তিস্তার দুর্গম চরে আলোর হাতছানি
পাল্টে যাচ্ছে তিস্তা চরের মানুষের জীবনযাত্রা। লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার চরাঞ্চলের এ মানুষগুলোর নিত্যসঙ্গী ছিল অভাব-অনটন। দুর্গম চরে রাস্তাঘাট, বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়া হয়েছে। পতিত জমিতে আবাদের মাধ্যমে পাল্টে যাচ্ছে ভাগ্যের চাকা।
সরেজমিনে দেখা যায়, তিস্তার ধুধু বালু চরে তৈরি হয়েছে রাস্তাঘাট ব্রিজ-কালভার্ট। বদলে গেছে চরের দৃশ্যপট। চরে জ্বলছে বৈদ্যুতিক বাতি।
স্থানীয়রা জানান, উপজেলার ভোটমারী তিস্তা নদীর শৈলমারীর চরে প্রায় ১৫ হাজার মানুষের বসবাস। প্রতি বছর তিস্তা নদী গতিপথ পরিবর্তন করে ভাঙছে শত শত একর আবাদি জমি। নিঃস্ব হয়েছে হাজারও কৃষক। বর্ষাকালে নৌকায় যাতায়াত কিছুটা সহজ হলেও শীত বা অন্য সময়ে দীর্ঘ দু-তিন কিলোমিটার বালুপথ হেঁটে আসতে হতো উপজেলা শহরে।
চরে বিদ্যালয় ও মাদরাসা থাকলেও নেই লেখাপড়ার উন্নত সুযোগ-সুবিধা। কর্মসংস্থান বলতে চরের জমিতে হালচাষ, নদীতে মাছ ধরা ও চরে গরু-মহিষ-ছাগল পালন করা। নেই চিকিৎসাসেবার কোনো ব্যবস্থা।
চরের বাসিন্দা দবিয়ার রহমান বলেন, দীর্ঘদিন বালুচরে আছি কেউ খোঁজ নেয়নি। আমাদের কষ্ট ছিল ১২ মাস। সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্পটি এসে আমাদের ভাগ্য খুলছে। চরের রাস্তা নির্মাণ হওয়ায় খুব সহজে এখন উপজেলায় যেতে পারি।
শৈলমারী চরের বাসিন্দা দেলদার মুন্সী, ওয়াহেদুল ইসলাম ও বৃদ্ধ আব্দুল জব্বার বলেন, এখানে সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্পটি তাদের জন্য আশীর্বাদ হিসেবে এসেছে। এ প্রকল্পের কারণে স্বপ্নের পাকা রাস্তা, ব্রিজ ও কালভার্ট নির্মিত হয়েছে। তাদের বাড়িতে কেউ অসুস্থ হলে দ্রুত উপজেলা বা জেলা হাসপাতালে নিয়ে যেতে পারছি।
সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্পের ডিরেক্টর অপারেশন আব্দুল হালিম বলেন, সেপ্টেম্বর থেকে এ প্রকল্পে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হবে। তিস্তার পানিপ্রবাহে যাতে কোনো বাধা সৃষ্টি না হয় সে জন্য দুটি বেইলি ব্রিজ ও ১৮ কালভার্ট নির্মাণ করেছেন ইন্ট্রাকো সোলার পাওয়ার লিমিটেড।
এ বিষয়ে লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক আবু জাফর বলেন, বিদ্যুৎ সংকট কাটিয়ে ওঠা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছানোর যে কমিটমেন্ট তা বাস্তবায়নে বড় ভূমিকা রাখবে সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রটি। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে সম্ভাব্য সব ধরনের সহযোগিতা করা হচ্ছে।
রবিউল হাসান/আরএইচ/এমকেএইচ