পশ্চিমাঞ্চল রেলে কর্মবিরতি ঘোষণার দেড়ঘণ্টা পর স্থগিত
রাজশাহী পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়েতে ১১ জানুয়ারি রাত ১২টা থেকে সকাল পর্যন্ত কর্মবিরতির বা ট্রেন চালানো বন্ধের ঘোষণা দেয় বাংলাদেশ রেলওয়ে রানিং স্টাফ ও শ্রমিক কর্মচারী সমিতি। তবে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের আলোচনা সাপেক্ষে ঘোষিত কর্মসূচি স্থগিত করেন স্টাফ ও শ্রমিক কর্মচারীর নেতারা।
সোমবার (১০ জানুয়ারি) সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশনে বাংলাদেশ রেলওয়ে রানিং স্টাফ ও শ্রমিক কর্মচারী সমিতি একটি চিঠির মাধ্যমে এ কর্মবিরতির ঘোষণা দেন। পরে সমস্যা সমাধানের আশ্বাস পাওয়ায় রাত ৮টার দিকে তারা আন্দোলন স্থগিত করেন।
রেল সূত্রে জানা গেছে, ট্রেনচালক, সহকারী ট্রেনচালক ও অন্যান্য রানিং স্টাফরা গত ডিসেম্বরের বেতন পাননি। আইবাস প্লাসে মাইলেজের অর্থ বেতনের সঙ্গে যোগ হয় না বা বন্ধ রয়েছে। এছাড়াও তাদের রিটায়ার্ডের সময় ৭৫ শতাংশ মাইলেজের অর্থ যোগ হয়। কিন্তু তা বন্ধ রয়েছে। এসব কারণে তারা কেন্দ্রীয় কমিটির আহ্বানে ট্রেন না চালানোর ঘোষণা দেন।
এনিয়ে তারা রাজশাহী স্টেশন ম্যানেজার, রাজশাহী জিআরপি ওসি, রাজশাহী আরএনবির সিআই ও রাজশাহী রেলওয়ের স্টেশন মাস্টারকে একটি চিঠি প্রদান করেন তাদের সংগঠনের তরফ থেকে।
সেখানে লেখা আছে, ‘অদ্য ১০/০১/২০২২ ইং বিকাল ১৬/০০ ঘটিকা পর্যন্ত রাজশাহী লোকো ডিপোতে কর্মরত সকল এলএম/এসএলএম ও এএলএম গণের ডিসেম্বর/২১ মাসের বেতনভাতা নিজ নিজ ব্যাংক একাউন্টে না আসায় ও আইবাস প্লাস প্লাস সৃষ্ট জটিলতা নিরসন না হওয়ার কারণে সকলে একত্রিত হইয়া এই মর্মে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করিয়েছে যে, আগামী ১১/০১/২০২২ ইং রাত্রি ০০/০০ ঘটিকা হইতে সকলে কর্মবিরতিতে চলিয়া যাইবে। ইহার কারণে রেল চলাচলে কোন প্রকার বিঘ্ন ঘটিলে কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকিবে এই মর্মে সংগঠন অবহিত করে।’
এদিকে রাজশাহী রেলওয়ের স্টেশন ম্যানেজার মো. আব্দুল করিম জানান, গত ডিসেম্বর মাসের বেতন ভাতা তারা পায়নি। এছাড়া তাদের মাইলেজের একটি সমস্যা রয়েছে। একারণে তারা কর্মবিরতির ঘোষণা দিয়েছিলেন। পরে জিএম স্যার ঊর্ধ্বতনের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা সাপেক্ষে বিষয়টির প্রাথমিক সমাধান করেছেন বলে জানান তিনি।
এদিকে বাংলাদেশ রেলওয়ে রানিং স্টাফ ও শ্রমিক কর্মচারী সমিতির রাজশাহী শাখার সাধারণ সম্পাদক মো. শামীম আকতার বলেন, গত ৬ জানুয়ারিই কেন্দ্রের নির্দেশনা অনুযায়ী আমাদের আজকের কর্মসূচি ছিল। তবে জিএম স্যার রাতে আমাদের আশ্বাস দিয়েছেন অন্য হিসাব নম্বর থেকে আমাদের পাওনা বেতন ভাতা প্রদান করা হবে। আগামীকাল থেকেই আমাদের বেতনের ব্যাংক নম্বরে টাকাগুলো দিয়ে দেওয়া হবে। কিন্তু আমাদের আইবাস প্লাস প্লাসে মাইলেজের অর্থ যোগ না হওয়া পর্যন্ত ও অন্যান্য দাবি মানা না পর্যন্ত আন্দোলন চলমান থাকবে।
রানিং স্টাফদের এ নেতা আরও বলেন, আমাদের এ সমস্যা নিরসনের ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় রেলওয়ের শ্রমিক লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট হুমায়ুন কবিরসহ অন্যান্য নেতারা প্রায় ১৬ বার মন্ত্রী ও সচিবের সঙ্গে বসা হয়েছে। তারাও আশ্বাস দিয়েছেন বিষয়টি দেখবেন। আমরাও সেই আশাতেই রয়েছি।
এবিষয়ে রাজশাহী পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের জেনারেল ম্যানেজার অসীম কুমার তালুকদার বলেন, বছরে কত টাকা লাগবে তার একটি হিসাব বা বাজেট অনুমানের ওপর করা হয়। কিন্তু এ অর্থবছরে হয়তোবা কোনোভাবে হিসাবে দু’একটি শূন্যের গড়মিল হয়েছে। একারণে আমাদের কিছু টাকার ঘাটতি হয়েছে। হাউজরেন্ট ও মেডিকেল খাতের টাকা ছাড়া পড়েছে। একারণে ডিসেম্বর মাসের বেতন বাকি রয়েছে। তবে ওই অর্থ মঙ্গলবার থেকেই তাদের বেতন একাউন্টে প্রদান করা হবে।
তিনি জানান, এবিষয়ে সকাল থেকেই সমস্যার সমাধানে আলোচনা চলমান ছিল। পরে সমাধান মিলেছে। আপাতত বোনাস ফান্ড থেকে এ অর্থ প্রদান করা হবে। পরবর্তীতে বোনাস ফান্ডে পুণরায় অর্থ বরাদ্দ দিয়ে সেখানকার ঘাটতিও পূরণ করা হবে। তবে তাদের আইবাসে মাইলেজের ৭৫ শতাংশ অর্থ যোগ করার বিষয়টি নিয়ে রেল ও অর্থ মন্ত্রণালয়ে আলোচনা চলছে।
ফয়সাল/আরএইচ/এফএ/এএসএম