ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

ভরসা শুধুই বাঁশের সাঁকো

জেলা প্রতিনিধি | নীলফামারী | প্রকাশিত: ০৩:৫৪ পিএম, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২১

‘যখনই নির্বাচনের সময় আসে তখন এলাকায় একটি ব্রিজ বানিয়ে দেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হয়। নির্বাচন শেষ তো প্রতিশ্রুতির কথা ভুলে যান সবাই। পরিষদে পরিষদে ঘুরেও কারোর দেখা মেলে না। রোগী নিয়ে কিংবা বাচ্চা প্রসবের মতো জরুরি অবস্থায় আমাদের পড়তে হয় বিপদে। খুব চরম পরিস্থিতিতে অসুস্থ মানুষকে কাঁধে নিয়ে নদী পার হতে হয়। তারপরও আমাদের শেষ ভরসা এই বাঁশের সাঁকো।’

কথাগুলো বলছিলেন নীলফামারী সদরের ১৩ নম্বর চাপড়া সরমজানি ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা নুরুদ্দীন। অন্তত চার হাজার জনবসতি নিয়ে গড়ে ওঠা ৬ নম্বর ওয়ার্ডটির প্রবেশদ্বার এবং ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা, জেলা শহর কিংবা মেডিকেল যাওয়ার প্রধান মাধ্যম এই বাঁশের সাঁকো। স্থানীয় বড় বাজার যাদুরহাটের সঙ্গে ওই ওয়ার্ডের মানুষের সংযোগ স্থাপন করেছে সাঁকোটি। ফলে নদীর ওপর একটি ব্রিজ না থাকায় নুরুদ্দীনের মতো ক্ষোভ প্রকাশ করেন অনেকেই।

Nil-5

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ৫০০ ফুট দৈর্ঘ্যের বাঁশের সাঁকোটি তৈরির জন্য ১০৬ সদস্যের একটি কমিটি করা হয়েছিল। পরে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের কারণে সে কমিটি বাতিল হয়ে যায় এবং সাঁকো তৈরির উদ্যোগ নেন এলাকার তিন ব্যক্তি। তারা হলেন-নুর হোসেন, আইয়ুব আলী ও আনারুল ইসলাম।

ব্রিজ নির্মাণের বিষয়ে আইয়ুব আলী জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমরা খেটে খাওয়া মানুষ। অনেক কষ্ট করে টাকা-পয়সা ও শ্রম বিসর্জন দিয়ে ব্রিজটি নির্মাণ করেছি। মানুষের পারাপারে কিছু টোল আদায় করা হয়। কারণ এটি মেরামত করতে হয়। তারপরও বাঁশের সাঁকোটি তৈরি করতে এক লাখ ৭৪ হাজার টাকা ব্যয় হয়েছে। বাঁশের খুঁটি দেওয়া হয়েছে ১০০টিরও বেশি। ব্যবহার করা হয়েছে ১৭টির মতো চাটাই। চাটাইগুলো তিন মাসে একবার পরিবর্তন করতে হয়। সেখানেও প্রতি চাটাই বাবদ প্রায় চার হাজার টাকা লাগে।’

Nil-5

তিনি বলেন, ‘সাঁকোটির সংস্কার করতে একটু দেরি হলেই বিপদ ঘটে যায়। দুইদিন আগে সাঁকো থেকে এক ব্যক্তি মোটরসাইকেলসহ পানিতে পড়ে যান। সে দায়ও কিন্তু আমাদের নিতে হয়। তাই এখানে একটি পাকা ব্রিজ নির্মাণ অতি জরুরি। তবে আপাতত যদি ব্রিজ করা না হয়, ঘাটটি যেন ডাকের মাধ্যমে সাঁকো পরিচালনার ব্যবস্থা করা হয়।’

স্থানীয় বাসিন্দা আসাদ আলী বলেন, ‘এই নদীতে সাঁকো তৈরি নিয়ে এখন দুইটি গ্রুপ হয়েছে। একদল সাঁকো তৈরি করেতো অন্যরা নষ্ট করে। আমাদের এখানে একটি প্রাইমারি স্কুল ছাড়া আর কিছু নেই। বাচ্চাদের স্কুল-কলেজ সব নদীর ওপারে। অনেক সময় বাচ্চারা স্কুলে যেতে চায় না। আমাদের গিয়ে নদী পার করে দিয়ে আসতে হয়। আবার স্কুল শেষে নিয়ে আসতে হয়।’

Nil-5

ক্ষোভ প্রকাশ করে আনিছুর রহমান বলেন, ‘যাদুর হাটের এ ব্রিজটি যদি কেউ নির্মাণ করে দেয় এবং আমাদের এ অসহায়ত্ব অবস্থা থেকে মুক্তি দেয় তাহলে আজীবন তার জন্য প্রাণভরে দোয়া করবো।

এ ব্যাপারে ১৩ নম্বর চাপড়া সরমজানি ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য (মেম্বার) খালেকুজ্জামান বলেন, ‘এখানে আগে থেকে বাঁশের সাঁকো ছিল না। নৌকায় মানুষ পারাপার হতো। কয়েক বছর হলো বাঁশের সাঁকো তৈরি করে মানুষ চলাচল করছে। সেখানেও আবার দুটো পার্ট হয়ে গেছে। আপাতত তিনজন ব্যক্তি সাঁকোটি তৈরি করেছেন। আমার মনে হয় ঘাটটিতে যদি সাঁকো রাখতে হয় তাহলে ডাক দিয়ে রাখা ভালো।’

Nil-5

১৩ নম্বর চাপড়া সরমজানি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান খলিলুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, আমাদের স্থানীয় সংসদ সদস্য আসাদুজ্জামান নূর যখন সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রী ছিলেন তখন থেকে এখানে একটি ব্রিজের বিষয়ে আমরা বলে আসছি। তিনিও আশ্বাস দিয়েছিলেন। কিন্তু কেন হচ্ছে না আমার জানা নেই।

এসআর/এমএস