ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

স্কুলভবন-শিক্ষক নেই, বিপাকে শিক্ষার্থীরা

জেলা প্রতিনিধি | কুড়িগ্রাম | প্রকাশিত: ১১:২১ এএম, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২১

দেড় বছর বন্ধ থাকার পর সারাদেশের মতো কুড়িগ্রামেও বেশিরভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে রোববার (১২ সেপ্টেম্বর) ক্লাস শুরু হয়েছে। তবে স্কুলভবন না থাকা ও শিক্ষক-শিক্ষিকার অনুপস্থিতির কারণে ক্লাস থেকে বঞ্চিত হয়েছে জেলা সদরের যাত্রাপুর ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের খেওয়ার আলগার চর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।

দুর্বল ম্যানেজিং কমিটির কারণে শিক্ষকদের নিয়মিত স্কুলে না আসা, ভবন নির্মাণে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের ধীরগতি ও সংশ্লিষ্ট দপ্তরের তদারকির অভাবে হুমকির মুখে পড়েছে প্রতিষ্ঠানটির কোমলমতি শিশুদের শিক্ষাব্যবস্থা। যে কারণে রোববার জেলার বেশিরভাগ স্কুলের শিক্ষার্থীরা স্কুল ড্রেস পরে নিজ নিজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গেলেও স্থানীয় অষ্ট আশির চর নুরানি ও হাফিজিয়া মাদরাসায় ক্লাস করে খেওয়ার আলগার চর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। তারা স্কুল ছেড়ে মাদরাসায় ভর্তি হয়েছে।

সরেজমিন যাত্রাপুর ইউনিয়নের পূর্ব দেবারী খোলা গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, একটি উঁচু-নিচু জমিতে খেওয়ার আলগার চর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জন্য নির্মাণ করা একটি ভিত্তির ওপর কিছু লোহার অ্যাঙ্গেল বার বসানো। এগুলো বাদে স্কুলের শ্রেণিকক্ষ, বেঞ্চ, সাইনবোর্ড, সীমানা প্রাচীর, শিক্ষক মিলনায়তন, শৌচাগার, খেলার মাঠ কিছুই নেই।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ১৯৭৮ সালে স্কুলটি স্থাপিত হয়। পরে স্থানীয় একদল শিক্ষকের প্রচেষ্টায় পাঠদান শুরু হয়।পরে ২০১৩ সালের ১ জানুয়ারি জাতীয়করণ হয়। সর্বশেষ ২০২১ সালের শুরুতে স্কুলটি নদীভাঙনের শিকার হলে স্থানান্তরিত করে আনা হয় বর্তমান স্থানে। কিন্তু সময়মতো স্কুলটির ভবন নির্মাণ না করা, দুর্বল ম্যানেজিং কমিটি, স্কুলে শিক্ষকদের অনুপস্থিতির কারণে শিক্ষাব্যবস্থা ভেঙে পড়ে। সহকারী শিক্ষিকা জাহানারা বেগম স্কুলে এলেও আসেন না প্রধান শিক্ষিকা ইসরাত জাহানসহ অন্য দুই সহকারী শিক্ষক-শিক্ষিকা।

শিক্ষার্থী মেহেদি হাসান, মুন্নি ও সুমাইয়া বলে, আজ (রোববার) ক্লাস হবে শুনে আমরা সবাই নৌকায় করে স্কুলে আসি। কিন্তু আমাদেরতো স্কুলভবন নেই। স্যার ও ম্যাডামরাও ঠিকমতো আসেন না। তাই নিরুপায় হয়ে অষ্ট আশির চর নুরানি ও হাফিজিয়া মাদরাসায় এসে ক্লাস করি।

অভিভাবকদের ভাষ্য, ‘দুই বছর হলো স্কুলভবন নেই। মাস্টাররাও একজন এলে অন্যরা আসেন না। এজন্য আমরা সন্তানদের স্কুলে ভর্তি থাকার পাশাপাশি মাদরাসায়ও ভর্তি করেছি। কারণ এই স্কুলের অবস্থা দেখে আর ভরসা করার উপায় নেই।’

স্কুলে আসা সহকারী শিক্ষিকা জাহানারা বেগম বলেন, খুব কষ্ট করে দীর্ঘসময় নদী পথ পাড়ি দিয়ে আমি একজন নারী ঝুঁকি নিয়ে একা স্কুলে আসি। এখানে নানা সমস্যা। স্কুলভবন নেই; অফিস কক্ষ, শৌচাগার, টিউবওয়েলও নেই। এগুলো না থাকার কারণে অনেক ভোগান্তি পোহাতে হয়।

চারজন শিক্ষকের মধ্যে অন্যরা আসেন না, আপনি কেন আসেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটা আমার দ্বায়িত্ব। যত সমস্যা থাকুক আমাকে আসতে হবে। কারণ এসব শিশুদের গড়ে তোলার দায়িত্ব আমাদেরই।’

jagonews24

স্কুলে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি সংখ্যা জানতে চাইলে এই শিক্ষক ৩০ জনের কথা বলেন। তবে তা বাস্তবে দেখা যায়নি। শিক্ষকদের মধ্যে রেজিস্টার খাতায় শুধু জাহানারা বেগমের সই দেখা যায়।

স্কুলটির নির্মাণকাজ বন্ধ থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি আনোয়ার হোসেন বলেন, কাজটি করোনাভাইরাসের কারণে নাকি ঠিকাদার বিল না পাওয়ার কারণে বন্ধ রয়েছে তা আমার জানা নেই। তবে মনে হয় ভাইরাসের (করোনা) কারণে বন্ধ রয়েছে।

তিনি অভিযোগ করে বলেন, প্রধান শিক্ষিকা ইসরাত জাহান এক থেকে দুইদিন স্কুলে এসেছিলেন। জাহানারা বেগম ছাড়া অন্য শিক্ষকরা একদমই স্কুলে আসেন না।

রোববার স্কুলটি পরিদর্শনে আসেন সহকারী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা কানিজ আখতার। স্কুলটির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘নো কমেন্টস। আমি আগে প্রতিবেদন দাখিল করবো, তারপর আপনারা অফিসে এলে এ বিষয়ে বলবো।’

স্কুলটির প্রতিষ্ঠাতা প্রধানশিক্ষক সাইফুল ইসলাম বলেন, আমি ১৯৮০ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত স্কুলটির দায়িত্বে ছিলাম। সে সময়ে শিক্ষার্থী সংখ্যা ছিল ৩৭৬ জন। সে সময়ে স্কুলটি থেকে একাধারে সাতবার বৃত্তি পেয়েছে। আমি আমার দায়িত্বে অবিচল ছিলাম।

jagonews24

যাত্রাপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আইয়ুব আলী সরকারের কাছে ইউনিয়নের প্রাথমিক স্কুলগুলোর অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার ইউনিয়নে ১১টি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। তবে কোথাও কোনো সমস্যার কথা শুনিনি।

এ বিষয়ে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শহিদুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বিষয়টি জেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে জানাতে বলেন। তারপর তিনি শিক্ষা কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলবেন বলে জানান।

জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা শামছুল আলম জাগো নিউজকে বলেন, প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর সমস্যা দেখার দায়িত্ব আমার না। এ দায়িত্ব জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার।

নির্মাণাধীন স্কুলটির বরাদ্দ ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে জানতে সদর উপজেলা প্রকৌশলী সামিন শারার ফুয়াদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি এ প্রতিবেদককে তার অফিসে যেতে বলেন। পরে অফিসে গেলে তিনি অ্যাকাউন্ট্যান্ট নেই বলে আগামীকাল (আজ সোমবার) তথ্য দিতে চান।

মাসুদ রানা/এসআর/জেআইএম