ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

অবশেষে আলোর মুখ দেখছে জামালগঞ্জ কয়লা খনি

প্রকাশিত: ১১:৫২ এএম, ০৫ জানুয়ারি ২০১৬

প্রায় ৫৪ বছর পর আলোর মুখ দেখছে জয়পুরহাট জেলার আক্কেলপুর উপজেলার জামালগঞ্জ কয়লা খনিটি। বাংলাদেশের বড়পুকুরিয়া (আন্ডারগ্রাউন্ড), ফুলবাড়ি (ওপেন), দিঘীপাড়া (ওপেন) খালাসকির (ওপেন) জামালগঞ্জ কয়লা খনিসহ মোট ৫টি কয়লা খনি বাংলাদেশে আবিষ্কৃত হলেও একমাত্র বড়পুকুরিয়া কয়লাখনির কার্যক্রম চলছে। আর কোনো কয়লা খনিই আলোর মুখ দেখেনি।

সেক্ষেত্রে জয়পুরহাটের জামালগঞ্জ কয়লা খনিটি যে পরিমাণ গভীরতাই রয়েছে তা আন্ডারগ্রাউন্ড পদ্ধতিতেও তোলা সম্ভব নয়। তবে বিশেজ্ঞরা বলছেন, যেহেতু জামালগঞ্জ কয়লা খনিটি ২০-২৫ কোটি বছর আগের কয়লা সেহেতু কয়লার যে গুণ তাতে অবশ্যই তাতে গ্যাস থাকবে।

তাই কয়লার ফাঁকের আনুবীক্ষণিক স্তরে কি পরিমাণ মিথেন গ্যাস আছে তা পরীক্ষার জন্য ২০১৫ এর ২১ জুন পেট্রোবাংলার সঙ্গে ভারতের মাইনিং এসোসিয়েটস প্রাইভেট লি. (এমএপিএল) এর একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এক বছরের এ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ২৩ কোটি ৩৭ লাখ টাকা।

প্রকল্পটি পেট্রোবাংলার নিজস্ব অর্থায়নে Feasibility Study For The Extraction of coal Bed Methane (CBM) at Jamalgong Coal field (ফিজিবিলিটি স্টাডি ফর দি এক্সট্রাকশন অব কোল বেড মিথেন)(সিবিএম) বাস্তবায়নাধীন রয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।

ভারতের মাইনিং এসোসিয়েটস প্রাইভেট লি. (এমএপিএল) এর বৈদেশিক পরামর্শক সুধাংসু অধিকারী বলেন, জয়পুরহাটের জামালগঞ্জ কয়লাক্ষেত্র এলাকার ১২ স্কয়ার কি.মি. এলাকাজুড়ে মিথেন গ্যাস মূল্যায়নের জন্য ৩টি কোর কুপ খনন কাজ ইতোমধ্যে শুরু  হয়েছে। প্রতিটি খনন ১১০০ মি. পর্যন্ত হবে।

কুপ খননের স্থানগুলো হলো জয়পুরহাট সদর উপজেলার ভাদসা ইউনিয়নের মাঝিপাড়া গ্রামের লোকেশন কুপ-১, বিলাশবাড়ী গ্রামের লোকেশন কুপ-২ ও জামালগঞ্জের রূকন্দিপুর গ্রামে লোকেশন কুপ-৩। তিনি আরও বলেন, কুপ খননের উদ্দেশ্য হলো- কয়লার নমুনা সংগ্রহ, কয়লা স্তরে গ্যাসের উপস্থিতি এবং পরিমাণ নির্ণয়ের জন্য ফিজিবিলিটি স্টাডি সম্পন্ন করা।

পেট্রোবাংলার ব্যবস্থাপক মো. সালাহউদ্দিন বলেন, ৩০ বছর ধরে পৃথিবীতে সিবিএম পদ্ধতিতে মিথেন গ্যাস উত্তোলন করা হলেও বাংলাদেশে এই ধরনের স্টাডি এই প্রথম। এ পদ্ধতিতে ১ মেট্রিন টন কয়লার স্তরে ৭-৮ কিউবিক মিটার গ্যাস পাওয়া গেলে বাণিজ্যিকভাবে এই গ্যাস উন্নয়ন ও উত্তোলনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা সম্ভব হবে। এই গ্যাস বিদ্যুৎ উৎপাদন এবং শিল্প-কারখানায় ব্যবহার করা যাবে। কুপ খনন ও স্টাডি রিপোর্ট আগামী জুন মাস অর্থাৎ ৬ মাসের মধ্যে প্রতিবেদন প্রকাশিত হবে বলেও তিনি জানান।  

পেট্রোবাংলার প্রজেক্ট মনিটরিং কনসালটেন্ট গোলাম মুর্ত্তজা আহম্মেদ ফারুক এমন মন্তব্য করে আরও বলেন, জামালগঞ্জে ১৯৬২ সালে যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তায় তখনকার খনিজ ও জ্বালানি শক্তি কমিশন উন্নতমানের কয়লা খনির অনুসন্ধানে কয়লা সম্পদের ১১টি ক্ষেত্র চিহ্নিত করেন। এসব উন্নতমানের কয়লা এলাকার বিস্তীর্ণ অঞ্চলের ৬৭০ থেকে ১০৬২ মিটার গভীরে রয়েছে।

সে সময়কার অনুসন্ধানী টিম জানান, এই কয়লা খনিতে ১ হাজার মিলিয়ন টন উন্নতমানের কয়লার মজুদ রয়েছে। অনুসন্ধানী দলটির মতামতের ভিত্তিতে তখনকার সরকার খনি এলাকায় ৬ একর জমি অধিগ্রহণ করে। স্বাধীনতা পরবর্তীতে সরকার ১৯৭৯ সালে অধিগ্রহণকৃত জায়গায় কয়লা খনির কাজ চালিয়ে যেতে অতিথিশালা, স্টাফ কোয়ার্টার ও গুদাম নির্মাণ করে।

সে সময় এশিয়ার মধ্যে উৎকৃষ্টমানের কয়লা প্রাপ্তির সম্ভাবনা দেখা দেয়ায় ৪০ কোটি টাকা ব্যয় নির্ধারণে ৫ বছর মেয়াদী একটি পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। এরপর থেকে আজ পর্যন্ত অজ্ঞাত কারণে জামালগঞ্জ কয়লা খনিটি পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকে।

জয়পুরহাট ইন্সটিটিউট অব মাইনিং মিনারেলজি অ্যান্ড মেটারলজির মূখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. নাজিম বলেন, ৫৪ বছর ধরে পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকা জামালগঞ্জ কয়লা খনির বিপুল পরিমাণ মজুদকৃত কয়লা থেকে তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব হবে এবং এই উৎপাদিত বিদ্যুৎ রাজশাহী বিভাগের চাহিদা মিটিয়েও অতিরিক্ত থাকবে। অতিরিক্ত বিদ্যুৎ জাতীয় বিদ্যুৎ গ্রিডেও সংযোগ দেয়া যাবে। এতে কোনো রকম পরিবেশ বিপর্যয় দেখা দিবে না বা কোনো ঘর-বাড়ি বা জনবসতি স্থানান্তর করার প্রয়োজন হবে না।  

সকল সম্ভাবনার দিক বিবেচনা করে বর্তমান সরকার এই খনি থেকে পরীক্ষামূলকভাবে মিথেন গ্যাস উত্তোলনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। এরই ধারাবাহিকতায় মঙ্গলবার দুপুরে জয়পুরহাট জামালগঞ্জ কয়লাক্ষেত্রের তিনটি কোর কুপ খননের অংশ হিসেবে বড়মাঝিপাড়া এলাকায় কোর কুপ খননের উদ্বোধন করেন বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ।

এ সময় অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান ইসতিয়াক আহম্মেদ, স্থানীয় সংসদ সদস্য শামছুল আলম দুদু ,জেলা প্রশাসক আব্দুর রহিম, জেলা পুলিশ সুপার মোল্যা নজরুল ইসলাম, জেলা পরিষদ প্রশাসক এস এম সোলায়মান আলী ও বৈদেশিক পরামর্শক সুধাংসু অধিকারী প্রমুখ।

এ উপলক্ষে আয়োজিত এক মত বিনিময় সভায় মন্ত্রী বিষয়গুলোর সত্যতা নিরুপণ করে বলেন, মজুতকৃত এই বিপুল পরিমাণ কয়লার ক্ষেত্র থেকে মিথেন গ্যাস পাওয়া গেলে এই এলাকায় বিদ্যুৎ সমস্যার সমাধান, গার্মেন্টসসহ বিভিন্ন শিল্প স্থাপন, জ্বালানি চাহিদা পূরণ অনেকাংশে সম্ভব হবে। এছাড়া পরীক্ষামূলক এই পদ্ধতিতে গ্যাস উত্তোলন সফল হলে দেশের অন্যান্য পরিত্যক্ত কয়লা খনি থেকেও একইভাবে গ্যাস উত্তোলন করা যাবে। আর এতে করে দেশ গ্যাস সম্পদে সমৃদ্ধ হবে।  

রাশেদুজ্জামান/এসএস/আরআইপি