ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

চালনা-পাইকগাছায় বড় ২ দলের প্রার্থীরা হাই টেনশনে

প্রকাশিত: ১১:৪১ এএম, ২৯ ডিসেম্বর ২০১৫

রাত পোহালেই খুলনা জেলার চালনা ও পাইকগাছা পৌরসভার ভোটযুদ্ধ। দুই পৌরসভায় মেয়র কাউন্সিলর মিলে চূড়ান্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন ৮৯ প্রার্থী। দলীয় প্রতীকে এই প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া এই নির্বাচনে বড় দুই দলের প্রার্থীরা ভুগছেন হাই টেনশনে। ঘরে শত্রু থাকায় তাদের এই অবস্থার মুখে পড়তে হয়েছে বলে সূত্র জানিয়েছে।

এদিকে রাজনীতির মাঠের প্রধান দুই দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নৌকা এবং ধানের শীষের জমজমাট লড়াই দেখার অপেক্ষায় রয়েছেন দুই পৌর এলাকার প্রায় ২৫ হাজার ভোটার। বেশ আগে থেকে দলীয় প্রার্থীর বিজয় নিশ্চিত করতে উভয় রাজনৈতিক দল সর্বশক্তি নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন নির্বাচনী মাঠে। তবে শেষ মুহূর্তে প্রার্থীসহ রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতৃত্ব কৌশল নির্ধারণে ব্যস্ত সময় পার করছেন।

বাকি সময়টা হাই টেনশন আর টানটান উত্তেজনার মধ্যে অতিবাহিত করছেন প্রার্থী, ভোটার এবং রাজনৈতিক দলের নীতি নির্ধারকগণ। রাত পোহালেই শুরু হয়ে যাবে ভোটের কার্যক্রম।

এদিকে, আওয়ামী লীগের নৌকা আর বিএনপির ধানের শীর্ষ প্রতীক নির্বাচনী প্রতিদ্বন্দ্বিতা আসলেও প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টির কোনো প্রার্থী নেই নির্বাচনী ময়দানে। নির্বাচনী মাঠে প্রার্থী না থাকলেও ভোটের ফলাফল নির্ধারণে জাতীয় পার্টি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে যাচ্ছে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে ভোটের ময়দানে তৃতীয় শক্তি হিসেবে পরিচিত জাতীয় পার্টির সমর্থন যে দলের পক্ষে যাবে সেই দলের বিজয়ের পথ অনেকই সুগম হবে। তাই শুরু থেকেই নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণার জাতীয় পার্টিকে কাছে টানার প্রাণপণ চেষ্টা ছিল আওয়ামী লীগ-বিএনপির এমনকি স্বতন্ত্র প্রার্থীর।

শেষমেষ অনেকটাই সফল হয়েছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। তবে এখনো হাল ছাড়ছে না বিএনপি এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী। যদিও চালনা পৌরসভায় জাতীয় পার্টি আওয়ামী লীগ প্রার্থীকে সমর্থন দিলেও পাইকগাছা পৌরসভায় এখন পর্যন্ত কোনো দলকে সমর্থন দেয়নি। অবশ্য জাতীয় পার্টির সমর্থন পেয়েছেন এমন দাবি করেছেন পাইকগাছার আওয়ামী লীগ প্রার্থী। জাতীয় পার্টির স্থানীয় নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা হলে এমন আভাসও পাওয়া যায়।

এ ব্যাপারে চালনা উপজেলা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক আজগর হোসেন ছাব্বির জাগো নিউজকে বলেন, জেলা বা কেন্দ্রীয়ভাবে কোনো নির্দেশনা না থাকলেও চালনার উন্নয়নের স্বার্থে আওয়ামী লীগ প্রার্থীকে আমরা সমর্থন দিয়েছি।

পাইকগাছা উপজেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি মোস্তফা কামাল জাহাঙ্গির বলেন, পাইকগাছা পৌরসভা সৃষ্টির আন্দোলনে জাতীয় পার্টির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। যেহেতু শীর্ষ নেতাদের এখনো কোনো নির্দেশনা পাওয়া যায়নি সেহেতু এখন পর্যন্ত কোনো দলকে আমরা সমর্থন জানাইনি। তবে উন্নয়নের স্বার্থে যোগ্য প্রার্থীর পক্ষে জাতীয় পার্টির সমর্থন থাকবে।

অপরদিকে, পাইকগাছা পৌর নির্বাচনী এলাকায় জাতীয় পার্টির দলীয় সমর্থিত ভোটের সংখ্যা প্রায় এক হাজার। এছাড়া এবারের নির্বাচনে এই এলাকায় এক হাজার ৫শ’ ৫৩ জন নতুন ভোটার হয়েছেন। জাতীয় পার্টির ভোট বাক্স এবং নতুন ভোটারদের পক্ষে নিতে আগে থেকেই বেশ কৌশল নিয়ে মাঠে নেমেছে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও স্বতন্ত্র প্রার্থী।

এখানেও জাতীয় পার্টির স্থানীয় শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে গোপনে দেন-দরবারের চেষ্টা চলছে বলে বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা গেছে। আর নতুন ভোটারদের মন ভোলাতে নতুন নতুন প্রতিশ্রুতি থাকছে প্রার্থীদের ঝুলিতে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে জাতীয় পার্টির ভোটার আর নতুন ভোটার এবারের নির্বাচনে সকল সমীকরণ পাল্টে দিতে পারে।  
 
জানা যায়, পাইকগাছা পৌরসভায় মেয়র পদে তিনজন, সাধারণ কাউন্সিলর পদে ৩৪ জন এবং সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ছয়জন প্রার্থী রয়েছেন। চালনা পৌরসভায় মেয়র পদে তিনজন, সাধারণ কাউন্সিলর পদে ৩৩ জন এবং সংরক্ষিত কাউন্সিল পদে ১০ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। প্রার্থীরা শেষ মুহূর্তে ছুটে চলছেন পল্লীর এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে।

ভোটারদের কাছে নিজের যোগ্যতার পাশাপাশি দিচ্ছেন বিভিন্ন প্রতিশ্রুতি। ভোটাররাও শেষ মুহূর্তে কষছেন হিসাব নিকাশ। প্রার্থীর যোগ্যতার পাশাপাশি রাজনৈতিক পরিচয়কে মূল্যায়ন করতে চাইছেন ভোটের মাধ্যমে।

নির্বাচন মানেই প্রতীকের লড়াই। আর বাংলাদেশে ৯০ দশক থেকে প্রতীকের লড়াই মানেই নৌকা আর ধানের শীষের প্রতিযোগিতা। এতদিন কেবল জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পাওয়া যেত এই আমেজ। কিন্তু স্থানীয় সরকারের অন্যসব  ভোটের লড়াইয়ে দলগুলো অংশ নিলেও তাদের সমর্থিত প্রার্থীরা পছন্দের এই প্রতীকগুলো পেতেন না।

কারণ, কাগজে কলমে এই নির্বাচন বরাবর হয়ে আসছে নির্দলীয় ব্যানারে। তবে আইন সংশোধনে এবার এই ‘দ্বিচারিতা’র অবসান হয়েছে। পৌরসভা নির্বাচনেও মেয়র প্রার্থীরা পেয়েছেন দলের জাতীয় নির্বাচনের প্রতীক। চালনা পৌরসভায় মেয়র পদে নৌকা প্রতীক নিয়ে পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সনত কুমার বিশ্বাসের প্রতিপক্ষ হয়ে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে লড়ছেন পৌর বিএনপির আহ্বায়ক শেখ আব্দুল মান্নান।

একই সঙ্গে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ভোটযুদ্ধে থাকছেন বর্তমান মেয়র অচিন্ত কুমার মণ্ডল। অপরদিকে, পাইকগাছা পৌরসভায় বর্তমান মেয়র সেলিম জাহাঙ্গীর এবার নৌকা প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ধানের শীষ প্রতীকের অ্যাড. জিএম আব্দুস সাত্তারের সঙ্গে। পাশাপাশি স্বতন্ত্র প্রার্থীর ব্যানারে জামায়াত নেতা অ্যাড.আব্দুল মজিদ গাজী রয়েছেন নির্বাচনী ময়দানে।

আলমগীর হান্নান/এমজেড/পিআর