১০৩ টাকায় পুলিশে চাকরি পেয়ে কাঁদলেন তারা
মাত্র ১০৩ টাকা খরচ করে স্বপ্ন পূরণ হলো জয়পুরহাটের ১৯ তরুণ তরুণীর। ঘুষ-তদবির ছাড়াই পুলিশে চাকরি হয়েছে তাদের। মূল্যায়ন হয়েছে মেধা ও যোগ্যতার। পূরণ হয়েছে হতদরিদ্র বাবা-মার স্বপ্ন।
খুশিতে কেঁদে ফেললেন অনেকে। আর দায়িত্ব ও নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করে পুলিশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করার আহ্বান জানালেন পুলিশ সুপার।
রঙমিস্ত্রীর মেয়ে ফাতেমা আক্তার। স্বপ্ন ছিল পুলিশে চাকরি করার। কিন্তু স্বপ্নের সঙ্গে বাস্তবতার বিস্তর ব্যবধানে আশাহত হয়েছিলেন। হঠাৎ একদিন জানতে পারলেন পুলিশে চাকরি পেতে কোনো টাকা-পয়সা লাগে না। পরে আবেদন ফরম পূরণ করে লাইনে দাঁড়ালেন। সব বাছাইয়ে মেধা ও যোগ্যতায় উত্তীর্ণ হলেন।
বুধবার (২৪ নভেম্বর) রাত ৮টায় জয়পুরহাট পুলিশ লাইন্সে ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল (টিআরসি) পদে ফলাফল ঘোষণার পর আনন্দে কেঁদে ফেললেন এ তরুণী। পাশে এসে দাঁড়ালেন বাবা হযরত আলী ।
হযরত আলী বলেন, আমার জীবনের সবচেয়ে খুশির দিন আজ। বিনা পয়সায় আমার মেয়ের চাকরি হয়েছে। টাকা ছাড়া চাকরি হয় এটি আজই দেখলাম। ফাতেমার বাড়ি জয়পুরহাট সদর উপজেলার দেবীপুর গ্রামে।
জয়পুরহাট সরকারি শিশু পরিবারে বেড়ে উঠেছেন এতিম মাহমুদুল হাসান। মাত্র ১০৩ টাকায় পুলিশ কনস্টেবল পদে চাকরি হয়েছে তার। নাম ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গেই আবেগ আপ্লুত মাহমুদুল হাসান। কথা বলতে পারছিলেন না।
জেলার ক্ষেতলাল উপজেলার বিনাই এলাকার এ তরুণ বলেন, আমার বাবা বেঁচে থাকলে অনেক খুশি হতেন। আমার মা অন্যের বাড়িতে কাজ করেন। আমাদের নিজস্ব থাকার কোনো জায়গা নেই, আমার স্বপ্ন ছিলো নিজেই জমি কিনে বাড়ি করার। সেই বাড়িতে মা বোন নিয়ে থাকার। আমি বাংলাদেশ পুলিশের গর্বিত সদস্য হতে পেরেছি। দেশের জন্য নিজের জীবন বাজি রাখবো।
বুধবার জয়পুরহাট পুলিশ লাইন্সে ফল ঘোষণার পর পুলিশ কনস্টেবল পদে চূড়ান্তভাবে উত্তীর্ণ এসব প্রার্থীরা এভাবেই নিজেদের অনুভূতির কথা জানান। চূড়ান্ত এ ফলাফল ঘোষণা করেন জেলা পুলিশ সুপার মাছুম আহাম্মদ ভুঞা।
ফাতেমা ও মাহমুদুল হাসানের মতোই মোট ১৯ জন শুধুমাত্র মেধা ও যোগ্যতায় মাত্র ১০৩ টাকায় পুলিশে চাকরি পেয়েছেন।
জেলা পুলিশ সুপার মাছুম আহাম্মদ ভুঞা জানান, জয়পুরহাট জেলায় পুলিশের ১৯ জন কনস্টেবল নিয়োগে গত ১৫ ও ১৬ নভেম্বর ৭৬০ জন চাকরি প্রার্থী প্রাথমিক পরীক্ষায় অংশ নেন। এতে যাচাই-বাছাইয়ের পর শারীরিক সক্ষমতা অর্জন করেন ১৬৭ জন চাকরি প্রার্থী। গেল ১৭ নভেম্বর যাদের মধ্যে লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন ৪৫ জন। আর ২৪ নভেম্বর বুধবার চূড়ান্ত পরীক্ষায় পাস করেন ২৪ জন। যাদের মধ্যে ওইদিনই নিয়োগ দেওয়া হয় ১৯ জনকে। আর অপেক্ষমান আছেন ৫ জন।
তিনি জানান, বাংলাদেশের ইতিহাসে এ পুলিশ কনস্টেবল নিয়োগ নজিরবিহীন ঘটনা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে আইজিপি শতভাগ স্বচ্ছতার সঙ্গে এ নিয়োগ সম্পন্ন করার জন্য কড়া নির্দেশনা দিয়েছিলেন। আমরা পেশাদারিত্ব, সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে এ নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছি।
রাশেদুজ্জামান/এফএ/এএসএম