ঠাকুরগাঁওয়ে চায়ের দোকানে নির্বাচনী আমেজ
ঠাকুরগাঁওয়ে চায়ের দোকানে জমে উঠেছে নির্বাচন। চায়ে চুমুক দিয়ে আড্ডায় শুধু এক গল্প কে হবেন নগর পিতা। সকাল থেকে শুরু করে রাত অবধি চলছে এ আলোচনা।
ঠাকুরগাঁও পৌরসভা মুসলিম নগর ১নং ওয়ার্ডের একটি চায়ের দোকানে বসে এমনই আড্ডা চলছিল। এক পর্যায়ে এতে উঠে আসে নির্বাচনী প্রসঙ্গ। কেমন মেয়র চাই? কী কাজ করবেন মেয়র এলাকাবাসীর জন্য, তার ইশতেহারই বা কী ?
এসব তর্কে তেল বা ঘি ঢেলে আড্ডা উসকে তুললেন ফরহাদ। তিনি গাড়িচালক। দাবি করে বলে উঠলেন, ‘২০১১ সালে যখন বর্তমান মেয়র ক্ষমতা নিলেন, তখন পৌরসভার অনেক কর্মীকে তিনি বিদায় করে দিলেন। তাদের আর চাকরি থাকলো না। এটি কেমন বিচার ছিল তার! একজন জনপ্রতিনিধি হয়ে এসেছিলেন তিনি। এ কাজ করলেন কী করে!’
তার এ কথায় পাশ থেকে এলো বিরোধিতা। নাম না জানা এক মধ্যবয়সী ব্যক্তি চিৎকার করে উত্তর দিলেন, বিএনপি আমলে বিএনপির মেয়র তেমন উন্নয়ন করতে পারেনি। কিন্তু তার থেকে বেশি করেছেন আওমী লীগের মেয়র সবই তার নিজ যোগ্যতায়। বলা সহজ কিন্তু করা কঠিন। এবারও লড়াই হবে ভোটে। কথাগুলো বলেই স্থান ত্যাগ করলেন তিনি।
ওই চায়ের দোকানে বসে থাকা ব্যবসায়ী আবু কালাম ও কৃষক মহিউদ্দিন বলেন, ‘আমাদের পৌরসভায় মাদকের একটা প্রভাব আছে। আওয়ামী লীগ প্রার্থী মাদক নিরসনের ইশতেহার দিয়ে ভোট চাচ্ছেন। এটি ভালো উদ্যোগ। তবে আমাদের চাওয়া, সুখ-দুখে পাশে থাকার মেয়র। সেই সঙ্গে মেয়রকে থাকতে হবে এলাকায়।
এখানে আড্ডা জমে ওঠার আগে কথা হয় ২নং ওয়ার্ডের আওতাধীন গোয়ালপাড়া মহল্লার চা দোকানি মিলনের সঙ্গে। তিনি বলেন, রাজনৈতিক দিক দিয়ে এ এলাকায় আওয়ামী লীগ ও বিএনপি সমান অবস্থানে রয়েছে।
১নং ওয়ার্ডের লাল মিয়া বলেন, ‘সুষ্ঠু ভোট হলে কারো কোনো অভিযোগ থাকবে না। যারা এখন পাওয়ার দেখানোর চেষ্টা করছেন, তারাও তো জনপ্রিয়। এটি বুঝে কাজ করলেই ঠাকুরগাঁওয়ের শান্তি-উন্নতি’।
এবার মেয়র পদে আওয়ামী লীগ থেকে লড়ছেন তাহমিনা আক্তার মোল্লা এবং বিএনপি থেকে লড়ছেন মির্জা ফয়সল আমিন। আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী সোলায়মান আলী সরকার আর স্বতন্ত্র প্রার্থী মাহাফুজুল ইসলাম।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, প্রচার-প্রচারণায় এগিয়ে রয়েছেন বিএনপির প্রার্থী ফয়সল আমিন। তার ঝুলন্ত পোস্টারে ছেঁয়ে গেছে পুরো শহর। সে তুলনায় তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের তাহমিনা আক্তারের তেমন কোনো পোস্টারই দেখা গেলো না! অন্যদিকে সালোয়মান আলীর পোস্টারে প্রচারণা থাকলেও তেমনভাবে তার উঠান বৈঠক জমছে না বলে জানান স্থানীয়রা। একই অবস্থা স্বতন্ত্র প্রার্থী মাহাফুজুল ইসলামের।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) ও নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা ফজলে রাব্বী বলেন, আমরা সর্বোচ্চ সতর্কতায় আছি, যেন কোনো প্রার্থী আচরণবিধি লঙ্ঘন করতে না পারেন। ম্যাজিস্ট্রেট ও ভ্রাম্যমাণ আদালত কাজ করছেন।
উল্লেখ্য, ঠাকুরগাঁ পৌরসভার আয়তন ১৬ বর্গকিলোমিটার। মোট ভোটার ৫২ হাজার ৯৩০ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ২৬ হাজার ৩৩৮ জন এবং নারী ভোটার ২৬ হাজার ৫৪৫ জন। ১৯৫৮ সালে এ পৌরসভা প্রতিষ্ঠিত হয় এবং ১৯৯৮ সালে ‘ক’ শ্রেণির পৌরসভা ঘোষণা করা হয়। পৌর এলাকার শিক্ষার হার ৬৬ শতাংশ।
রবিউল এহসান রিপন/এসএস/এমএস