ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

ভুতুড়ে বিল আদায় করছে নীলফামারী বিদ্যুৎ বিভাগ

প্রকাশিত: ০৮:৪৯ এএম, ০৪ জানুয়ারি ২০১৬

নীলফামারীতে জনবল সঙ্কট দেখিয়ে মাসের পর মাস ভুয়া বিল দাখিল করছে বিদ্যুৎ বিভাগ। বিল প্রদান না করলে কেটে দেয়া হচ্ছে সংযোগ। মিটার থাকার পরও মানা হচ্ছে না মিটার রিডিং। বিদ্যুৎ অফিসে অভিযোগ দিলেও লাভ হচ্ছে না গ্রাহকদের।

বিদ্যুৎ অফিস থেকে বলা হচ্ছে মিটার নষ্ট হয়েছে নতুবা যে পরিমাণ বিদ্যুৎ ব্যবহার করছেন তার চেয়ে মিটারের রিডিং কম দেখাচ্ছে। মিটার পরিবর্তন করে ডিজিটাল মিটার লাগান তারপর সমস্যা হবে না। একদিকে বিদ্যুৎ বিভাগে অভিযোগ নিয়ে গেলে বলা হচ্ছে ডিজিটাল মিটার লাগান নাহলে বিদ্যুৎ বিল কমানো সম্ভব হবে না। ডোমার বিদ্যুৎ বিরুদ্ধে শত শত অভিযোগ থাকলে সমস্যা সমাধান কল্পে কোনো ভুমিকা রাখতে পারছে না।

সরেজমিনে বাংলাদেশ বিদ্যুত উন্নয়ন বোর্ড ডোমার নির্বাহী প্রকৌশলীর কার্যালয়ে গিয়ে জানা যায়, গ্রাহকদের বিভিন্ন অভিযোগ আর ভোগান্তির কথা। ডোমার বিদ্যুতায়ন বোর্ডের আওয়ায় গ্রাহক রয়েছে ১৯ হাজার ২শ` ৮০ জন। নতুন আরও ২ হাজার ৯শ` গ্রাহকের লাইন সংযোগ দেয়া হয়েছে। ডোমার, ডিমলা ও দেবীগঞ্জের উপজেলার কিছু অংশের মিলে মোট গ্রাহক দাঁড়িয়েছে ২২ হাজার ১শ` ৮০ জন গ্রাহক।

সরকারিভাবে এক হাজার ২শ` ৫০টি গ্রাহকের জন্য একজন করে স্থায়ীভাবে মিটার দেয়ার নিয়ম থাকলেও এখানে কেউ কর্মরত নেই। বিদ্যুত বিভাগ বলছে স্থায়ীভাবে মিটার রিডারের ১৮টি পদই রয়েছে শুন্য। অস্থায়ী ভিত্তিতে আটজনকে নিয়োগ প্রদান করা হলেও নামে মাত্র বেতন দেয়ায় তারা মিটার রিডিং করছেন না।

প্রতিমাসে শত শত অভিযোগ আসলেও জনবল না থাকায় সেটির তদন্ত করতে পারছে না বিদ্যুৎ বিভাগ। প্রতিটি মিটারের জন্য সরকারিভাবে এক দশমিক ৮০ টাকা হারে ২২ হাজার ১শ` ৮০ জন গ্রাহকের নিকট থেকে ৩৯ হাজার ৯শ` ২৪ টাকা বেতন দেয়ার নিয়ম থাকলেও আটজন অস্থায়ী মিটার রিডারকে দেয়া হচ্ছে ৩২ হাজার টাকা।

বিদ্যুত অফিসে কথা হয় ডোমার উপজেলা বামুনিয়া গ্রামের আবাসিক গ্রাহক (গ্রাহক নম্বর-৬৪৯৬/অ) শ্রী সুধন্য চন্দ্র রায়ের সঙ্গে। তিনি অভিযোগ করে বলেন, আমার মিটার রিডিং ২ হাজার ৬শ` ৭০ হলেও গত অক্টেবর/১৫ মাসের বিলে মিটার রিডিং দেখা হয়েছে ৪ হাজার ২শ` ৭০। আমার বিদ্যুত বিভাগ ১৬শ` ইউনিটের বিল বেশি নিয়েছে। তিন বছর থেকে তিনি মিটারের বিপরীতে ১শ` ৫ টাকা থেকে ১শ` ২০ টাকার বিদ্যুত বিল প্রদান করতে আসছিলেন।

গত জুলাই মাসে থেকে বিদ্যুত বিল আকস্মিকভাবে বেশি দেখাতে শুরু করে বিদ্যুত অফিস। বার বার অভিযোগ দিলেও বিদ্যুৎ বিভাগ মিটার রিডিংয়ের বেশি কিছু বা সমন্বয় করতে চাচ্ছে না। অথচ বাড়তি তিনটি বাল্ব জ্বলে কীভাবে বিদ্যুতের সমন্বয় হবে তিনি বুঝতে পারছেন না। বিদ্যুৎ বিভাগ বলছে আপনার এনালক মিটারটি পরিবর্তন করে ডিজিটাল মিটার লাগান বিল বেশি আসবে না। সুধন্য রায় মিটার পরিবর্তন করতে চান কিন্তু তারা এক হাজার ৬শ` ইউনিটের টাকা কিভাবে ফেরত অথবা সমন্বয় করবে বুঝতে পারছেন না।

ডিমলা বাবুরহাট গ্রামের মৃত তহিদুল ইসলামের (গ্রাহক নম্বর- ২৮২/অ) বাড়িতে বেসরকারি এনজিও পল্লীশ্রী ভাড়া নিয়ে তাদের কার্যালয় করেছে। এই কার্যালয়ের মিটার না দেখে ডোমার বিদ্যুৎ অফিসে বসে বিল উত্তোলন করায় এখানো দুই হাজার ৫শ` ইউনিটের বিল বেশি প্রদান করা হয়েছে। গত নভেম্বর মাসে উক্ত গ্রাহকের হিসেব ২৮ হাজার ৬শ` ৪০ ইউনিট দেখানো হলেও মিটার রিডিং রয়েছে ২৬ হাজার ৫শ` ৩০ ইউনিট। এ ব্যাপারে বেসরকারী এনজিওটি বার বার অভিযোগ দিয়ে সুফল পাচ্ছে না।

ডিমলা বাবুরহাট গ্রামের হাসানুজ্জামান (গ্রাহক নম্বর-৬১৩/অ) নভেম্বর মাসে বিল প্রদান করে ৭ হাজার ২শ` ৭০ ইউনিটের। কিন্তু ৪ জানুয়ারি উক্ত গ্রাহকের মিটার রিডিং রয়েছে ৭ হাজার ৯৫ ইউনিট। হাসানুজ্জামান জানান, বিদ্যুৎ বিভাগ এক হাজর ৪শ` ৭৫ ইউনিট বিল বেশি প্রদান করলেও মিটার সমন্বয় করতে বলা হলেও করছে না। বিদ্যুত বিভাগ জরুরি ভিত্তিতে ডিজিটাল মিটার লাগানের জন্য বলছে।

এভাবে চলছে ডিমলার ৪ হাজার ৫শ`, ডোমারে ১৫ হাজার ২শ` ও দেবীগঞ্জ উপজেলার ২ হাজার ৪শ` ৮০ জন গ্রাহকের ভোগান্তি। বিদ্যুৎ বিভাগ বলছে সাড়ে তিন হাজার গ্রাহক ডিজিটাল মিটার নিলে তাদেরকে আর ভোগান্তিতে পড়তে হবে না।

ডোমার বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী (ভারপ্রাপ্ত) আব্দুল মতিন জাগো নিউজকে বলেন, ডোমার বিদ্যুত অফিসে ১৮ জন মিটার রিডার থাকার কথা থাকলেও স্থায়ীভাবে একজনও নেই। বাধ্য হয়ে আটজনকে অস্থায়ী ভিত্তিতে নিয়োগ প্রদান করা হয়েছে। অস্থায়ী মিটার রিডার দিয়ে মিটার কাজ করার কারণে এ সমস্যার তৈরি হচ্ছে।

তিনি বলেন, ডিজিটাল মিটার থাকলে গ্রাহকরা ভোগান্তিতে পড়বনি না। গ্রাহকের অতিরিক্ত বিলের কিভাবে সমন্বয় করা হবে তিনি এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

জাহেদুল ইসলাম/এমজেড/পিআর