লাঠি নিয়ে নৌকা প্রার্থীর শোডাউন-মিছিল
নির্বাচনের দিন যতই এগিয়ে আসছে ততোই উত্তপ্ত হয়ে উঠছে ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলা। রোববার (১২ ডিসেম্বর) বিকেলে উপজেলার ওমেদপুর ইউনিয়ন নির্বাচনের আওয়ামী লীগ মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী সাবদার হোসেন মোল্লা অর্ধশতাধিক মোটরসাইকেলে সমর্থকদের নিয়ে শোডাউন করেন।
এ সময় মোটরসাইকেল আরোহীদের বড় বাঁশের লাঠি বহন করতে দেখা যায়। শোডাউন শেষে সমর্থকরা লাঠি হাতে চেয়ারম্যান প্রার্থীর সঙ্গে রাস্তায় মিছিলও করেন। এ ঘটনার পর এলাকায় ভোটারদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
বিষয়টি জানতে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী সাবদার হোসেন মোল্লার সঙ্গে যোগাযোগ সম্ভব না হলেও ও তার ছেলে সাবেক উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান শামীম হোসেন মোল্লা বলেন, শোডাউন নয়, তবে আজ স্থানীয় রয়েড়ার হাটবার ছিল। সেখানে কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে ভোট চাইতে গিয়েছিলেন আমার বাবা। তবে কর্মীদের লাঠিবহন আচরণবিধি লঙ্ঘন বলে স্বীকার করেন তিনি।
এ বিষয়ে শৈলকুপা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রফিকুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, অভিযোগ দিলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
অন্যদিকে বিষয়টি স্পষ্ট নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন বলে উল্লেখ করেছেন জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মোহা. আ. ছালেক। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, আমি মাত্র শুনলাম, এখনই উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তাকে ব্যবস্থা নিতে বলছি।
২৬ ডিসেম্বর চতুর্থ ধাপে ঝিনাইদহ সদর উপজেলার ১৫ ইউনিয়ন পরিষদের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। এছাড়া পঞ্চম ধাপে জেলার শৈলকুপায় ১২ ও হরিণাকুন্ডু উপজেলার আট ইউনিয়ন পরিষদের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।
তফসিল ঘোষণার পর থেকে চেয়ারম্যান ও মেম্বার প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটছে। সর্বশেষ রোববার সকালে হরিণাকুন্ডু উপজেলার রঘুনাথপুর ইউনিয়নের শ্রীফলতলা গ্রামে দুই মেম্বার প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে অন্তত ২০ জন আহত হন। আহতদের ঝিনাইদহ সদর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়।
এর আগে শনিবার দিনগত রাতে ঝিনাইদহ সদর উপজেলার গান্না ইউনিয়নের চশমা প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী নাসির উদ্দীনের মালিতার চন্ডিপুর বাজারের অফিস ভাঙচুর করা হয়। এনিয়ে তিনি নৌকা প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থীকে অভিযুক্ত করে জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ করেন।
নৌকা প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী আতিকুল হাসান মাসুম অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমার প্রতিপক্ষ নিজেরাই নিজেদের অফিস ভাঙচুর করে আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা প্রচারণা চালাচ্ছে।
এছাড়া ১০ ডিসেম্বর দিনগত রাতে ঝিনাইদহ সদর উপজেলা সাধুহাটি ইউনিয়নের বোড়াই গ্রামে স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী কাজী নাজির উদ্দীনের নির্বাচনী অফিস ভাঙচুরের অভিযোগ করা হয়।
৭ ডিসেম্বর বিকেলে জেলার শৈলকুপা উপজেলার সারুটিয়া ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী এবং বিদ্রোহী প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ সময় উভয়পক্ষের অন্তত পাঁচজন আহত হন। বিক্ষুব্ধ সমর্থকরা তিনটি মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগ করে পুড়িয়ে দেয়।
এদিন বিকেলে আওয়ামী লীগ মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী মাহমুদুল হাসান মামুন মোটরসাইকেল শোডাউন দিয়ে ঝিনাইদহ থেকে কাতলাগাড়ী বাজারে পৌঁছালে বিদ্রোহী চেয়ারম্যান প্রার্থী জুলফিকার আলী কাইসার টিপুর সমর্থকরা হামলা চালান। এতে উভয়পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে।
এ নিয়ে ঝিনাইদহের পুলিশ সুপার মুনতাসিরুল ইসলাম ব্যস্ত থাকায় তার বক্তব্য জানা যায়নি। তবে সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শেখ মো. সোহেল রানা বলেন, এখন পর্যন্ত বড় ধরনের কোনো সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেনি। এ পর্যন্ত বিভিন্ন স্থানে দুপক্ষের সমর্থকদের মধ্যে চড়-থাপ্পড়ের মতো ঘটনার সংবাদ পাওয়া গেছে। তবে অপ্রীতিকর কোনো ঘটনার খবর পাওয়া মাত্রই ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। এছাড়া কয়েক স্থানে নির্বাচনী অফিস ভাঙচুরের ঘটনায় তদন্ত চলছে।
আব্দুল্লাহ আল মাসুদ/এসজে/জিকেএস