যে কারণে বারবার পানির নিচে ঝুলন্ত সেতু
আশির দশকে রাঙামাটির প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে কাজে লাগিয়ে শহরের শেষ প্রান্তে দুই দ্বীপকে সেতুর মাধ্যমে সংযোগ ঘটানো হয়। আর কালক্রমে এই সেতু দেশব্যাপী পরিচিতি পায় ‘ঝুলন্ত সেতু’ নামে। তখন পর্যটকদের বিনোদনের বিষয়টি মাথায় রেখে সেতু নির্মাণ করা হলেও সে সময় কাপ্তাই হ্রদের রুলকার্ভ অনুসরণ না করায় গত এক দশক ধরেই বর্ষা মৌসুমের পরপরই হ্রদে পানি বাড়তে থাকলে সেতুটি ডুবে যাচ্ছে।
পর্যটন করপোরেশন ও জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের সূত্র জানায়, ষাটের দশকে প্রমত্তা কর্ণফুলী নদীতে বাঁধ দিয়ে সৃষ্টি করা হয় কাপ্তাই হ্রদ। হ্রদ সৃষ্টির পর এর সৌন্দর্যকে কাজে লাগিয়ে বিভিন্ন ধরনের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। রাঙ্গামাটির প্রাকৃতিক সৌন্দর্য পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে পরে আশির দশকে শহরের শেষ প্রান্তের দুই দ্বীপের মাঝে সংযোগ ঘটানোর মাধ্যমে ৩৩৫ ফুট দীর্ঘ ঝুলন্ত সেতু নির্মাণ করা হয়। কিন্তু সেতুটি নির্মাণের সময় কাপ্তাই হ্রদের রুলকার্ভ অনুসরণ না করায় এখন প্রতিবছর একটি সময়ে সেতুটি পানিতে ডুবে থাকছে।
জানা গেছে, কাপ্তাই হ্রদ তৈরির সময় বাঁধের নিরাপত্তা হিসাবনিকাশ করে এর সর্বোচ্চ পানির স্তর ধরা হয়েছিল ১০৯ এমএসএল (মিনস সি লেভেল)। তবে বর্তমানে কাপ্তাই হ্রদে ১০৫ এমএসএল পানি হলেই ডুবে যাচ্ছে ‘সিম্বল অব রাঙামাটি’ খ্যাত ঝুলন্ত সেতুটি। আর এখন হ্রদে ১০৬.০২ এমএসএল পানি থাকায় এটি প্রায় ১০ ইঞ্চি পানির নিচে রয়েছে। সেতু নির্মাণের সময় রুলকার্ভ অনুসরণ না করায় এখন প্রতিবছর এই সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে।
চট্টগ্রাম থেকে ঘুরতে আসা রিয়াদ বলেন, ঝুলন্ত সেতুতে ঘুরতে এসে হতাশ হলাম। এতদিন দেখা সুন্দর একটা সেতু এখন পানির নিচে। আমাদের সবকিছু কেন অপরিকল্পিতভাবে নির্মাণ হয় আমরা বুঝি না। তারপরও যদি সামনের সময়গুলোতে সেতুটি সংস্কার করা হয় তবে বারবার এই বিড়ম্বনায় পড়তে হবে না। আরেক পর্যটক বলেন, এবারসহ চারবার আসলাম, আর চারবারই আমি ঝুলন্ত সেতুকে ডুবন্ত পেয়েছি।
রাঙ্গামাটির সংবাদকর্মী ফজলে এলাহী বলেন, সারাদেশের পর্যটকরা ঝুলন্ত সেতু দেখার জন্য আসেন। কিন্তু প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে সেতু ডুবে থাকে। পর্যটকরা হতাশ হয়ে ফিরে যান। বারবার বলার পরও সেতু সংস্কার ও উচ্চতা বাড়ানো হয়নি। দ্রুত সংস্কার হওয়া উচিত।
পর্যটন করপোরেশনের রাঙ্গামাটি অঞ্চলের ব্যবস্থাপক সৃজন বড়ুয়া বলেন, হ্রদের পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় আপাতত সেতুতে পর্যটক প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। তিনি আরও বলেন, প্রতিবছর এই সমস্যা থেকে রেহাই পেতে আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলছি।
রাঙ্গামাটি জেলা পরিদের চেয়ারম্যান অংসু প্রু চৌধুরী বলেন, পার্বত্য শান্তি চুক্তির আলোকে পর্যটন জেলা পরিষদের হাতে ন্যস্ত হলেও আইন ও প্রবিধান প্রণয়ন শেষ না হওয়ায় জেলা পরিষদের অনেক কিছু করার ইচ্ছা থাকলেও করা কঠিন। তবু পর্যটন করপোরেশনের দায়িত্বশীলদের সঙ্গে আলোচনা করবো, যাতে দ্রুত সময়ের মধ্যে সেতু সংস্কার করে উচ্চতা বাড়ানো হয়। পর্যটকদের জন্য সেতুটি উপযোগী করার চেষ্টা করবো।
শংকর হোড়/এমআরআর/এমএস