সেদিনই সন্তুষ্ট হবো, যেদিন রায় কার্যকর হবে: সিনহার বোন
সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদ খান হত্যা মামলার রায়ে নয়, রায় কার্যকর হলে তবেই সন্তুষ্ট হবেন বলে জানিয়েছেন সিনহার বোন শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস।
তিনি বলেন, দুই প্রধান আসামির ফাঁসির রায়ে প্রত্যাশা পূরণ হয়েছে, কিন্তু সাতজনের খালাস নিয়ে আছে অসন্তোষ, তাদেরও কিছুটা দায়বদ্ধতা ছিল।
সোমবার (৩১ জানুয়ারি) বহুল আলোচিত এ হত্যা মামলায় রায় ঘোষণা করেন কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মোহাম্মদ ইসমাঈল। রায়ে সিনহা হত্যায় সম্পৃক্ততার প্রমাণ পাওয়ায় বিতর্কিত ওসি (বরখাস্ত) প্রদীপ কুমার ও লিয়াকত আলীর মৃত্যুদণ্ডাদেশ দিয়েছেন আদালত।
রায় ঘোষণার সময় থেকেই কক্সবাজার আদালতে ছিলেন মামলার বাদী শারমিন। রায়ের পরপর আদালত থেকে বেরিয়ে তিনি সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন।
শারমিন বলেন, প্রত্যাশা ছিল মামলার প্রধান দুই আসামির যেন সর্বোচ্চ সাজা হয়। সেটা পূরণ হয়েছে। তবে যে সাতজনকে খালাস দেওয়া হলো, আমার ব্যক্তিগত মতামত হচ্ছে, তাদেরও কিছুটা দায়বদ্ধতা ছিল। একেবারেই যে দায়বদ্ধতা ছিল না তা নয়। সেক্ষেত্রে হয়তো তাদের কিছু সাজা হতে পারতো বলে ব্যক্তিগতভাবে আমার মনে হয়। সন্তুষ্টির কথা যদি বলেন, সন্তুষ্টি সেদিনই হবে যেদিন রায়টি কার্যকর হবে।
এ মামলায় যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন প্রদীপের দেহরক্ষী রুবেল শর্মা, বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের বরখাস্ত উপ-পরিদর্শক (এসআই) নন্দদুলাল রক্ষিত ও বরখাস্ত কনস্টেবল সাগর দেব এবং টেকনাফ থানায় পুলিশের দায়ের করা মামলার সাক্ষী টেকনাফের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুরের মারিশবুনিয়া গ্রামের নুরুল আমিন, মো. নিজামুদ্দিন ও আয়াজ উদ্দিন। তাদের প্রত্যেককে ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানাও করা হয়েছে।
খালাসপ্রাপ্তরা হলেন- বরখাস্ত সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) লিটন মিয়া, বরখাস্ত কনস্টেবল সাফানুর করিম, কামাল হোসেন, আব্দুল্লাহ আল মামুন, এপিবিএনের বরখাস্ত উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. শাহজাহান, বরখাস্ত কনস্টেবল মো. রাজীব ও মো. আবদুল্লাহ।
এর আগে দুপুর ২ টায় ১৫ আসামিদের আদালতে হাজির করা হয়। দুপুর ২টা ২৫ মিনিটে এজলাসে এসে আদালতের কার্যক্রম শুরুর পর মামলা সম্পর্কে প্রাসঙ্গিক আলোচনা করেন বিচারক। এরপর শুরু করেন অপরাধের পর্যবেক্ষণ বয়ান। সাক্ষ্য-প্রমাণে কার কী অপরাধ দাঁড়িয়েছে সেসব তুলে ধরার পর হত্যায় সংশ্লিষ্টতার অপরাধ অনুসারে সাজা ঘোষণাকালে প্রধান দুই অভিযুক্তকে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডাদেশ দিয়েছেন আদালত।
আদালতের সরকারি কৌঁসুলি, বাদীপক্ষের আইনজীবী ও আসামিপক্ষের আইনজীবীসহ বাদী-বিবাদীদের স্বজন এবং সংশ্লিষ্টরা এজলাসে উপস্থিত ছিলেন। রায়কে কেন্দ্র করে আদালতের চারপাশে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়।
নির্মম ও আলোচিত এ হত্যাকাণ্ডের ১৮ মাসের মাথায় রায় ঘোষণা হলো। বিচারিক কার্যক্রম শুরু করে মাত্র ৩৩ কার্যদিবসে শেষ হয়েছে মামলাটির পরবর্তী কাজ।
কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালত সৃষ্টির ৩৮ বছরের ইতিহাসে এই প্রথম এত দ্রুত কোনো হত্যা মামলার রায় ঘোষণা হলো। এর আগে হত্যা কিংবা ফৌজদারি কোনো মামলায় এত বিপুল সংখ্যক সাক্ষী নেওয়ার নজির নেই। তেমনটি নজির নেই এত স্বল্প সময়ে চার্জগঠন, শুনানি, সাক্ষ্যগ্রহণ, জেরা ও যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের।
সিনহা হত্যা মামলার রায়ের আগেই সবকিছুর প্রস্তুতি নেওয়া হয়। সোমবার সকাল থেকেই পুরো আদালতপাড়ায় কঠোর নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। আদালত পাড়ার চারপাশে ও পয়েন্টে পয়েন্টে অবস্থান নেয় নিরাপত্তাকর্মী। পোশাকধারী পুলিশের পাশাপাশি সাদা পোশাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নানা বিভাগের লোকজন কয়েক স্তরের নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা বলয় তৈরি করেন।
২০২০ সালের ৩১ জুলাই ঈদুল আজহার আগের রাতে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিনড্রাইভ সড়কের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর এপিবিএন চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে নিহত হন মেজর সিনহা।
হত্যাকাণ্ডের চারদিন পর ৫ আগস্ট সিনহার বড় বোন শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস বাদী হয়ে কক্সবাজার জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিমের আদালতে হত্যা মামলা করেন। মামলায় টেকনাফ থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপ কুমার দাশসহ নয়জনকে আসামি করা হয়।
মামলায় প্রধান আসামি করা হয় বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা পরিদর্শক লিয়াকত আলীকে। ওসি (বরখাস্ত) প্রদীপ কুমার দাশকে করা হয় দুই নম্বর আসামি। মামলার তিন নম্বর আসামি বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রে কর্মরত উপ-পরিদর্শক (এসআই) নন্দদুলাল রক্ষিত। কক্সবাজারের র্যাব-১৫ মামলাটির তদন্তভার পায়।
ওই বছরের ৭ আগস্ট মামলার আসামি সাত পুলিশ সদস্য আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। পরে তদন্তে নেমে হত্যার ঘটনায় স্থানীয় তিন বাসিন্দা, আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) তিন সদস্য ও ওসি প্রদীপের দেহরক্ষীসহ আরও সাতজনকে গ্রেফতার করে র্যাব। এরপর ২০২১ সালের ২৪ জুন মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামি কনস্টেবল সাগর দেবের আদালতে আত্মসমর্পণের মাধ্যমে আলোচিত এই মামলার ১৫ আসামির সবাই আইনের আওতায় আসেন।
এ মামলায় চার মাসের বেশি সময় তদন্ত শেষে ২০২০ সালের ১৩ ডিসেম্বর ৮৩ জন সাক্ষীসহ অভিযোগপত্র আদালতে দাখিল করা হয়। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা র্যাব-১৫ এর সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মোহাম্মদ খায়রুল ইসলাম আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। ১৫ জনকে আসামি করে দায়ের করা অভিযোগপত্রে সিনহা হত্যাকাণ্ডকে একটি পরিকল্পিত ঘটনা হিসেবে উল্লেখ করা হয়।
দীর্ঘশুনানি, সাক্ষীদের জবানবন্দি, জেরা ও আইনজীবীদের যুক্তিতর্ক শেষে গত ১২ জানুয়ারি রায়ের জন্য ৩১ জানুয়ারি দিন ধার্য করেছিলেন বিচারক।
টিটি/এমআরআর/এএসএম
টাইমলাইন
- ০৯:৫৮ পিএম, ৩১ জানুয়ারি ২০২২ কারাগারের কনডেম সেলে প্রদীপ-লিয়াকত
- ০৭:০৯ পিএম, ৩১ জানুয়ারি ২০২২ সেদিনই সন্তুষ্ট হবো, যেদিন রায় কার্যকর হবে: সিনহার বোন
- ০৬:০০ পিএম, ৩১ জানুয়ারি ২০২২ প্রদীপ-লিয়াকতের ফাঁসির রায়ে মিষ্টি বিতরণ
- ০৫:৩৫ পিএম, ৩১ জানুয়ারি ২০২২ রায় শুনে কাঁদলেন সব আসামি
- ০৪:৫৪ পিএম, ৩১ জানুয়ারি ২০২২ ‘পরিচয় জেনে সিনহাকে স্যালুট দিয়েও গুলিতে সহযোগিতা করলেন কেন?’
- ০৪:৫০ পিএম, ৩১ জানুয়ারি ২০২২ সিনহা হত্যা মামলা থেকে খালাস পেলেন ৭ জন
- ০৪:৪২ পিএম, ৩১ জানুয়ারি ২০২২ সিনহা হত্যার দায়ে ৬ জনের যাবজ্জীবন
- ০৪:৪০ পিএম, ৩১ জানুয়ারি ২০২২ ‘অনেক কষ্টের পরে তোরে পাইছি’ বলেই সিনহার বুকে লাথি মারেন প্রদীপ
- ০৪:২৬ পিএম, ৩১ জানুয়ারি ২০২২ সিনহা হত্যায় প্রদীপ-লিয়াকতের মৃত্যুদণ্ড
- ০৪:০২ পিএম, ৩১ জানুয়ারি ২০২২ দুপুরে ডাল-ভাত-সবজি খেয়েছেন প্রদীপ-লিয়াকতরা
- ০৩:২০ পিএম, ৩১ জানুয়ারি ২০২২ রায় পড়ছেন বিচারক, এজলাস কোণে নিশ্চুপ দাঁড়িয়ে ওসি প্রদীপ
- ০২:৫৬ পিএম, ৩১ জানুয়ারি ২০২২ সিনহা হত্যা মামলার রায় পড়া শুরু
- ০২:৩৬ পিএম, ৩১ জানুয়ারি ২০২২ সিনহা হত্যা মামলার রায়: শুরু হলো আদালতের কার্যক্রম
- ০২:০৪ পিএম, ৩১ জানুয়ারি ২০২২ আদালতে প্রদীপ-লিয়াকতরা
- ১২:১৬ পিএম, ৩১ জানুয়ারি ২০২২ ওসি প্রদীপ গং ‘আত্মস্বীকৃত শিক্ষিত খুনি’
- ১০:৫৫ এএম, ৩১ জানুয়ারি ২০২২ সিনহা হত্যা: প্রকৃত দোষীদের শাস্তি চান আসামিদের স্বজনরাও
- ০৯:৩৪ এএম, ৩১ জানুয়ারি ২০২২ সিনহা হত্যার রায় পিছিয়ে দুপুরে
- ০৯:০৬ এএম, ৩১ জানুয়ারি ২০২২ কক্সবাজার আদালতপাড়ায় কঠোর নিরাপত্তা বলয়
- ০৪:০০ এএম, ৩১ জানুয়ারি ২০২২ সিনহা হত্যা মামলার রায় আজ
- ০৯:২৪ পিএম, ৩০ জানুয়ারি ২০২২ প্রদীপসহ সব আসামির মৃত্যুদণ্ড চায় রাষ্ট্রপক্ষ
- ০৭:০৮ পিএম, ৩০ জানুয়ারি ২০২২ সিনহা হত্যা মামলার রায়ের দিকে তাকিয়ে দেশবাসী