লালনের জন্মভিটায় লালন উৎসব
বাউল সম্রাট ফকির লালন শাহের ১২৫তম তিরোধান দিবস উপলক্ষে ঝিনাইদহের হরিণাকুন্ডু উপজেলার হরিশপুর গ্রামে শুরু হয়েছে ৩ দিনের লালন উৎসব। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সাঁইজির ভক্ত ও অনুসারীরা এসে জড়ো হয়েছেন তার পৈত্রিক বসত ভিটায়।
সেখানে চলছে লালনের চিন্তা-দর্শন নিয়ে আলোচনার পাশাপাশি লালন শাহের গান ও মেলা। লালন শাহ বা লালন ফকির ভারতীয় উপমহাদেশের সবচেয়ে প্রভাবশালী আধ্যাত্মিক সাধকদের মধ্যে অন্যতম। তিনি একাধারে বাউল সাধক, বাউল গানের গীতিকার, সুরকার ও গায়ক। তাকে ‘বাউল সম্রাট’ হিসেবেও অভিহিত করা হয়।
লালন অনুসারীর মতো অনেকেরই গন্তব্য এখন ঝিনাইদহের হরিণাকুন্ডু উপজেলার হরিশপুর গ্রাম। গুরুকে মনে ধারণ করে জাতিভেদ ভুলে আলোচনা চলছে, দেহতত্ত্ব আর আত্মার মুক্তি নিয়ে। ভক্তরা হৃদয়ে ধারণ করেছেন ফকির লালন শাহের আধ্যাত্মিকতা ও ভাববাদ।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় শুরু হয় উৎসব। কিন্তু আনুষ্ঠানিকভাবে শুক্রবার উদ্বোধন হয় এ উৎসবের। চলবে শনিবার গভীর রাত অব্দি। লালন স্মরণোৎসবে ঘটেছে শত শত মানুষের মিলন মেলা। নানা বয়সী মানুষের উপচে পড়া ভিড় চোখে পড়ার মতো। হাজার হাজার বাউল, সাধু আর লালন ভক্তের পদচারণে মুখর হয়ে উঠেছে পুরো হরিশপুর।
একতারা হাতেই বেশির ভাগ বাউল টান তুলছেন গানে। তাদের দরাজ কণ্ঠ যেন আধুনিক যন্ত্রকেও হার মানাচ্ছে। এ বছর অনুষ্ঠান শুরুর আগে থেকে হরিশপুর গ্রামে আসা বাউলদের সব ধরনের সেবা প্রদান করা হচ্ছে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে।
লালন বিশেষজ্ঞরা বলেন, ফকির লালন শাহ হরিণাকুণ্ডুর হরিশপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেছিলেন এটাই চির সত্য। এই গ্রামে এখনো লালন পরিবার ও তার গুরু এবং ভাব শিষ্যদের আওলাদরা বসবাস করছেন।
লালন গবেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের শিক্ষক প্রফেসর ড. আনিসুজ্জামান বলেন, মূলত কথা, সুর ও সংগীতের মাধ্যমে গানে নিজস্ব একটি ধারা তৈরি করতে সক্ষম হয়েছিলেন লালন সাঁই। এ কারণেই সাধারণ গান পাগল মানুষ তাকে বাউল সম্রাট উপাধিতে আখ্যায়িত করেন। বলা চলে লালনের মাধ্যমেই বাউল গান সর্বসাধারণের কাছে প্রতিষ্ঠা লাভ করে।
ঝিনাইদহ পৌর মেয়র ও সাধারণ সম্পাদক জেলা আওয়ামী লীগ সাইদুল করিম মিন্টু বলেন, এখানে খুব দ্রুত লালন সঙ্গীত বিদ্যালয় হবে।
ঝিনাইদহের জেলা প্রশাসক মাহবুব আলম তালুকদার তার বক্তৃতায় বলেন, লালনের সঠিক ইতিহাসকে তুলে আনতে যা যা করা যায় তাই করা হবে।
লালনের জন্মভূমি ঝিনাইদহের হরিণাকুণ্ডু উপজেলার এই হরিশপুর গ্রামে লালন বিশ্ববিদ্যালয় ও লালন একাডেমি নির্মাণের দাবি জানান বক্তা ও আগত ভক্তবৃন্দ।
এমজেড/পিআর