ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

স্কুলের শ্রেণিকক্ষ দখল করে সভাপতির গুদামঘর

জাহিদ খন্দকার | গাইবান্ধা | প্রকাশিত: ০৬:০০ পিএম, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২১

গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলার হলদিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষ যেন পরিত্যক্ত গুদামঘর। দেখে বোঝার উপায় নেই যে, এটি একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ক্লাসরুম।

স্থানীয়দের দাবি, বাপ-দাদার জমিতে স্কুল প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে বিধায় স্কুলের একটি শ্রেণিকক্ষ দখল করে কখনো সরিষার গুদাম, কখনো পাটের গুদাম কখনোবা পেঁয়াজের গুদামঘর হিসেবে ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করছেন ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি সিরাজুল ইসলাম। এ বিষয়ে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন স্কুলের প্রধানশিক্ষক।

বৃহস্পতিবার (২৩ সেপ্টেম্বর) দুপুর ১২টায় সরেজমিনে গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলার হদলিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ঘুরে দেখা যায়, দুটি শ্রেণিকক্ষে তৃতীয় ও পঞ্চম শ্রেণির ক্লাস চলছে। পাশের একটি শ্রেণিকক্ষ তালাবদ্ধ।

স্কুলের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, শ্রেণিকক্ষটি ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করেন স্কুলের সভাপতি সিরাজুল ইসলাম। চরের বিভিন্ন পণ্য কিনে এই কক্ষে স্টোক করেন। দাম বাড়লে বিক্রি করেন।

jagonews24

তালাবদ্ধ শ্রেণিকক্ষটি স্কুলের দপ্তরিকে খুলে দিতে বললে তিনি জানান, শ্রেণিকক্ষটির চাবি সভাপতির কাছে। সভাপতি বাড়িতে না থাকায় পরে সভাপতির স্ত্রী এসে কক্ষটি খুলে দেন।

কক্ষে প্রবেশ করে দেখা যায়, এটি যেন একটি পরিত্যক্ত গুদামঘর। কৃষিকাজে ব্যবহৃত ইঞ্জিনচালিত শ্যালো মেশিন, প্লাস্টিকের পাইপ ও পাট রাখা হয়েছে সেখানে।

এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক আব্দুল মালেক জাগো নিউজকে বলেন, ‘স্কুলটির সভাপতি নিজের মতো করে চলেন। প্রতিষ্ঠার পর থেকে স্কুলের সম্পদ নিজের মনে করে ভোগ করছেন। শ্রেণিকক্ষগুলো নিজের প্রয়োজনে ব্যবহার করেন। এসব বিষয়ে বাধা দিলে স্কুলের জমিজমা নিজের বাবার বলে দাপট দেখান।’

jagonews24

স্কুলের সহকারী শিক্ষক মো. আব্দুর রশিদ বলেন, ‘আমরা সভাপতিকে অনেকবার বলেছি কিন্তু সভাপতি আমাদের কথা শোনেননি। শিক্ষা অফিসার স্কুল পরিদর্শনে এসে চলতি মাসে দুইদিন শ্রেণিকক্ষটি তালাবন্ধ দেখেন। রুমটি ছেড়ে দিতে সভাপতিকে বললেও তিনি কথা শোনেননি।’

স্কুলের দপ্তরি সাহাব উদ্দিন জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমার কী করার আছে? স্কুলের সভাপতি শ্রেণিকক্ষটি ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করেন। পেঁয়াজ ও পাট কিনে রাখেন। তার বাপ-দাদার জমিতে স্কুল অধিকার তার বেশি। উনি করোনাকালীন স্কুলটিতে পেঁয়াজ, সরিষাসহ বিভিন্ন পণ্য কম দামে কিনে এখানে রেখে সময়মতো বেশি দামে বিক্রি করেন।’

জানতে চাইলে হলদিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধানশিক্ষক মো. লুৎফর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, ‘শ্রেণিকক্ষ থেকে পাট অপসারণ করতে স্কুল কমিটির সভাপতিকে একাধিকবার মৌখিক জানানোর পরও তিনি রুমের চাবি দেননি। সর্বশেষ উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। একজন প্রধানশিক্ষক হিসেবে স্কুলের সভাপতির বিরুদ্ধে আমার আর কী করার থাকে?’

jagonews24

তবে রুমটি দখলে রাখার অভিযোগ স্বীকার করেছেন স্কুল কমিটির সভাপতি সিরাজুল ইসলাম। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘ক্লাসরুমটি পরিত্যক্ত ছিল। তাই আমার চেনা কিছু ব্যবসায়ী এই রুমের দরজা-জানালা মেরামত করে পাট রাখেন। আমরা পাটগুলো রুম থেকে সরিয়েছি। প্রধানশিক্ষক চাইলে রুমটি দিয়ে দেবো। আমার ব্যবহারিক জিনিসপত্র সরিয়ে নেবো।’

সাঘাটা সহকারী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মামুন অর রশিদ বলেন, প্রধানশিক্ষক একটি লিখিত অভিযোগ দেওয়ার পর রুমটি খালি করে দিতে স্কুলের সভাপতিকে বলা হয়েছে। তারপরও তিনি খালি করেননি। আমরা এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবো।

এ বিষয়ে সাঘাটা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সরদার মোস্তফা শাহিন জাগো নিউজকে বলেন, বিষয়টি উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নিতে বলা হবে।

জাহিদ খন্দকার/এসআর/জেআইএম