ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

ব্যাংক ঋণ না নিয়েও খেলাপি ৪০ জন, মামলা

জেলা প্রতিনিধি | বান্দরবান | প্রকাশিত: ০৫:৫৯ পিএম, ২৫ জানুয়ারি ২০২২

ব্যাংক ঋণ না নিয়েও বান্দরবান সদর উপজেলার কুয়ালং ইউনিয়নের ৪০ জনের বিরুদ্ধে ঋণ খেলাপির (সার্টিফিকেট) মামলার অভিযোগ উঠেছে। ফলে ধারদেনা করে গত কয়েক মাস ধরে আদালতে হাজিরা দিতে হচ্ছে তাদের। এ নিয়ে অগ্রণী ব্যাংক, বাংলাদেশ ব্যাংক ও বান্দরবান জেলা প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েও কোনো সমাধান পাননি ভুক্তভোগীরা।

জানা যায়, ইউনিয়নের চেমীমুখ পাড়ার মৃত আবদুল শহিদের ছেলে আবদুল আলম ওরফে আলম সওদাগর ২০১২ সালে খাস জমি বন্দোবস্ত ও সরকারি সহায়তা দেওয়াসহ বিভিন্ন প্রলোভনে এলাকার প্রতিবন্ধী, ভূমিহীন ও দিন মজুরসহ নিম্ন আয়ের ৪০ পরিবারের কাছ থেকে জাতীয় পরিচয়পত্র ও ছবি সংগ্রহ করেন। এর কিছুদিন পর আইডি কার্ড ও ছবি দেওয়া সবাইকে একে একে তার বাড়িতে ডেকে নিয়ে সরকারি সহায়তা পেতে আবেদন করতে হবে বলে বাংলা ও ইংরেজি লিখা কাগজে টিপসই ও স্বাক্ষর নেন। কিন্তু কোনো সহায়তা তারা পাননি।

হঠাৎ ২০১৫ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি ঋণের দায় মিটাতে ওই ৪০ জনকে অগ্রণী ব্যাংকের বান্দরবান শাখা থেকে নোটিশ দেওয়া হয়। পরে তৎকালীন ব্যাংক ম্যানেজার নিবারণ তংচংগ্যার সঙ্গে যোগাযোগ করে তারা জানতে পারেন ব্যাংক থেকে তাদের নামে মোট ৪০ লাখ টাকা (যা এখন সুদে আসলে প্রায় এক কোটি টাকা দাঁড়িয়েছে) গ্রহণ করেছেন আলম সওদাগর।

বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও মাতব্বরদের নিয়ে ২০১৯ সালের ৩ ডিসেম্বর বৈঠক করেন উপজেলা চেয়ারম্যান। বৈঠকে অভিযুক্ত আলম সওদাগর ঋণের দায় স্বীকার করে ১৫০ টাকার স্ট্যাম্পে ব্যাংক ঋণ পরিশোধের অঙ্গীকার করেন।

কিন্তু সেই ঋণ পরিশোধ না করায় ২০২১ সালের ৫ অক্টোবর বান্দরবান জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে ৪০ জনের বিরুদ্ধে সার্টিফিকেট মামলার নোটিশ পাঠানো হয়।

ভুক্তভোগীরা জানান, মামলা নোটিশে পেয়ে তারা হতবাক হন। অর্থনৈতিক দুরবস্থার কারণে আইনি সহায়তার জন্য আইনজীবী পর্যন্ত দিতে পারেননি। এ নিয়ে গত ১৬ নভেম্বর আলম সওদাগরের বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন করা হয়। পরে ২২ নভেম্বর প্রতারণা থেকে মুক্তি পেতে বাংলাদেশ ব্যাংকের মহাব্যবস্থাপক, সেন্ট্রাল ব্যাংক অব বাংলাদেশের প্রধান কার্যালয়, অগ্রণী ব্যাংকের আঞ্চলিক কার্যালয় চট্টগ্রাম দক্ষিণ ও
পার্বত্য অঞ্চলের উপ-মহাব্যবস্থাপক ও বান্দরবানের জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত আবেদন করেন।

ভুক্তভোগীদের দাবি, কখনোই অগ্রণী ব্যাংক থেকে তারা কোনো ঋণ নেননি। অগ্রণী ব্যাংক কোথায় তাও জানতেন না।

ভুক্তভোগীদের মধ্যে তিনজন আলম সওদাগরের মেঝ ভাই আব্দুল কাদের মেয়ে। প্রতারণার শাস্তি দাবি জানিয়ে আব্দুল কাদের বলেন, সে আমার ভাই হয়েও আমার তিন মেয়ের নামে ঋণ নিয়ে আত্মসাৎ করেছে। পরে জানাজানি হলে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে সালিশে লিখিত স্ট্যাম্পে স্বীকারোক্তিমূলক অঙ্গীকার করেছিল ঋণের টাকা সে পরিশোধ করবে। তবুও সে টাকা পরিশোধ করেনি।

স্থানীয় ইউপি মেম্বার মো. হেলাল উদ্দিন বলেন, চেমীমুখ পাড়াবাসীর মধ্যে ৪০ জনেরও অধিক অক্ষর জ্ঞানহীন অসহায় মানুষের নাম ব্যবহার করে অগ্রণী ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে আলম সওদাগর অর্ধ কোটিরও বেশি টাকা আত্মসাৎ করেছে। এ নিয়ে কয়েকবার এলাকায় সালিশ হয়েছিল। আলম সওদাগর ঋণ পরিশোধ করবে বলে অঙ্গীকারও করেছিল। কিন্তু ঋণ পরিশোধ করেনি। ফলে অসহায় গ্রামবাসীদের বিরুদ্ধে সার্টিফিকেট মামলা হয়েছে বলে শুনেছি।

বান্দরবান সদর উপজেলা চেয়ারম্যান এ কে এম জাহাঙ্গীর জাগো নিউজকে বলেন, ভুক্তভোগী ও আলম সওদাগরের বিষয়ে ব্যাংক কর্মকর্তাদের সঙ্গে কয়েকবার বৈঠক করেছি। ভুক্তভোগীদের ঋণের দায় থেকে মুক্তি দিতে লিখিত আবেদন এবং প্রতারণার সুষ্ঠু তদন্ত পূর্বক এলাকায় গণশুনানির মাধ্যমে সওদাগরের দৃষ্টান্ত শাস্তি দাবি জানানো হয়েছে।

এ বিষয়ে অভিযুক্ত আলম সওদাগর বলেন, ‘এ নিয়ে আমি কিছু জানি না। এলাকায় আমার সম্পত্তি ছিনিয়ে নেওয়ার জন্য তারা ষড়যন্ত্র করছে।’

স্ট্যাম্পে ব্যাংক ঋণ পরিশোধের লিখিত অঙ্গীকারনামার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর আমার নয়।

৪০ জনের বিরুদ্ধে সার্টিফিকেট মামলার বিষয়ে জানতে চাইলে অগ্রণী ব্যাংকের বান্দরবান শাখার ব্যাংক ম্যানেজার জাহেদুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, ‘এটা ২০১২ সালের ঘটনা। ঋণগুলা নিজ নামীয় অ্যাকাউন্ট ছাড়া উত্তোলন করা যায় না। নিয়ম অনুযায়ী তারা ঋণ পরিশোধ না করায় ব্যাংক আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।

তিনি আরও বলেন, তবে ৪০ জন ২০২১ সালের ২২ নভেম্বর আমাদের মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংক ও অগ্রণী ব্যাংকের আঞ্চলিক কার্যালয় চট্টগ্রাম বরাবর একটি অভিযোগ দিয়েছে। এ বছর ডিসেম্বরে ক্লোজিং শেষ হলে আনিত অভিযোগের ভিত্তিতে ব্যাংক তদন্ত শুরু করতে পারে।

সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট (শিক্ষা ও কল্যাণ শাখা, জেনারেল সার্টিফিকেট শাখা ও রেকর্ড রুম) কর্মকর্তা রেজওয়ানা চৌধুরী জাগো নিউজকে বলেন, ব্যাংক ২০১৫ সালে নিকোজিশন পাঠালেও কোট ফি না দেওয়ায় ওই সময় মামলা রুজুর সুযোগ ছিল না। পরে আইনি পরামর্শে ব্যাংক কোট ফিসহ নথিপত্র উপস্থাপন করলে মামলা হয়।

তিনি আরও বলেন, অভিযোগের প্রেক্ষিতে বর্তমানে প্রায় ৭০০ সার্টিফিকেট মামলা চলমান আছে। অভিযুক্তদের অধিকাংশই বয়স্ক ও দরিদ্র । অনেক কষ্ট করে তারা হাজিরা দিতে আসেন। তাই মানবিক বিবেচনা করে বিভিন্নজনকে বিভিন্ন তারিখে হাজিরা গ্রহণ করে সমন্বয় করা হচ্ছে। সর্বশেষ ১৮ জানুয়ারি তাদের কয়েকজন হাজিরা দিয়েছিল। এছাড়া সবাই নিয়মিত আদালতে হাজিরা দিচ্ছে।

বান্দরবান জেলা প্রশাসক ইয়াসমিন পারভীন তিবিরীজি জাগো নিউজকে বলেন, ভুক্তভোগীরা এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ দিয়েছে। ব্যাংকের সঙ্গে সমন্বয় করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এসজে/এএসএম