বালু উত্তোলনে পদ্মায় ভাঙন, বিলীনের পথে শতাধিক ঘরবাড়ি
পাবনার সদর উপজেলার চরতারাপুর ইউনিয়নের আড়িয়াল গোয়ালবাড়ি গ্রামটি পদ্মার ভাঙনে বিলীন হওয়ার পথে। এলাকার শত শত বিঘা ফসলি জমিও নদীগর্ভে চলে যাচ্ছে। পদ্মা নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের ফলে এ দুর্ভোগের সৃষ্টি হয়েছে বলে বলে জানিয়েছেন পাবনা সদর (পাবনা-৫) আসনের সংসদ সদস্য গোলাম ফারুক প্রিন্স। এজন্য তিনি গ্রামবাসীকে অবৈধ বালু উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছেন।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রায় পাঁচ-ছয় বছর ধরে পাবনা সদরের ভাঁড়ারা থেকে সুজানগর উপজেলার নাজিরগঞ্জ পর্যন্ত পদ্মার বিভিন্ন পয়েন্টে ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন করে বিক্রি করছেন বালুখেকোরা। এতে সদরের বাহিরচর, কোলচরী, চরভবানীপুর, বাগচীপাড়া, ভাদুরডাঙ্গী, সুখচর; সুজানগর উপজেলার চর খলিলপুর, নাজিরগঞ্জ, হাজারবিঘা, বিশ্বনাথপুর, সাগরকান্দি, চরসুজানগরসহ পদ্মাপাড়ের অন্তত ২০ গ্রাম বিভিন্ন সময় ভাঙনের মুখে পড়েছে। ফসলি জমি ও বাড়িঘর নদীগর্ভে চলে গেছে। তারপরও বালু উত্তোলন বন্ধ হয়নি।
আড়িয়াল গোয়ালবাড়ি গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, অনেকের ঘরবাড়ি এরই মধ্যে ভেঙে গেছে। কারও বাড়ির রান্নাঘরের চুলা ভাঙনের প্রান্তসীমায়।
হেলেনা বেগম নামের একজন গৃহিণী জানান, তার তিনটি সন্তান। স্বামী-সন্তান নিয়ে এখন তাদের থাকার জায়গা নেই। তিনি বলেন, আগে বাড়ি ভেঙে যাওয়ায় একজনের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছিলেন। সে আশ্রয়ও এবার ভেঙে গেলো। এখন কোথায় যাবো আমরা?
গ্রামবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তাদের ঘরবাড়ি থেকে নদী এক কিলোমিটার দূরে থাকলেও ভাঙতে ভাঙতে এবার বাড়ির সীমানায় এসে ঠেকেছে। অনেকে এরই মধ্যে সব হারিয়ে খোলা আকাশের নিচে অবস্থান নিয়েছেন। দ্রুত নদীভাঙন প্রতিরোধ না করা গেলে গ্রামের রাস্তাঘাটসহ প্রায় ১০০ বাড়ি পদ্মাগর্ভে বিলীন হয়ে যাবে।
এদিকে ভাঙন-কবলিত এলাকা পরিদর্শন করেছেন পাবনা-৫ সদর আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম ফারুক প্রিন্স। তিনি ভাঙনের জন্য অবৈধভাবে বালু উত্তোলনকে দায়ী করেছেন।
তিনি বলেন, বালুখেকোদের কারণে সরকারের উন্নয়ন কাজ ব্যাহত হচ্ছে। বাড়িঘর-ফসলি জমি নদীগর্ভে চলে যাচ্ছেন। তিনি গ্রামবাসীর দুরবস্থা দেখে পানি উন্নয়ন বোর্ডকে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার তাগিদ দেন। পাশাপাশি গ্রামবাসীদের বালুখেকোদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানান।
পানি উন্নয়ন বোর্ড পাবনার (পরিচালন ও রক্ষণাবেক্ষণ) সহকারী পরিচালক মোশারফ হোসেন বলেন, অপরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলনের কারণে নদীভাঙন দেখা দিয়েছে। পাবনা-৫ আসনের সংসদ সদস্য নদীভাঙন এলাকা পরিদর্শন করে একটি ডিও লেটার দিয়েছেন। ভাঙন রোধে পাউবো দ্রুত ব্যবস্থা নেবে বলে জানান এ কর্মকর্তা।
আমিন ইসলাম জুয়েল/এসআর/জেআইএম