‘ছয়দিন আমড়া বেচি, একদিন ইশকুলে যাই’
‘বাপে মিলে কাম করছে। করোনার কারণে চাকরি গেছে গা। সংসারে খুব অভাব। পড়বার গেলে ভাত পাই না। আবার ভাতের চিন্তা করলে পড়ালেহা হয় না। তাই কী করমু? সপ্তাহে ছয়দিন আমড়া বেচি একদিন ইশকুলে যাই।’
এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন দরিদ্র পরিবারের সন্তান শাকিল (১০)। একই কথা বলে শাকিলের প্রতিবেশী বন্ধু নয়ন (১১)। তার ভাষ্য, ‘অভাবের সংসার। বাপে ভ্যান চালায়। মায়ে মাইনসের বাড়ি বাড়ি কাম করে। তাই কী করমু? সপ্তাহে ছয়দিন আমড়া বেচি, একদিন ইশকুলে যাই।’
জামালপুরের সরিষাবাড়ী পৌরসভার সামর্থ্যবাড়ি গ্রামের হাফিজুর রহমানের ছেলে শাকিল। নয়ন পৌরসভার ঝালুপাড়া ব্রিজপাড় এলাকার শাহিন উদ্দিনের ছেলে। তারা দুজনই সরিষাবাড়ী মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী।
মহামারি করোনাভাইরাসে (কোভিড-১৯) বিপর্যস্ত সংসারের খরচ চালাতে রাস্তায় রাস্তায় আমড়া বিক্রি করছে এই দুই শিশু শিক্ষার্থী।
শাকিলের বাড়ি পৌরসভার ২ নম্বর সামর্থ্যবাড়ি এলাকায়। অভাবের সংসারে বাবা-মাসহ ছোট একটি বোন রয়েছে। ২০-৩০টি আমড়া নিয়ে বের হয়ে স্কুলের সামনে কিংবা রাস্তায় রাস্তায় বিক্রি করে। এতে যা আয় হয় সন্ধ্যায় মায়ের হাতে তা তুলে দেয় এ শিশু।
সে জাগো নিউজকে বলে, ‘অভাবের সংসার, খেলাধুলার সময় কই? খেলাধুলা করলে পেটে ভাত যাবো না। তাই বাবা-মাকে একটু সাহায্য-সহযোগিতা করার চেষ্টা করছি।’
শাকিলের বন্ধু নয়ন বলে, ‘করোনায় দীর্ঘ সাত মাস কুমিল্লায় নানি বাড়িতে ছিলাম। স্কুল খুলছে তাই চলে আসছি। তবে সপ্তাহে শুধুমাত্র শনিবার ক্লাস হয়। তাই এ কয়দিন আমড়া বিক্রি করে বাবা-মাকে সাহায্য করছি।’
সরিষাবাড়ী মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কামরুন নাহার জাগো নিউজকে বলেন, আমার এ স্কুলে যারা লেখাপড়া করে তাদের বেশিরভাগই সুবিধাবঞ্চিত। প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে আমরা প্রতিনিয়তই এসব শিক্ষার্থীর খোঁজখবর রাখি। শাকিল এবং নয়ন পড়ালেখায় অনেক ভালো। তবে তারা দরিদ্র পরিবারের সন্তান। কেন তারা এ কাজ করছে সে বিষয়ে খোঁজ নেওয়া হবে।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আব্দুল হালিম বলেন, আমরা শিক্ষার্থীদের অনুপস্থিতির বিষয়ে সব বিদ্যালয়প্রধানের কাছে জানতে চেয়েছি। ছুটির দিনগুলোতে বাড়িতে তারা কী করে সে বিষয়েও খোঁজখবর নিতে বলেছি। সে বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য তাদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) উপমা ফারিসা বলেন, এ রকম কথা এই প্রথম আপনার কাছ থেকেই শুনছি। এ ব্যাপারে প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে কথা বলে সুরাহা করার চেষ্টা করবো।
এসআর/এএসএম