ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

বেতনের টাকায় ৭ বছরে ৭০০০ গাছ লাগিয়েছেন আনোয়ার হোসেন

মাসুদ রানা | প্রকাশিত: ০৪:২০ পিএম, ২২ ডিসেম্বর ২০২১

বৃক্ষপ্রিয় মানুষ কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার হলোখানা ইউনিয়নের টাপুরচর গ্রামের বাসিন্দা আনোয়ার হোসেন। সাত বছর ধরে গ্রামীণ ও শহরের সড়কসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সামনে সাত হাজারেরও বেশি গাছ লাগিয়েছেন তিনি। শহরের সৌন্দর্যবর্ধনে গড়েছেন ফুলের বাগানও। শুধু তাই নয়, এসব গাছ ও ফুলের বাগান নিজ হাতেই পরিচর্যা করে যাচ্ছেন তিনি। রোপণ করা সাড়ে সাত হাজার গাছের মধ্যে এখন প্রায় চার হাজার গাছে ফুল ও ফল ধরেছে।

টাপুরচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দপ্তরি পদে কর্মরত আনোয়ার হোসেন। তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ছোটবেলা থেকেই প্রকৃতির প্রতি তার অগাধ ভালোবাসা। এ ভালোবাসার টানেই সাত বছর থেকে নিজের হলোখানা ইউনিয়নসহ কুড়িগ্রামের বিভিন্ন রাস্তাঘাট, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন ফুল-ফলসহ ভেষজ গাছ লাগানো শুরু করেন তিনি। কাজের এ ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে এলাকাবাসীর কাছ থেকে সামান্য জমি নিয়ে নিজের নার্সারিতে শুরু করেন চারা রোপণ। সেইসঙ্গে চালিয়ে যেতে থাকেন বৃক্ষরোপণের কাজ।

jagonews24

আনোয়ার হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, ‘এখন পর্যন্ত কুড়িগ্রামের বিভিন্ন স্থানে সাড়ে সাত হাজার গাছ লাগিয়েছি। আমি একজন সরকারি কর্মচারী। সামান্য বেতন যা পাই তা থেকে প্রতি মাসে ১০০০ টাকা বৃক্ষরোপণের পেছনে ব্যয় করি।’

jagonews24

শহরের তারামন বিবি সড়কে দীর্ঘ আট কিলোমিটার বিভিন্ন ধরনের প্রায় ৫০০ গাছের চারা রোপণ করেছেন আনোয়ার হোসেন। অনেক গাছে ফল এসেছে। হলোখানা ইউনিয়ন পরিষদ থেকে কুড়িগ্রাম পৌরসভা পর্যন্ত প্রায় ছয় কিলোমিটার রাস্তাজুড়ে ফল ও ফুলের গাছ রোপণ করেছেন। সৌন্দর্যবর্ধনে কুড়িগ্রাম বাস টার্মিনাল থেকে সার্কিট হাউজ পর্যন্ত রাস্তাতে লাগানো সোনালু গাছে ফুল ধরেছে।

jagonews24

এখানেই শেষ নয়, কুড়িগ্রাম পৌর শহরের সড়ক বিভাজকগুলোতে বর্জ্য অপসারণ করে ফুল ও ফলের গাছ, বাংটুর ঘাট এলাকা ও ধরলা নদীরক্ষা বাঁধে ৩০০ গাছের চারা, কুড়িগ্রাম আলিয়া কামিল মাদরাসা থেকে বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন হোটেল অর্নব প্যালেস পর্যন্ত কৃষ্ণচূড়ার গাছ লাগিয়েছেন বৃক্ষপ্রিয় এই মানুষটি। সীমান্তবর্তী ঝাকুয়াটারী মসজিদ মাঠেও লাগিয়েছেন বিভিন্ন ধরনের গাছ।

jagonews24

২০১৯ সালে কুড়িগ্রাম আলিয়া কামিল মাদরাসায় বজ্রপাতে মাদরাসা ভবনসহ গুরুত্বপূর্ণ নথি পুড়ে যায়। তখন আনোয়ার হোসেনের মাথায় আসে বজ্রপাত থেকে পরিত্রাণ পেতে তালগাছের বীজ রোপণ করতে হবে। সেই চিন্তা থেকেই কুড়িগ্রামের বিভিন্ন জায়গায় তালগাছের বীজ রোপণ করেছেন তিনি।

jagonews24

বৃক্ষরোপণের আহ্বান জানিয়ে আনোয়ার হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, ‘গ্রামাঞ্চলের যেসব মানুষ ফল কিনে খেতে পারেন না তারা আমার লাগানো গাছের ফল খেয়ে ফলের চাহিদা পূরণ করতে পারেন। আমি অসংখ্য ফল ও ফুলের চারা রোপণ করেছি। যত বেঁচে আছি ততদিন আমার এ প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে। তবে প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষায় সবারই উচিত গাছ লাগানো।’

jagonews24

স্থানীয় স্কুলশিক্ষার্থী হাবিবুর রহমান হাবির জাগো নিউজকে বলে, ‘দীর্ঘদিন ধরে আনোয়ার ভাইয়ের সঙ্গে গাছ লাগানোর কাজে নিয়োজিত আছি। এ পর্যন্ত কয়েক হাজার গাছ লাগিয়েছি। আমাদের এ কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।’

jagonews24

টাপুরচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক আ ন ম আব্দুল খালেক জাগো নিউজকে বলেন, ‘বৃক্ষপ্রিয় আনোয়ার হোসেন টাপুরচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এমএলএসএস। সে পরিবেশকে সৌন্দর্যমণ্ডিতকরণ ও প্রাকৃতিক বিপর্যয় থেকে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় দীর্ঘদিন ধরে নিজ খরচে গাছ লাগিয়ে আসছে। তার লাগানো গাছে যেমন পরিবেশের সৌন্দর্য বৃদ্ধি পাচ্ছে তেমনি চলন্ত পথিক তার লাগানো গাছের ছায়ার নিচে বসে আশ্রয় নিচ্ছে। তার মতো আমাদেরও বৃক্ষরোপণে এগিয়ে আসা উচিত।’

কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজের উপাধ্যক্ষ ও উদ্ভিদবিদ মো. মির্জা নাসির উদ্দিন বলেন, আনোয়ার হোসেন আমাদের সবার কাছে একটি প্রেরণার উৎস। গাছ লাগানোর ফলে কুড়িগ্রাম শহরে একদিকে যেমন শোভাবর্ধন হচ্ছে অন্যদিকে শহরের পরিবেশ আরও উন্নত হচ্ছে।

মো. মাসুদ রানা/এসআর/এএসএম