলে জানিয়েছেন স্বজনরা।
সৈয়দপুর রেলওয়ে থানার সহকারী পুলিশ সুপার (সদর) তবারক আলী সরকার জাগো নিউজকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সকাল সাড়ে ৭টার দিকে একটি প্রাইভেটকার (ঢাকা মেট্রো ক-১১-২৩৩২) জয়পুরহাটের উদ্দেশ্যে যাচ্ছিল। ঘন কুয়াশার কারণে কিছু দেখতে না পেয়ে চালক রেলক্রসিংয়ের ওপর গাড়ি তুলে দেন। এসময় ঢাকা থেকে কুড়িগ্রামের উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসা কুড়িগ্রাম এক্সপ্রেস ট্রেনটি প্রাইভেটকারকে ধাক্কা দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই তিন যাত্রী মারা যান।
নিহত হাফিজুর রহমানের মামাতো ভাই রায়হান বলেন, হাফিজুর রহমান জয়পুরহাট বিআরটিএ কার্যালয়ে ড্রাইভিং লাইন্সেসের পরীক্ষা দিতে যাচ্ছিলেন। তিনি মধ্যপাড়া পাথরখনিতে চাকরি করতেন। তিনি বলেন, মহাসড়কে ব্যারিয়ার গেট থাকলে হয়তো এমন ঘটনা ঘটতো না। তার দাবি, রেল কর্তৃপক্ষের উদাসীনতায় এমন ঘটনা ঘটেছে।
যে জায়গায় দুর্ঘটনা ঘটেছে সেখানে রেলওয়ের গেটম্যান হিসেবে দায়িত্বে থাকা সাইফুজ্জামান জাগো নিউজকে বলেন, ‘ভোর ৬টার দিকে কুড়িগ্রামগামী কুড়িগ্রাম এক্সপ্রেস ট্রেনটি আসছিল। এসময় মহাসড়কে ব্যারিয়ার গেট না থাকায় দড়ি দিয়ে গাড়ি পারাপার বন্ধ করা হয়। কুয়াশায় প্রাইভেটকারটি দ্রুত ওই এলাকায় প্রবেশ করলে দড়ি ছিঁড়ে লাইনের ওপর উঠে যায়। এসময় ট্রেনটি গাড়িটিকে ধাক্কা দিলে প্রায় ১০০ হাত দূরে ছিটকে যায়। এতে প্রাইভেটকারের তিন যাত্রী নিহত হন।’
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দিনাজপুর-গোবিন্দগঞ্জ মহাসড়কের রেলক্রসিংয়ে ব্যারিয়ার গেট নেই। এজন্য প্রায় সাতদিন ধরে গাড়ি থামানোর জন্য দড়ি ব্যবহার করা হচ্ছে। আজ সকালেও গাড়ি থামাতে দড়ি ব্যবহার করা হয়।
স্থানীয়দের অভিযোগ, দিনাজপুর থেকে গোবিন্দগঞ্জ মহাসড়ক প্রশস্ত করার কাজ প্রায় শেষের দিকে। কিন্তু ঘোড়াঘাট রেলগুমটি এলাকায় রেলের পাশে রাস্তাটি আগের অবস্থানেই রয়েছে। ফলে প্রায়ই যানজট লেগে থাকে। এছাড়া বিরামপুরে স্থায়ীভাবে ট্রাক টার্মিনাল না থাকায় সেখানে শত শত ট্রাক রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকে। এতে প্রশস্ত রাস্তাটি ছোট হয়ে যায়। ফলে প্রায়ই এই রাস্তায় দুর্ঘটনা ঘটে।
জিআরপি পার্বতীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মামুন হোসেন বলেন, মরদেহগুলো উদ্ধার করা হয়েছে। এখন নিহত ব্যক্তিদের পরিচয় শনাক্তের কাজ চলছে। খুব দ্রুত এ ঘটনায় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
জানতে চাইলে বিরামপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) পরিমল কুমার সরকার জাগো নিউজকে বলেন, মহাসড়কে নতুন ব্যরিয়ার গেট লাগানোর কাজ চলছে।
মো. মাহাবুর রহমান/এসআর/এএসএম