ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

গোলযোগের মধ্য দিয়ে বগুড়ার ৯ পৌরসভায় নির্বাচন সম্পন্ন

প্রকাশিত: ১২:২৮ পিএম, ৩০ ডিসেম্বর ২০১৫

বেশ কয়েকটি কেন্দ্রে গোলযোগের মধ্য দিয়ে বগুড়ার ৯টি পৌরসভায় ভোটগ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। জেলার অন্তত ২১টি ভোটকেন্দ্রে ককটেল বিস্ফোরণ, পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর অফিস ভাঙচুর, ভোট জালিয়াতি, কেন্দ্র দখল, প্রার্থীকে কেন্দ্রে প্রবেশে বাধা ও মারপিটের ঘটনা ঘটেছে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বুধবার দুপুরে বগুড়া পৌরসভায় তাপসী রাবেয়া উচ্চ বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে ককটেল হামলা চালিয়ে ব্যালট পেপার ছিনতাই করেছে দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনায় ভোটগ্রহণ স্থগিত করে দেয়া হয়।

জানা যায়, বুধবার সকালে ভোটগ্রহণের শুরুটা শান্তিপূর্ণ হলেও এক ঘণ্টা পর থেকে বিভিন্ন স্থানে গোলযোগ শুরু হয়। দুপুরে ককটেল ফাটিয়ে তাপসি রাবেয়া কেন্দ্রে ঢুকে আওয়ামী লীগ সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী ইব্রাহীম আলী ও তার সমর্থকরা। এ সময় তাদের বাধা দিতে গেলে প্রতিদ্বন্দ্বী জামায়াতের কাউন্সিলর প্রার্থী এরশাদুল বারী এরশাদের দুই সমর্থক মোাসাদ্দেক ও মোজাম্মেলকে ছুরিকাঘাত করা হয়। তাদেরকে গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা আজাহার আলী বলেন, এসব কেন্দ্রে ৪০ থেকে ৫০টি ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। দুর্বৃত্তরা এ সময় একাধিক বুথে ঢুকে কয়েকশত ব্যালট পেপারে সিল মারে। পুলিশ ওই সময় হামলাকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে ছয় রাউন্ড গুলি ছোড়ে। ঘটনাস্থল থেকে অবিস্ফোরিত চারটি তাজা ককটেল উদ্ধার করেছে পুলিশ।

এর আগে বগুড়া পৌরসভার আইডিয়াল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে সহিংসতার ঘটনায় বেলা সোয়া ১২টা থেকে সোয়া ১টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ বন্ধ ছিল। এসময় এনামুল হক নামে একজন ভোটার আহত হন।

প্রিসাইডিং কর্মকর্তা আবদুর রশিদ এই ভোট কেন্দ্র্রে এক ঘণ্টা ভোট গ্রহণ বন্ধ থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করেন। এ ছাড়া নারুলি উত্তরণ উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্র, বগুড়া কলেজ কেন্দ্র ও জুবিলি উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে।

এদিকে বেলা পৌনে ১টার দিকে বগুড়া পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের ইয়াকুবিয়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের কেন্দ্রে যাবার পথে বগুড়ার ৭ আসনের বিএনপি দলীয় সাবেক এমপি হেলালুজ্জামান লালুকে লক্ষ্য করে দুর্বৃত্তরা পরপর চারটি ককটেল নিক্ষেপ করে। এতে হেলালুজ্জামান তালুকদার লালু আহত হন। স্থানীয়রা উদ্ধার করে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়ার পর তিনি বাসায় চলে যান। পরে হামলাকারীরা বিএনপির কাউন্সিলর প্রার্থী দেলোয়ার রহমান পশারি হিরুর নির্বাচনী কার্যালয় ভাঙচুর করে। ঘটনার প্রতিবাদে হিরু নির্বাচন বর্জন করেন।

শহরের ফুলবাড়ী আযিযুল হক কলেজ কেন্দ্রও দখলে নেয় আওয়ামী লীগের কর্মীরা। বেলা আড়াইটায় জলেশ্বরীতলা টাউন স্কুল কেন্দ্র থেকে ধানের শীষের পোলিং এজেন্টদের বের করে দেয়া হয়। বেলা ১২টায় ছয়পুকুরিয়া কেন্দ্র থেকে বিএনপির পোলিং এজেন্টদের বের করে দিয়ে ভোট ছিনিয়ে নেয় সরকারি দলের কর্মীরা।  

ভোটগ্রহণের শুরুতেই শহরের রহমাননগরে বিএনপির কাউন্সিলর প্রার্থী মাহবুর রহমান লুলকার উপর হামলা চালানো হয়। এতে তিনি আহত হন। পরে বেলা আড়াইটার দিকে পুনরায় তার উপর সন্ত্রাসী হামলা চালিয়ে ব্যাপক মারপিট করা হয়েছে।

এদিকে বেলা ১১টায় ধুনট পৌরসভা নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থীর সমর্থকদের মারপিটে বিদ্রোহী প্রার্থীর প্রচার কর্মী আলিম আলরাজি বুলেট (৪২) নামে এক যুবলীগ নেতা আহত হয়েছেন।

অপরদিকে, দুপুর ১টায় সারিয়াকান্দি পৌরসভার শালুকা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্রে আওয়ামী লীগ সমর্থিত মেয়র প্রার্থী আলমগীর শাহী সুমন নৌকা প্রতীকের সিল মারা তিনশ ব্যালট পেপার ব্যালটবাক্সে ঢুকিয়ে দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন আওয়ামী লীগের দুই বিদ্রোহীসহ বিএনপির মেয়র প্রার্থী।

আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী আব্দুল হামিদ সরদার (জগ), আব্দুর রশিদ ফারাজী (চামুচ) ও বিএনপির মেয়র প্রার্থী টিপু সুলতান (ধানের শীষ) অভিযোগ করে বলেন, দুপুর সাড়ে ১২টায় নৌকা প্রতীকের সিল মারা তিনশ’ ব্যালট পেপার ব্যালট বাক্সে ঢুকিয়ে দেন আলমগীর শাহীর সমর্থকরা।

দুপুরে সারিয়াকান্দি স্থানীয় পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্রে বিএনপি সমর্থিত মেয়র প্রার্থী আলহাজ টিপু সুলতান অভিযোগ করে বলেন, কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রিসাইডিং অফিসার মরজুর মরশেদ তাকে ভোট কেন্দ্রে প্রবেশ করতে দেননি।

এছাড়া সকালে ভোটগ্রহণ শুরুর কিছুক্ষণ পরেই নাশকতার অভিযোগে নন্দীগ্রাম উপজেলা ছাত্রশিবিরের সভাপতিকে আটক করে পুলিশ।

এদিকে, গত মঙ্গলবার মধ্যরাতে কাহালু পৌরসভায় ভোট কেনার সময় উপস্থিত জনতার হাতে ধরা পড়েছেন বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আব্দুল হান্নান। পরে তাকে পুলিশে সোপর্দ করা হয়।

জেলার মিডিয়া সেলের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার গাজিউর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, আটক ব্যক্তির স্ত্রী (৭, ৮ ও ৯ নং ওয়ার্ড) মহিলা কাউন্সিলর পদে নির্বাচন করছেন। তিনি স্ত্রীর পক্ষে ভোট কিনতে গেলে স্থানীয় জনগণ তাকে আটক করে পুলিশে দেয়া হয়।

নির্বাচন শান্তিপূর্ণ হয়েছে দাবি করে বগুড়ার পুলিশ সুপার আসাদুজ্জামান জানান, যা ঘটেছে তা বিচ্ছিন্ন ঘটনা। সামগ্রিকভাবে নির্বাচন সুষ্ঠু ছিলো।

লিমন বাসার/একে/আরআইপি