চাঁদপুরে সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে সংশয়ে মেয়র প্রার্থীরা
রাত পোহালেই চাঁদপুরের ৫ পৌরসভায় নির্বাচন। নির্বাচনের প্রায় সকল প্রস্তুতি সম্পূর্ণ হয়েছে। গতকাল মধ্য রাতেই শেষ হয়েছে নির্বাচনী প্রচারণা। এখন প্রার্থীরা নির্বাচনী ঘর গুচ্ছাচ্ছে। এতো সব নির্বাচনী প্রচারণার পর খোদ মেয়র প্রার্থীরা সংশয়ের বেড়াজালের মধ্যে পড়েছে। নির্বাচন কি দখলে, নাকি ভোটে হবে।
ভোটারদের মাঝেও এ আশঙ্কা এখন দিবালোকের মতো প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে আছে। তারপরও প্রশাসনের গর্জন সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করতে তারা বদ্ধ পরিকর। মাঠে নেমেছেন বিজিবি, র্যাবসহ নির্বাচনী ভ্রাম্যমাণ আদালত।
চাঁদপুরের ৫টি নির্বাচনী এলাকা সরজমিনে ঘুরে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী মতলব পৌরসভার এনামুল হক বাদল, কচুয়া পৌরসভার হুমায়ুন কবির প্রধান ও হাজীগঞ্জ পৌরসভার আব্দুল মান্নান খান বাচ্চু সংশয় প্রকাশ করে জাগো নিউজকে বলেন, ভোটাররা ভোট কেন্দ্রে গিয়ে আদৌ ভোট দিতে পারবে কিনা। কারণ ইতোমধ্যে তাদের পোস্টার, ব্যানার ছিঁড়ে ফেলেছে আওয়ামী লীগ প্রার্থীদের সমর্থকরা। এমনকি এজেন্ট যারা হবে তাদেরকেও হুমকি-ধামকি ও মামলায় জড়ানো হবে বলে ভয় দেখানো হচ্ছে। এতে নির্বাচন কি দখলে না ভোটে হবে তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে।
এই আশঙ্কা কোনো কোনো ক্ষেত্রে ক্ষমতাসীন দলের কাউন্সিলর প্রার্থীদেরও। চাঁদপুরের ৫টি পৌরসভার মধ্যে হাজীগঞ্জ পৌরসভা নির্বাচনে ৬ জন মেয়র প্রার্থী, ৪২ জন সাধারণ কাউন্সিলর প্রার্থী ও ১৪ জন সংরক্ষিত কাউন্সিলর প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নেমেছে। এর মধ্যে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে ত্রিমুখী। অর্থাৎ বিএনপি মনোনীত ধানের শীষের আব্দুল মান্নান খান বাচ্চু, আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকার আ স ম মাহবুব আলম লিপন এবং বিএনপির বিদ্রোহী স্বতন্ত্র প্রার্থী জগের হেলাল উদ্দিন মজুমদারের মধ্যে। এর মধ্যে ভোটারদের অভিমত বিএনপি ও আওয়ামী লীগের গ্রুপিংয়ের কারণে এখানে কে মেয়র হবে তা বেড়াজালে সংশয়ের মধ্যে রয়েছে।
ফরিদগঞ্জ পৌরসভায় ৪ মেয়র প্রার্থী, ৫৪ কাউন্সিলর ও ৯ সংরক্ষিত কাউন্সিলর প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নেমেছেন। এ পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগের মনোনীত নৌকার মাহফুজুল হক, বিএনপির মনোনীত ধানের শীষের হারুনুর রশিদ ও স্বতন্ত্র মোবাইল ফোনের মো. মঞ্জিল হোসেনের মধ্যে ত্রিমুখী লড়াই হবে। তারপরও ভোটারদের মতে, এখানে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে গ্রুপিং তুঙ্গে। যার জন্য কে মেয়র নির্বাচিত হবে তা সংশয়ের বেড়াজালের মধ্যে রয়েছে।
কচুয়া পৌরসভা নির্বাচনে ৫ মেয়র প্রার্থী, ২৮ কাউন্সিলর প্রার্থী ও ৯ সংরক্ষিত কাউন্সিলর প্রার্থীর মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে। এখানে মেয়র পদে আওয়ামী লীগ মনোনীত মো. নাজমুল আলম স্বপনের সঙ্গে বিএনপির মনোনীত ধানের শীষের মো. হুমায়ুন কবির প্রধানের প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে। আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী স্বতন্ত্র আহসান হাবিব প্রানজল জোর প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নেমেছে। গতকাল রাতে স্বতন্ত্র প্রার্থী ইকবাল আজীজ শাহীন মোবাইল ফোন নৌকার মার্কার প্রার্থীকে সমর্থন দিয়েছে বলে জানা গেছে। যদি এমনটিই হয় তাহলে নাজমুল আলম স্বপন অনেকটা সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে। তারপরও অভ্যন্তরীণ গ্রুপিংয়ের সংশয়ের বেড়াজালে প্রার্থীরা।
মতলব পৌরসভা নির্বাচনে তিনজন মেয়র প্রার্থী, ৩৮ কাউন্সিলর, ১০ সংরক্ষিত কাউন্সিলর প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নেমেছে। এর মধ্যে মেয়র পদে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী নৌকার আওলাদ হোসেন লিটন ও বিএনপির মনোনীত প্রার্থী ধানের শীষের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে। বিএনপি ও আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ মনকষাকষিতে এখানেও ভোটারদের মাঝে সংশয় রয়েছে।
ছেংগারচর পৌরসভায় হাইকোর্টের স্থগিতাদেশের কারণে মেয়র পদে কোনো নির্বাচন হচ্ছে না। এছাড়া কাউন্সিলর অধিকাংশ প্রার্থী নির্বাচন সুষ্ঠু ও অবাধ হয় কিনা তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছে। তারপরও নির্বাচন সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ হবে এটাই ভোটাদের প্রত্যাশা প্রশাসনের কাছে।
ইকরাম চৌধুরী/এসএস/এমএস