৪০ বছর ধরে কাকের শোক পালন!
মৌলভীবাজারের রাজনগর উপজেলার মুন্সিবাজার ইউনিয়নের মেদেনিমহল হাওর পাড়ের সবুজ গ্রাম জগন্নাথপুর। ওই গ্রামের বাসিন্দা জাবেদ আলী (৭০)। গ্রামে তার আলাদা পরিচিতি রয়েছে। পরিচিতির কারণ হলো কাক। দীর্ঘ ৪০ বছর ধরে জাবেদ আলীর বাড়িতে বসবাস করে আসছে দেশের চির পরিচিত এ পাখি।
শুধু কাকই নয়, তার বাড়িতে বাসা বেঁধেছে বুলবুলি, শালিক, ঘুঘু, শ্যামা, চড়ুই। বাঁশঝাড়, গাছের ডাল, বাড়ির চাল—সব জায়গায় এসব পাখির অবাধ বিচরণ। তাই এলাকার লোকজন বাড়িটির নাম দিয়েছেন ‘পাখি বাড়ি’। সন্ধ্যার পরে পুরো বাড়ি পাখির কলরবে মুখরিত হয়ে ওঠে।
জেলা শহর থেকে অনেকটা দূরে হওয়ায় আড়ালেই রয়ে গেছে জগন্নাথপুর গ্রামের পাখি বাড়ি। বাড়ির মালিক জাবেদ আলী জাগো নিউজকে বলেন, ঘটনার শুরুটা ১৯৮১ সালে। তার পাশের বাড়ির মখদ্দছ আলী বিনা কারণে একটি কাক মেরে ফেলেন। এ ঘটনার পর থেকে মৃত কাকের শোকে এ বাড়িতে অন্যান্য কাক আসা শুরু করে। চতুর্দিক থেকে কাক আসা শুরু করলে এক সময় এর সংখ্যা হাজার ছাড়িয়ে যায়।
গ্রামের বাসিন্দা মাসুক মিয়া জাগো নিউজকে বলেন, জাবেদ আলীর বাড়িতে প্রায় ৪০ বছর ধরে কাক বসবাস করে আসছে। পাখিগুলো দেখে এলাকার মানুষ আনন্দিত। বৈশাখ মাসে এখানে অনেক পাখি আসে। সরকারিভাবে পাখিগুলো সংরক্ষণ করা গেলে ভালো হতো। আনোয়ার মিয়া নামের আরেক বাসিন্দা বলেন, কাকগুলো কোনোদিন কারও ক্ষতি করেনি।
কাক সামাজিক পাখি। এরা উচ্ছিষ্ট ও নোংরা খাবার খেয়ে বেঁচে থাকে। পচা-গলা খেয়ে এরা মানুষেরই উপকার করে। পরিবেশ ভালো থাকে। এজন্য সামাজিক এ পাখির আরেক পরিচয় ‘প্রকৃতির ঝাড়ুদার’।
এদের আরেকটি বৈশিষ্ট্য হলো দলের কেউ অন্যায় করলে নিজেদের ভেতর বোঝাপড়া করে। মানুষ বা অন্য কারও দ্বারা আক্রান্ত হলে দলের সবাই মিলে একত্রিত হয়ে সমবেদনা জানায়। দেশে পাতি কাক ও দাঁড় কাক নামে দুই প্রজাতির কাক দেখা যায়।
কাকের প্রজনন মৌসুম মার্চ থেকে জুন। বাসা বাঁধে গাছের উঁচু শাখায়। অথবা বাড়ির কার্নিশে এবং বিদ্যুতের খুঁটিতেও। উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করে সরু ডাল, ঘাস, লতাপাতা ইত্যাদি। ডিম পাড়ে ৪-৬টি।
স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য (মেম্বার) মো. রেজাউল ইসলাম রেজা জাগো নিউজকে বলেন, হাজার হাজার কাক এখানে বসবাস করে। আমরা ছোটবেলা থেকেই দেখে আসছি কাকের আসা যাওয়া।
রাজনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) প্রিয়াঙ্কা পাল জাগো নিউজকে বলেন, মেদেনিমহল জগন্নাথপুরে একটি পাখি বাড়ি আছে বলে খবর পেয়েছি। পাখিগুলো যাতে নির্বিঘ্নে সেখানে বসবাস করতে পারে সেজন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. রেজাউল করিম চৌধুরী জাগো নিউজকে বলেন, কাক দলবদ্ধভাবে বসবাস করে। নিরাপদ আশ্রয়ে থেকে রাত কাটায়। তবে দীর্ঘদিন একই স্থানে বসবাসের বিষয়টি জানতে হবে। আমরা এলাকায় যাবো। আমাদের পক্ষ থেকে যা যা সহযোগিতা করার করা হবে।
আব্দুল আজিজ/এসআর/এএসএম