ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

ফ্রিল্যান্সিংয়ে সায়েমের মাসে আয় ৮০ হাজার টাকা

নিজস্ব প্রতিবেদক | রংপুর | প্রকাশিত: ১০:৩৭ এএম, ০৫ ডিসেম্বর ২০২১

আবু সায়েম (২৪) এলাকার সবার কাছে একজন শিক্ষার্থী হিসেবে পরিচিত হলেও অনলাইন জগতে তার আরেক পরিচয় একজন সফল ফ্রিল্যান্সার কিংবা এ বিষয়ে একজন দক্ষ প্রশিক্ষক। পড়াশোনার পাশাপাশি ফ্রিল্যান্সিং করে এখন মাসে প্রায় ৭০-৮০ হাজার টাকা আয় করেন সায়েম। এখন তিনি অন্যদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন অনলাইনে কাজ করে উপার্জন করার।

তরুণ এই স্বপ্নবাজ যুবকের বাড়ি রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার আলমবিদিতর ইউনিয়নের দোলাপাড়া গ্রামে। গ্রামের স্বল্প আয়ের পরিবারে বেড়ে ওঠা তরুণদের ফ্রিল্যান্সিং পেশায় দক্ষ করে তুলে বেকার সমস্যা ঘোচানোর পথ দেখাতে তার আগ্রহের কমতি নেই। কর্মহীন বেকার যুবকদের জন্য কিছু করার স্বপ্ন নিয়ে নিজ গ্রামে গড়ে তুলেছেন প্রশিক্ষণ কেন্দ্র।

দূরদর্শিতা, পরিশ্রম ও মেধাকে কাজে লাগিয়ে সংসারের হাল ধরা এই সায়েমের গল্পটাও তাই ভিন্ন। নবম শ্রেণিতে পড়ার সময় ২০০৯ সালে বাবা আব্দুল আউয়াল মারা যান। তার বাবা ছিলেন স্থানীয় একটি মসজিদের ইমাম। মা আরজিনা বেগম গৃহণী। চার বোন ও দুই ভাইয়ের মধ্যে আবু সায়েম পঞ্চম। সবার বড় বোনের বিয়ে হলেও বাবার মৃত্যুর পর বাকি তিন বোন ও ছোট ভাইসহ মাকে নিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েন সায়েম। জীবনযুদ্ধে হার না মানা সায়েমের লড়াইটা শুরু হয় সেখান থেকেই।

Sayem

পড়াশোনার পাশাপাশি নেট দুনিয়ায় ঢুকতে শুরু করেন। এভাবেই উচ্চ মাধ্যমিক পাস করার পর ২০১৩ সালে পুরোদমে শুরু করেন ফ্রিল্যান্সিং। যদিও শুরুর অভিজ্ঞতাটা একটু ভিন্ন। মুখোমুখি হতে হয় নানা বাধা-বিপত্তির। তবুও হাল ছাড়েননি সায়েম। দীর্ঘ আট বছরের কঠোর পরিশ্রমে একটু একটু করে এগিয়ে চলা সায়েম পৌঁছে যান সফলতার দ্বারপ্রান্তে।

বর্তমানে সায়েম রংপুর ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে কম্পিউটার সায়েন্সে বিভাগের সপ্তম সেমিস্টারে অধ্যয়ন করছেন। ফ্রিল্যান্সিংয়ের আয় দিয়ে দুই বোনের বিয়ে দিয়েছেন। ছোট ভাই অনার্স দ্বিতীয় বর্ষে এবং আরেক বোন মাস্টার্স সম্পন্ন করেছেন।

আবু সায়েম এখন তার নিজের গড়া প্রতিষ্ঠানের সিইও। ‘ইনবক্স আইটি ইনস্টিটিউট’ এবং ‘সায়েম একাডেমি’ নামে তার প্রতিষ্ঠানে অনেক তরুণ-তরুণী ফ্রিল্যান্সিং প্রশিক্ষণ নিয়ে স্বাবলম্বী হয়েছেন। রংপুরের বাইরে যারা প্রশিক্ষণ নিতে আগ্রহী তাদের জন্য খুলেছেন অনলাইন প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ‘সায়েম একাডেমি’।

আবু সায়েম বলেন, বাবা মারা যাওয়ার পর সংসারের হাল ধরার মতো সামর্থ্য ছিলো না। তখনই কিছু করার ইচ্ছা থেকে ঝুঁকে পড়ি ইন্টারনেটে। সারাদিন গুগল ও ইউটিউবসহ বিভিন্ন সাইট ঘেটে ফ্রিল্যান্সিংয়ের ধারণা রপ্ত করতে থাকি।

তিনি আরও বলেন, পরিবারে আমরা দুই ভাই ও চার বোন। এর মধ্যে আমার দায়িত্ব একটু বেশি। পড়াশোনার পাশাপাশি ফ্রিল্যান্সিং থেকে আমার আয়ের পথ খুলেছে। এখন মাসে আয় ৭০-৮০ হাজার টাকা। ফ্রিল্যান্সংয়ের আয় থেকে পরিবারের দেখভাল ও ছোট ভাইসহ বড় এক বোনের পড়ালেখার খরচ চালাচ্ছি।

তিনি আরও বলেন, বেকারত্ব একটা অভিশাপ। আমি চাই এ প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা ফ্রিল্যান্সিং শিখুক। পড়াশোনার পাশাপাশি নিজেরা কিছু করতে চাইলে ফ্রিল্যান্সিং সুবিধা নেয়া উচিত। প্রতিদিন ৮-১০ ঘণ্টা ফ্রিল্যান্সিং নিয়ে কাজ করতে পারলে বেকারত্ব ঘোঁচানো সম্ভব।

Sayem

তার কাছ থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে বর্তমানে স্বাবলম্বী হওয়া ময়মনসিংহের সাকিব আহমেদ নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সায়েম একাডেমিতে প্রশিক্ষণ নিয়ে ফ্রিল্যান্সিংয়ে ঘরে বসে আয় করার এই সুযোগ দেখে আমি উদ্বুদ্ধ হই। যোগাযোগ করে তিন মাসের একটি কোর্স সম্পন্ন করে আমি বর্তমানে নিজেই প্রতিমাসে ২০-২৫ হাজার টাকা উপার্জন করছি। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে পরবর্তীতে আরও আয় বৃদ্ধি করার স্বপ্ন তার।

রংপুরের একটি বেসরকারি পলিটেকনিকের শিক্ষার্থী সামিউল ইসলাম বলেন, সায়েম ভাইয়ের ‘ইনবক্স আইটি ইনস্টিটিউট’ থেকে অনেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে উপার্জন করছেন এমন তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেখার পর আমি যোগাযোগ করি। গত দেড়মাস ধরে প্রশিক্ষণ নিচ্ছি। এখন পর্যন্ত প্রশিক্ষণরত অবস্থায় গতমাসে সাড়ে পাঁচ হাজার টাকা উপার্জন করেছি। আমি আশাবাদী এই কোর্স সম্পন্ন করলে পড়াশোনার পাশাপাশি ফ্রিল্যান্সিং থেকে আয় করে পরিবারকেও সাপোর্ট দিতে পারবো।

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) রংপুর মহানগর সভাপতি অধ্যক্ষ ফখরুল আনাম বেঞ্জু বলেন, তথ্য প্রযুক্তির এই যুগে বর্তমান সরকারের যে প্রয়াস তাতে স্বাধীনভাবে উপার্জনের একটি অন্যতম মাধ্যম ফ্রিল্যান্সিং বা আউটসোর্সিং। শিক্ষিত তরুণরা পড়াশোনার পাশাপাশি এই ফ্রিল্যান্সিংয়ের মাধ্যমে আয় করে নিজের খরচ মিটিয়ে পরিবারকে যোগান দিয়ে যাচ্ছে এটি নিঃসন্দেহে দেশের অর্থনৈতিক খাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। এতে করে এই তরুণরা মাদক ও অন্যান্য অপরাধের সঙ্গে যুক্ত না হয়ে অর্থ উপার্জন করে যাচ্ছে। তবে বিভিন্ন ক্ষতিকর আসক্তিমূলক অ্যাপস ব্যবহার করে যুব সমাজ যেন পথভ্রষ্ট না হয়, সেজন্য কিছু নীতিমালা বা সরকারের নজরদারি থাকা দরকার বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

জিতু কবীর/এফএ/এমএস