ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

কুড়িগ্রামে খাবার সংকটে দিশেহারা বানভাসিরা

জেলা প্রতিনিধি | কুড়িগ্রাম | প্রকাশিত: ০৯:৩২ পিএম, ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২১

কুড়িগ্রামের সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। ধরলার পানি সেতু পয়েন্টে বিপৎসীমার ৬৩ সেন্টিমিটার ও ব্রহ্মপুত্রের পানি চিলমারী পয়েন্টে ২৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে দুই শতাধিক চরাঞ্চলের লক্ষাধিকেরও বেশি মানুষ পানিবন্দি জীবন-যাপন করছে।

পানিবন্দি এসব এলাকায় দেখা দিয়েছে খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি, শিশুখাদ্য ও গোখাদ্যের সংকট। দীর্ঘ সময় পানিতে অবস্থান করায় হাত-পায়ে ঘাসহ অনেকেই আক্রান্ত হচ্ছেন পানিবাহিত রোগে। তলিয়ে গেছে চরাঞ্চল ও নিম্নাঞ্চলের গ্রামীণ কাঁচা, পাকা সড়ক, রোপা আমনসহ সবজিক্ষেত।

jagonews24

ঘরে-বাইরে সব জায়গায় পানি থাকায় বিপাকে পড়া খামারিরা গবাদিপশু উঁচু স্থানে রেখেছেন। গোখাদ্যের সংকট দেখা দেওয়ায় অনেক খামারিই অধিক মূল্যে খড় কিনতে বাধ্য হচ্ছেন। বানভাসিদের টিউবওয়েল তলিয়ে যাওয়ায় তারা বিশুদ্ধ পানির সংকটে ভুগছেন। তলিয়ে গেছে রান্নার চুলাসহ শৌচাগারও। এতে বিশেষভাবে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন নারীরা।

এসব বন্যার্ত মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়ায় ভুগছেন খাদ্যাভাবেও। অধিকাংশই শুকনো খাবারের সংকটে ভুগছেন। ঘরে ও বাইরে পানি থাকায় সাপ ও পোকা-মাকড়ের আতংক নিয়ে রাত কাটাচ্ছেন তারা।

এদিকে জেলাজুড়ে ত্রাণ কার্যক্রম অব্যাহত থাকলেও তা পরিমাণে অপ্রতুল বলে অভিযোগ বানভাসিদের। ফলে খেয়ে না খেয়ে দিন অতিবাহিত করছেন তারা।

jagonews24

পাঁচগাছি ইউনিয়নের কদমতলা এলাকার ছকিনা (৫০) বলেন, গত বছরের বন্যায় ১ মাস ২২ দিন বাঁধে ছিলাম। এবারও বাড়ি বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। পরিবার নিয়ে আবারও বাঁধে আশ্রয় নিতে হচ্ছে। সব ফসলি জমি পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় দিনমজুর স্বামী কর্মহীন হয়ে পড়ায় অনাহারে অর্ধাহারে দিন কাটাতে হচ্ছে। রান্নাঘরের চুলা পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় ঘরের মাচায় এক কেজি চাল থাকলেও সন্তানদের রান্না করে খাওয়াতে পারছি না।

তিনি আরও বলেন, ভাত না জুটলেও পানির পিপাসা নিবারণ করতে পারছি না। আমার মতো এলাকার অনেকেরই টিউবওয়েল বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। উপায় না পেয়ে বেঁচে থাকার তাগিদে এলাকার বিভিন্ন স্থানে ছুটছি নিরাপদ পানির খোঁজে। এর মধ্যে একমাত্র শৌচাগারটিও পানিতে তলিয়ে থাকায় প্রয়োজনীয় কাজ সারতে ভোগান্তির শিকার হচ্ছি।

jagonews24

একই ইউনিয়নের উত্তর কদমতলা এলাকার কৃষক ছয়ফুল বলেন, ধারদেনা করে ২৮ শতক জমিতে ১০ হাজার টাকা ব্যয়ে পটল চাষ করেছি। কিন্তু অসময়ের বন্যায় পুরো ক্ষেত পানিতে তলিয়ে গেলো। এখন কীভাবে এ ক্ষতি পুষিয়ে উঠবো, কীভাবে ঋণের টাকা পরিশোধ করব ভেবে পাচ্ছি না। এর মধ্যে বাড়ির চারদিকে বন্যার পানি আসায় গবাদিপশুসহ পরিবারের সদস্যদের নিয়ে কোথায় গিয়ে আশ্রয় নেব তা নিয়েও দুশ্চিন্তায় আছি।

কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রেজাউল করিম জানান, বন্যার পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর জন্য এরই মধ্যে ইউনিয়ন পর্যায়ে ২৮০ মেট্রিক টন চাল ও সাড়ে ১২ লাখ টাকা বিতরণ কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। এ কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে। এছাড়া প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ১ হাজার ৫০০ প্যাকেজ সহায়তা বিতরণ করা হবে।

মো. মাসুদ রানা/এসজে/এমকেএইচ