ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

জলে ভাসা স্কুল

আব্দুস সালাম আরিফ | প্রকাশিত: ০৯:৫৯ এএম, ২০ নভেম্বর ২০২১

বংশ পরম্পরায় জল আর জালের মধ্যেই যাদের জীবনচক্র সেই মানতা সম্প্রদায়ের শিশুরা এখন পড়ালেখা শিখছে। একটি বেসরকারি সংস্থার উদ্যোগে তাদের জন্য নির্মাণ করা হয়েছে ভাসমান বোটস্কুল, যার নাম দেয়া হয়েছে ‘শিশু বাগান’।

এখানে প্রাক প্রাথমিক পর্যন্ত চলে শিক্ষা কার্যক্রম। প্রাক প্রাথমিক শিক্ষা শেষে তাদের স্থানীয় প্রাথমিক বিদ্যালয়েও ভর্তি করে দেয় বোটস্কুল কৃর্তপক্ষ। এ বছরের ডিসেম্বরে বোট স্কুলের এই প্রকল্প শেষ হচ্ছে, ফলে শিশুদের শিক্ষা কার্যক্রম চলমান রাখা নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।

তবে মানতা শিশুদের জন্য মানতা পল্লী সংলগ্ন এলাকায় সরকারি ব্যস্থাপনায় একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় নির্মাণের উদ্যোগ নিচ্ছে রাঙ্গাবালী উপজেলা প্রশাসন।

School-(3).jpg

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ১৯৮৪ সাল থেকে পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলার চর মন্তাজ স্লুইচ বাজার খালে বসবাস করছেন শতাধিক মানতা পরিবার। পরিবার পরিজন সবাইকে নিয়ে মাছ শিকার এবং স্থানীয় বাজারে বিক্রি করে চলে তাদের জীবন জীবিকা। জলে ভাসা এই জনগোষ্ঠীর শিশুরা কখনোই লেখাপড়া কিংবা স্কুলে যেত না। ফলে নির্দিষ্ট গণ্ডিতেই বন্দী ছিল তাদের জীবন।

তবে দুই বছর আগে এমন পরিস্থিতির পরিবর্তন ঘটে। মানতা পরিবারের ৬৫ শিশুর জন্য বাংলাদেশি প্রবাসীদের অর্থে পরিচালিত ‘মুসলিম চ্যারেটি’ এবং স্থানীয় ‘জাগো নারী’ নামে একটি এনজিওর উদ্যোগে একটি বোটস্কুল নির্মাণ করা হয়। এখানে প্রতিদিন শিশুদের প্রাক প্রাথমিক শিক্ষা দেয়া হয়। ফলে সকাল থেকে মানতা পরিবারের মায়েরা শিশুদের স্কুলে রেখে জাল আর নৌকা নিয়ে মাছ শিকারে নেমে পড়েন। অনেক সময় মাছ শিকারে নৌকাগুলো নদীতে গেলে তাদের সঙ্গে বোটস্কুলও নদীতে চলে যায়।

শিক্ষার সুযোগ পেয়ে পিছিয়ে পড়া এই জনগোষ্ঠীর শিশুরা অনেক খুশি। এখানে শিক্ষার পাশাপাশি বিভিন্ন খেলাধুলা, গান, কবিতা এবং ছড়া বলার সুযোগ থাকায় প্রতিনিয়ত তাদের জীবন বদলে যাচ্ছে।

School-(3).jpg

বোটস্কুলের শিক্ষক আইয়ুব খান জানান, দুই বছর আগে এই স্কুলের কার্যক্রম শুরু হলেও এ বছরের ডিসেম্বরে প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হচ্ছে। নতুন করে প্রকল্পের মেয়াদ না বাড়লে হয়তো ডিসেম্বরের পর বোটস্কুল পরিচালনা করা সম্ভব হবে না।

রাঙ্গাবালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাশফাকুর রহমান জানান, ভাসমান এই বোটস্কুলে প্রাক প্রাথমিক পর্যন্ত শিক্ষার সুযোগ থাকায় মানতা শিশুদের জন্য নদী পাড়ে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে জেলা প্রশাসকসহ সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের সঙ্গে আলোচনা চলমান রয়েছে।

নদী ভাঙন কিংবা অভাবের কারণে ঘরহারা এসব মানুষ একত্রিত হয়ে নদীতে বসবাস শুরু করেছেন প্রায় ৩০ বছর আগে। এ কারণে বাংলাদেশের নাগরিক হলেও এদের কারো ছিলো না জাতীয় পরিচয়পত্র। ফলে সরকারি বিভিন্ন সহযোগিতা থেকে মানতা সম্প্রদায়ের মানুষ বঞ্চিত হতো। তবে গত বছর মানতাদের মধ্যে ৫০ জন প্রাপ্ত বয়স্কদের প্রথম ধাপে জাতীয় পরিচয়পত্র প্রদান এবং এ বছর ২৯ মানতা পরিবারকে মুজিববর্ষে প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর দেয়া হয়েছে।

আব্দুস সালাম আরিফ/এফএ/এমএস