ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

দুই বছর গোয়াল ঘরে, অবশেষে ঠাঁই হলো পাকা ঘরে

জেলা প্রতিনিধি | ফরিদপুর | প্রকাশিত: ১০:০৪ পিএম, ০৭ নভেম্বর ২০২১

 

গোয়াল ঘরের এক পাশে কাঠখড়ি, আরেক পাশে গরু-ছাগল। সেই ঘরের এক কোণে প্রায় দুই বছর ধরে অবহেলা আর অযত্নে পড়েছিলেন বিধবা ফুলজান নেছা (৭৯)। স্থানীয় জাগ্রত বিবেক নামের একটি সামাজিক সংগঠনের নজরে এলে বিষয়টি জানাজানি হয়।

অবশেষে রোববার (৭ নভেম্বর) রাতে স্থানীয়দের চাপের মুখে অসহায় বিধবাকে ঘরে তুলে নেন তার ছেলে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ফরিদপুর পৌর সদরের দুই নম্বর ওয়ার্ডের কমরপুর এলাকার বাসিন্দা ফুলজান নেছা। স্বামী হানিফ মন্ডল মারা গেছেন বেশ কয়েক বছর আগে। পৃথিবীতে আপন বলতে এখন এক ছেলে, পুত্রবধূ ও তিন নাতনি। বয়সের ভারে নানা রোগশোক বাসা বেঁধেছে ফুলজান নেছার শরীরে।

চলাচল করতে পারে না। বিছানা থেকে উঠার শক্তি নেই। তাই বিছানায় শুয়ে-বসেই সব করতে হয় তাকে। ছেলে দেলোয়ার মন্ডল আগে ইট ভাটায় শ্রমিকের কাজ করতেন। এখন স্থানীয় বাজার সংলগ্ন রাস্তার পাশে কাঁচামালের দোকানদার।

স্থানীয়রা জানান, বৃদ্ধার একমাত্র ছেলে দেলোয়ার মন্ডল দীর্ঘদিন তার মাকে পরিত্যক্ত গোয়াল ঘরে অযত্নে ফেলে রাখেন। আর তিনি স্ত্রী সন্তানদের নিয়ে থাকতেন পাকা ঘরে।

দেলোয়ার মন্ডল মায়ের প্রতি অবহেলা ও অযত্নের কথা স্বীকার করেন। তার ভুলের জন্য ক্ষমা চেয়ে মাকে ঘরে তুলে নেন।

স্থানীয় ওয়ার্ডের সাবেক ইউপি সদস্য জাহাঙ্গীর মন্ডল জাগো নিউজকে বলেন, যৌবন বয়সে ফুলজান বেগম নিজের কাঁধে ঝুড়িতে করে মাটি কেটে যে বসত ভিটা বেঁধেছিলেন সেই ভিটায় দুটি পাকা ঘর থাকতেও তার ঠাঁই হলো পরিত্যক্ত ঘরে। বিষয়টি দুঃখজনক। ফুলজান বেগমের পস্রব পায়খানা, খাওয়া-দাওয়া ঘুমানো সব কিছুই চলতো এক বিছানায়। পাশের রুমে গাভীর জন্যে মশারীর ব্যবস্থা থাকলেও বিধবা ফুলজানের জন্য ব্যবস্থা হয়নি। পুরাতন স্টিলের একটি প্লেট আর পেপসির একটা পরিত্যক্ত বোতলে খাবার পানি দেওয়া হতো, ডাক্তার কিংবা ওষুধপত্রের কোনো ব্যবস্থাই করা হতো না।

স্থানীয় ওয়ার্ডের মহিলা কাউন্সিলর জয়গুন বেগম জাগো নিউজকে বলেন, ফুলজান নেছার একমাত্র ছেলে দেলোয়ার ও ছেলের বউ পাশের বিল্ডিংয়ে বাস করেন। থাইগ্লাসের জানালা, ঘরে কালার টিভি, ফ্রিজ, সোকেস, সোফা, আধুনিক খাটসহ প্রয়োজনীয় সবই আছে। নেই শুধু গর্ভধারিণী মায়ের থাকার জায়গা।

স্থানীয় দুই নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও জাগ্রত বিবেক নামক স্থানীয় সামাজিক সংগঠনের সভাপতি আব্দুল কুদ্দুস জাগো নিউজকে বলেন, দুই বছর ধরে অসহায় বিধবা ফুলজান নেছাকে গোয়াল ঘরে ফেলে রাখা হয়। সামাজিক সংগঠন জাগ্রত বিবেক এর সদস্যদের মাধ্যমে আমি রোববার সকালে বিষয়টি জানতে পেরে তাৎক্ষণিক ফুলজান নেছার ছেলে দেলোয়ার মন্ডলকে দ্রুত তার মাকে পাকা ঘরে রাখার জন্য বলি। সে অনুযায়ী রাতে স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে নিয়ে দেলোয়ারের মাধ্যমে তার মাকে ঘরে তুলে দেওয়া হয়।

এন কে বি নয়ন/এসজে/জিকেএস