প্রাণের উৎসবে পরিণত কার্নিভাল
বিশ্বের দীর্ঘতম কক্সবাজারে ‘মেগা বিচ কার্নিভাল’কে ঘিরে সৈকতের বালিয়াড়িতে প্রাণের উৎসবে মাতোয়ারা পর্যটক ও স্থানীয়রা। লাবনী পয়েন্টের কোথাও তিল ধারণের ঠাঁই নেই। দেশের খ্যাতনামা শিল্পীদের সাড়া জাগানো গান আর নানা ধরণের জলক্রীড়ায় মাতোয়ারা পর্যটকের প্রেরণায় কার্নিভাল পেয়েছে এক অনন্য পূর্ণতা। তাই পর্যটন সচিব খোরশেদ আলম চৌধুরীর কণ্ঠে তাল মিলিয়ে সবার একটাই দাবি কার্নিভালের আয়োজন যেন প্রতিবছরই হয়।
পর্যটন বর্ষকে সামনে রেখে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে আয়োজিত ৩ দিনব্যাপী মেগা বীচ কার্নিভালের শুক্রবার ছিল দ্বিতীয় দিন। বর্ণিল আয়োজনের দ্বিতীয় দিনে পর্যটক ও স্থানীয়দের উপস্থিতি ছিল রেকর্ড সংখ্যক। সৈকতের কলাতলীর মোড় পয়েন্ট থেকে মাদ্রাসা পয়েন্ট পর্যন্ত কোথাও তিল পরিমাণ খালী জায়গা ছিলনা। উপস্থিতিদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠে বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত।
কার্নিভালের আয়োজনের অংশ হিসেবে সুগন্ধা পয়েন্ট ও লাবণী পয়েন্টে শুক্রবার সকাল থেকেই শুরু হয় কর্মসূচি বাস্তবায়ন। হট এয়ার বেলুন, কাবাডি, বীচ ফুটবল ম্যাচ, বালু ভাস্কর্য, সাইক্লিং এ পর্যটক ও স্থানীয়রা অতিমাত্রায় আনন্দ উপভোগ করে।
এছাড়া দূর আকাশে ঘুড়ি উঠিয়ে নিজেদের উঠিয়ে দেন পর্যটকরা। নানা রঙ্গের ঘুড়িতে রঙ্গিন হয়ে উঠে সমুদ্র সৈকতের আকাশ। আকাশ পানে ঘুড়ির সঙ্গে নতুন বছরের শুরুতে নিজেদের সকল দুঃখ গ্লানিও উঠিয়ে দেন পর্যটকরা। ঘুড়ি উঠানোর পাশাপাশি আকাশে ফানুস উঠিয়েও আনন্দ উপভোগ করেন পর্যটকরা। সম্প্রীতির মেল বন্ধন ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে সকল ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সহাবস্থানের প্রত্যাশায় নীল আকাশে ফানুস উঠিয়ে দেয়া হয়।
এছাড়া লায়ন ড্যান্স, মাইক্রো লাইট এয়ারক্রাফট, সেইলবোট, প্যারাসেলসহ নানা আয়োজনে দর্শকরা মুগ্ধ হয়ে উঠে। রাখাইন শিল্পীদের মনোমুগ্ধকর নৃত্যের তালে তালে পর্যটকদের মন মিশে যায় সম্প্রীতির ঐতিহ্যের সঙ্গে। বিকেলের সৈকতে দেশের নামজাদা শিল্পীরা গান গেয়ে দর্শকদের সুরের মূর্ছনায় ভাসিয়ে দেন। ফকির শাহাবউদ্দিন ও শফিমণ্ডলের গানের তালে তালে মুখরিত হয়ে উঠে কার্ণিভালের ক্যানভাস। চিরকুট ব্যান্ডের জনপ্রিয় ‘কানামাছি সত্য মিথ্যা’ আর ভাইকিংসের গান পর্যটকের মন কেড়ে নেয়। এরপর মঞ্চে উঠে সাড়া জাগানো সংগীত শিল্পী আঁখি আলমগীর। এই শিল্পীও দর্শক মাতিয়ে মঞ্চ ত্যাগ করেন।
উপস্থাপকদের কণ্ঠে এলআরবি ব্যান্ডের দেশ কাঁপানো শিল্পী আইয়ুব বাচ্চুর নাম শুনার সঙ্গে সঙ্গে উচ্ছ্বাস শুরু হয় দর্শকদের মধ্যে। বেশ কয়েকটি জনপ্রিয় গান গেয়ে দর্শকদের মাতাল করে তুলেন এ গুনী শিল্পী। লাখো উপস্থিতির লোভ সংবরণ করতে না পেরে এক পর্যায়ে সব দর্শকদের সঙ্গে সেলফি বন্দী হন আয়ুব বাচ্চু।
বিকেলে হঠাৎ কার্নিভালের মঞ্চে হাজির হয় কক্সবাজারের দুই কৃতি সন্তান মন্ত্রিপরিষদ সচিব শফিউল আলম ও পর্যটন সচিব খোরশেদ আলম চৌধুরী। নিজের অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে আনন্দ আর উল্লাসে ভেসে উঠেন সচিব শফিউল আলম। তিনি বলেন, এতো সুশৃঙ্খল ও সুন্দরভাবে একই সঙ্গে এত বিশাল মানুষের উপস্থিতি সত্যিই দৃষ্টান্ত। তাই তিনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও কার্নিভাল আয়োজকদের ধন্যবাদ জানান।
পর্যটন সচিব খোরশেদ আলম চৌধুরী নতুন বছরের শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, কার্নিভাল সত্যিই সাড়া ফেলেছে। তাই আবারো এখন থেকে নিয়মিত প্রতিবছর কার্নিভাল আয়োজনের ঘোষণা দেন।
এদিকে বছরের প্রথম দিন হওয়ায় পর্যটকের উপস্থিতি হয়েছে লক্ষ্যণীয়। তাই পর্যটকে ঠাসা হয়ে পড়েছে কক্সবাজারের প্রতিটি হোটেল মোটেল। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় প্রচুর পরিমাণ পুলিশ-র্যাব নিয়োজিত রয়েছে। এ পর্যন্ত কোথাও কোন ধরণের আইনশৃঙ্খলা ব্যাঘাত ঘটেনি।
প্রথমবারের মত কার্নিভাল আয়োজন নিয়ে কিছুটা শঙ্কায় থাকলেও এখন অত্যন্ত উৎফুল্ল আয়োজক কর্তৃপক্ষও। লাখো পর্যটক ও স্থানীয়দের উপস্থিতি তাদের উৎসাহ বাড়িয়েছে বহুগুণ। ভবিষ্যতেও এই আয়োজনের সাথী হওয়ার প্রত্যয় তাদের।
জেডএইচ